নানা মেজাজে দেখা গেল সিআর সেভেনকে। ছবি সংগৃহীত।
শূন্যে লাফিয়ে উঠে দু’হাত ছড়িয়ে মাটিতে নামা। গোল করে সেই চিরপরিচিত উৎসব। গত কয়েক সপ্তাহ বিতর্কে জর্জরিত হওয়ার পরে আবার পাওয়া গেল পুরনো ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে। যিনি বৃহস্পতিবার পর্তুগালকে জয় এনে দিলেন ঘানার বিপক্ষে।
এ দিন ঘানা বনাম পর্তুগাল ম্যাচের শুরু থেকেই নানা মেজাজে দেখা গেল সিআর সেভেনকে। ম্যাচ শুরুর আগে পর্তুগালের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় চোখের জল আটকাতে পারেননি রোনাল্ডো। যখন পেনাল্টি নিতে যাচ্ছিলেন, তখন চোখ বন্ধ করে এক বার প্রার্থনাও করে নিলেন। তার পরে ঘানার নেটে বল জড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিচিত উৎসব। ওই গোল করার পাশাপাশি একটি বিশ্বরেকর্ডের মালিকও এ দিন হয়ে গেলেন রোনাল্ডো। প্রথম ফুটবলার হিসেবে পাঁচটা বিশ্বকাপেই গোল করলেন তিনি। শুরু সেই ২০০৬ সাল থেকে। এ দিন রোনাল্ডোর গোলে এগিয়ে যায় পর্তুগাল। এর পরে গোল শোধ করে ঘানা। আবার পরপর দু’টো গোল করে পর্তুগাল এগিয়ে যায় ৩-১। ম্যাচ শেষ হয় পর্তুগালের পক্ষে ৩-২। রেফারি শেষ বাঁশি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বস্তির হাসি দেখা যায় রোনাল্ডোর মুখে। তিনিই ম্যাচের সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন।
ম্যাচের পরে গণমাধ্যমে রোনাল্ডো লেখেন, ‘‘বিশ্বকাপের শুরুতেই এই জয় পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কিন্তু এখনও কিছুই পাইনি। সবে প্রথম পদক্ষেপটা করলাম। আমাদের এখন লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের পুরো নজর সেই দিকে। চলো, পর্তুগাল।’’
এর পরে সাংবাদিক বৈঠকে এসে ম্যাচের সেরা ফুটবলারকে গত এক সপ্তাহের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। রোনাল্ডো বলে যান, ‘‘এই এক সপ্তাহের অধ্যায়টা শেষ হয়ে গিয়েছে। আজ আমরা জিতেছি। আর সেই জয়ে আমি কিছুটা সাহায্য করেছি। বাকি আর কিছুর কোনও মূল্য নেই। এই অধ্যায়টা এখন শেষ।’’ এ দিন রোনাল্ডোর নাম আরও একটা রেকর্ডের সঙ্গে জুড়ে যায়। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার। এ দিনেরটা নিয়ে সাতটি ‘ম্যাচের সেরা’র পুরস্কার পেলেন পর্তুগালের মহাতারকা।
ম্যাচের ৭৮ মিনিটে ব্রুনো ফের্নান্দেজের পাস থেকে অভিষেক বিশ্বকাপে প্রথম গোলটি করে যান জোয়াও ফেলিক্স। ম্যাচের পরে তিনি বলেছেন, ‘‘এখনও সেই মুহূর্তটা মনে করলে রোমাঞ্চ অনুভব করছি। আমার এত দিনের ফুটবল জীবনে এটাই সবচেয়ে সেরা মুহূর্ত।’’
তবে বিতর্ক থেকে এখনও মুক্ত হতে পারেননি সি আর সেভেন। তাঁকে দু’ম্যাচের জন্য নির্বাসিত করল ইংলিশ ফুটবল সংস্থা (এফএ)। সঙ্গে ৪৯ লক্ষ ৫৩ হাজার ৫৪৮ টাকা জরিমানাও হল। এই শাস্তি এ’বছরের এপ্রিলে এভার্টনের কাছে ০-১ হারের পরে মাঠ ছাড়ার মুহূর্তে পর্তুগিজ তারকার বিতর্কে জড়ানোর জন্য। বিশেষ ভাবে সক্ষম এক শিশু ভক্ত সে সময় নিজের মোবাইলে রোনাল্ডোর ছবি তুলছিল। যা ভাল লাগেনি পাঁচ বারের বালঁ দ্যর জয়ীর। রোনাল্ডো তখন রাগের মাথায় সেই মোবাইলটি ভেঙে দেন। যে ছবি তুলছিল, সে কিন্তু একইসঙ্গে অটিজ়িম ও শৈশবেই মস্তিষ্কের অসুখে আক্রান্ত এক বাচ্চা। সেই ঘটনার পরে রোনাল্ডোকে সতর্ক করেছিল মেরিসাইড পুলিশও।
শাস্তির ঘোষণার বিবৃতিতে এফএ জানিয়েছে, রোনাল্ডো স্বয়ং নিজের ভুল স্বীকার করেছিলেন। সেই সঙ্গে এক স্বাধীনভাবে পরিচালিত কমিটি বিষয়টির তদন্ত করে। যার ভিত্তিতে রোনাল্ডোর আচরণকে ‘অনুচিত ও হিংস্র’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। যে সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চাও। গণমাধ্যমে পর্তুগিজ তারকার সমর্থকেরা বলতে শুরু করেছেন, রোনাল্ডোর ম্যান ইউকে অপমান করার বিষয়টা বোধহয় হজম করতে পারেনি। তাই এই সময়ে এমন অযৌক্তিক শাস্তি দেওয়া হল।