ম্যাচ জেতার পর মরক্কোর ফুটবলারদের উল্লাস। ছবি: রয়টার্স
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রুদ্ধশ্বাস ফুটবল। এক বার স্পেন আক্রমণ করছে, তো পর ক্ষণেই মরক্কো। ১২০ মিনিট ধরে এ ভাবেই দুলল ম্যাচের ভাগ্য। কোনও পক্ষই বিপক্ষের জালে বল গলাতে পারল না। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে স্পেনকে ৩-০ হারিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেল মরক্কো। বিশ্বকাপে দেখা গেল আবার অঘটন। এই স্পেনই বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল কোস্টা রিকাকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে। জাপানের কাছে হার ছিল তাদের কাছে ঘুম থেকে জেগে ওঠার বার্তা। সেই বার্তায় সাড়া দিতে ব্যর্থ লুই এনরিকের ছেলেরা।
মরক্কো ম্যাচের আগে স্পেনের কোচ এনরিকে বলেছিলেন, টাইব্রেকারের কথা ভেবে দলের ফুটবলারদের হাজার বার পেনাল্টি মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তবে দেশের হয়ে অনুশীলনের সময় নয়। ক্লাবের হয়ে অনুশীলনে পেনাল্টি মারতে বলেছিলেন ফুটবলারদের। দেখা গেল, সেই অনুশীলন একেবারেই কাজে লাগল না। স্পেনের তিন জন ফুটবলার পেনাল্টি নিয়েছিলেন। এক জনও গোলে রাখতে পারলেন না। পাবলো সারাবিয়ার শট লাগলো পোস্টে। কার্লোস সোলের এবং সের্জিয়ো বুস্কেৎসের শট বাঁচিয়ে দিলেন মরক্কো গোলকিপার ইয়াসিন বোনো। ম্যাচের শেষে তাঁকে নিয়ে নাচতে থাকেন দলের বাকি ফুটবলাররা।
পেনাল্টি থেকে প্রথম শট মারার সুযোগ পেয়েছিল মরক্কো। গোল করেন সাবিরি। স্পেনের সারাবিয়া মারেন বাঁ দিকের পোস্টে। মরক্কোর দ্বিতীয় গোল হাকিম জিয়েচের। তার পরেই স্পেনের সোলারের শট বাঁচান বোনো। মরক্কোর তৃতীয় পেনাল্টিতে গোল হয়নি। বেনুনের শট বাঁচিয়ে দেন সিমন। স্পেনকে টিকে থাকতে গেলে গোল করতেই হত বাকি তিনটি প্রচেষ্টায়। কিন্তু তৃতীয় শটে বুস্কেৎসের পেনাল্টিও আটকে দেন বুনু। হাকিমি মরক্কোর হয়ে শট নিতে এসে ভুল করেননি। বল জালে জড়িয়ে দেন।
প্রথমার্ধের শুরু থেকেই বেশি আক্রমণে রাস্তায় হাঁটেনি স্পেন। তাদের ফুটবলাররা বল নিজেদের পায়ে বেশি ক্ষণ রাখার দিকেই নজর দেন। মরক্কো নির্ভর করেছিল প্রতি আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলার উপর। স্পেনের বেশির ভাগ ফুটবলারই লক্ষ্য রাখছিলেন বিপক্ষের ভুলের দিকে। ফাঁকা জায়গা পেলেই আক্রমণ করবেন, এমনটাই লক্ষ্য ছিল লুই এনরিকের দলের ছেলেদের। কিন্তু মরক্কো বিপক্ষের পরিকল্পনা বুঝে ফেলেছিল। তারা একটুও ফাঁকা জায়গা দেয়নি। বক্সের বাইরে স্পেনের ফুটবলাররা পৌঁছে গেলেই ছেঁকে ফেলছিল মরক্কো। আক্রমণের সময় উইং দিয়ে দৌড়ে স্পেনকে নাজেহাল করে দেন সোফিয়ান বৌফাল। দুর্দান্ত ড্রিবলিং করে বিপক্ষের ঘুম উড়িয়ে দেন তিনি।
স্পেনের পায়ে বল থাকলেও আক্রমণে মরক্কোকে অনেক বেশি সপ্রতিভ লেগেছে। ম্যাচের প্রথম তাদেরই। আচরফ হাকিমির ফ্রি-কিক বারের উপর দিয়ে উড়ে যায়। নৌসের মাজরাউইয়ের শট বাঁচিয়ে দেন স্পেনের গোলকিপার উনাই সিমন। তার পরেই সুযোগ আসে নায়েফ আগুয়ের্দের কাছে। বৌফালের কাছ থেকে ভাল বল পেলেও তাঁর শট পোস্টের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। প্রথমার্ধে স্পেনের গোলের সুযোগ এসেছিল মার্কো আসেনসিয়োর কাছে। মরক্কোর ডিফেন্সকে অতিক্রম করে বক্সে ঢুকে পড়লেও শট যায় বাইরে।
দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই আক্রমণের ঝাঁজ বাড়িয়ে দেয়। কেন গ্রুপের শীর্ষ স্থানাধিকারী দল হয়ে নকআউটে উঠেছে মরক্কো, সেটা তারা বুঝিয়ে দেয় প্রতি মুহূর্তেই। ৫৪ মিনিটের মাথায় ফ্রিকিক পায় স্পেন। আসেনসিয়োর ফ্রিকিক থেকে বল পান দানি ওলমো। তাঁর কোনাকুনি শট বাঁচিয়ে দেন মরক্কোর গোলকিপার বোনো। আক্রমণ বাড়ানোর লক্ষ্যে আলভারো মোরাতাকে ৬৭ মিনিটে নামিয়ে দেন এনরিকে। তবে মোরাতা বিপক্ষের গোলের কাছেই পৌঁছতে পারছিলেন না। প্রথম সুযোগ পান ৮২ মিনিটের মাথায়। নিকো উইলিয়ামসের থেকে বল পেয়ে নিজে না মেরে বল পাঠিয়েছিলেন বক্সে। সেটি পায়ে ঠেকানোর জন্যে কেউ ছিলেন না।
নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ গোলশূন্য থাকায় গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। আক্রমণে আনসু ফাতিকে নামিয়ে দেন এনরিকে। তবে অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে গোলের সেরা সুযোগ এসেছিল মরক্কোর কাছেই। ওউনাহি বল বাড়িয়েছিলেন চেদিরাকে। গোলকিপারকে একা পেয়েও সোজাসুজি তাঁর দিকেই শট মারেন ওউনাহি। দ্বিতীয়ার্ধেও দুই দলের গোলের সুযোগ খুঁজতে থাকে। এ বার সবচেয়ে ভাল সুযোগ এসেছিল স্পেনের কাছে। বাঁ দিক থেকে বল ভাসিয়েছিলেন স্পেনের ফুটবলার। ডান দিক দিয়ে ছুটতে ছুটতে আসছিলেন সারাবিয়া। চলতি বলে শটও নিয়েছিলেন। কিন্তু বল পোস্টে লেগে বেরিয়ে যায়। তবে সারাবিয়ার কাছে গোলে রাখার সুযোগ ছিল।