ইয়াসিন বুনুর হাতেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় হয়ে গেল ২০১০-এর ট্রফি জয়ী স্পেনের। ছবি: টুইটার
দীর্ঘ দিন ধরেই ক্লাব ফুটবল খেলছেন স্পেনে। স্পেন দলে এখন যে সব ফুটবলার খেলেন, তাঁদের বেশির ভাগই তাঁর সুপরিচিত। সেই ইয়াসিন বুনুর হাতেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় হয়ে গেল ২০১০-এর ট্রফি জয়ী স্পেনের। কাতার বিশ্বকাপ সাক্ষী থাকল আরও একটি অঘটনের। মরক্কোর নকআউটে ওঠাকে অনেকেই অঘটন মনে করেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবারের পারফরম্যান্স সেই ধারণা বদলে দিতে বাধ্য। মরক্কোর দুর্দান্ত ফুটবলের শেষটা হল বুনুর হাতেই, যাঁকে সতীর্থ থেকে সমর্থকরা আদর করে ‘বোনো’ বলে ডাকেন। টাইব্রেকারে স্পেনের দুই ফুটবলারের শট বাঁচিয়ে দিলেন তিনি।
পেনাল্টি বাঁচানোয় এই প্রথম নয়, দীর্ঘ দিন ধরেই সুখ্যাতি রয়েছে মরক্কোর এই গোলকিপারের। ফুটবলজীবনে এখনও পর্যন্ত ৫০টি পেনাল্টির সামনে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বাঁচিয়েছেন ১৩টি। অর্থাৎ ২৬ শতাংশ ক্ষেত্রে তিনি পেনাল্টি বাঁচিয়েছেন। মঙ্গলবার স্পেনের নামীদামি তারকারা পেনাল্টি নিতে এলেও তিনি ছিলেন অকুতোভয়, আত্মবিশ্বাসী। দিনের শেষে তাঁর হাতে আটকে গেল স্পেন।
মরক্কোর হয়ে খেললেও, বোনোর জন্ম কানাডার মন্ট্রিলে। খুব ছোটবেলাতেই তাঁর পরিবার চলে আসেন মরক্কোয়। ওয়াইদাদ কাসাব্লাঙ্কার হয়ে যুব ফুটবলে খেলা শুরু করেন বোনো। সিনিয়র দলে অভিষেক হয় ২০১১ সালে। তার এক বছর আগেই প্রথম ডিভিশনে খেলার সুযোগ পেয়েছিল তাঁর ক্লাব। এক বছর কাসাব্লাঙ্কায় কাটিয়েই বোনো পাড়ি দেন ভূমধ্যসাগরের অপর প্রান্ত স্পেনে। যোগ দেন আতলেতিকো মাদ্রিদে। প্রথমে তিনি রিজার্ভ দলে ছিলেন। এর পর মূল দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসাবে জায়গা পান। চার বছরের চুক্তি করেন আতলেতিকোর সঙ্গে।
২০১৪-য় আতলেতিকো ছাড়েন দুই গোলকিপার থিবো কুর্তোয়া এবং ড্যানিয়েল আরানজুবিয়া। আতলেতিকোর প্রথম গোলকিপার হিসাবে সে বছরের ২৪ জুলাই অভিষেক হয় বোনোর। প্রাক্-মরসুম প্রস্তুতি ম্যাচে ১-০ জেতে আতলেতিকো। সেপ্টেম্বরেই বোনোকে লোনে পাঠিয়ে দেওয়া হয় লা লিগার আর এক ক্লাব রিয়াল জারাগোজ়াতে। সেখানেও প্রথম গোলকিপার হিসাবে শুরুতে সুযোগ পাননি। ২০১৫-র জানুয়ারিতে অবশেষে অভিষেক হয়। সেই মরসুমে ১৬টি ম্যাচে খেলেন তিনি।
বুস্কেৎসের শট বাঁচাচ্ছেন বোনো। ছবি: রয়টার্স
২০১৬-য় বোনো যোগ দেন জিরোনায়। চার বছরে দলের হয়ে ৮৩টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। জিরোনাতে খেলার সময় ভারতে আসেন বোনো। ২০১৯-এ কেরলের কোচিতে আয়োজিত হয়েছিল লা লিগা বিশ্ব সিরিজ়। সেখানে জিরোনার হয়ে মেলবোর্ন সিটির বিরুদ্ধে খেলেছিলেন বোনো। তবে কেরলের বিরুদ্ধে নামেননি তিনি। সে বছরই লা লিগার দ্বিতীয় ডিভিশনে নেমে যায় জিরোনা।
২০১৯-এ লোনে সেভিয়ায় যোগ দেন বোনো। ঘরোয়া কাপে ক্লাবের হয়ে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই খেলতে থাকেন তিনি। সে বার সেভিয়া ইউরোপা লিগ জেতে। বোনোর পারফরম্যান্স প্রশংসিত হয়। কোয়ার্টার ফাইনালে উলভারহ্যাম্পটনের বিরুদ্ধে রাউল জিমেনেজের একটি পেনাল্টি বাঁচিয়ে দেন। পরের ম্যাচে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ছ’টি সেভ করে দলকে জিততে সাহায্য করেন। তার পরে ইন্টার মিলানের বিরুদ্ধে রোমেলু লুকাকুর একটি শট বাঁচিয়ে দেন। বছর দুয়েক আগে রিয়াল ভায়াদোলিদের একটি ম্যাচে গোল করেন বোনো। দল ১-১ ড্র করে।
কানাডা বা মরক্কো, যে কোনও দেশের হয়ে খেলার অধিকার ছিল বোনোর। তিনি বেছে নেন মরক্কোকেই। ২০১২ অলিম্পিক্সে মরক্কোর অনূর্ধ্ব-২৩ দলে ছিলেন। গত বছর রাশিয়া বিশ্বকাপে মরক্কোর দলে ছিলেন বোনো। তবে খেলার সুযোগ পাননি। ২০২১-এর আফ্রিকান কাপ অফ নেশন্সে বিতর্কে জড়ান বোনো। গোটা প্রতিযোগিতায় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন আরবি ভাষায়।
স্পেনের ফুটবলাররা হয়তো সত্যিই হাজারটি পেনাল্টি মারার অনুশীলন করে নেমেছিলেন। তবে বোনোর কাছে শেষ হয়ে গেল তাঁদের সব জারিজুরি।