আর এক সপ্তাহও বাকি নেই। কাতারে শুরু হতে চলেছে ফুটবল বিশ্বকাপ। মোট আটটি স্টেডিয়ামে হবে খেলা। যে দেশে ফুটবলের সে রকম কোনও পরিকাঠামোই ছিল না, তারাই হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে একের পর এক চোখধাঁধানো স্টেডিয়াম বানিয়ে দিয়েছে।
কাতারের দু’টি প্রান্তের দু’টি স্টেডিয়ামের সর্বোচ্চ দূরত্ব ৫৫ কিমি। ফলে কোনও দর্শক একই দিনে একাধিক ম্যাচ দেখতে চাইলে তাঁর কোনও সমস্যা হবে না। মেট্রো, ট্রাম, বাস একাধিক বিকল্প থাকবে হাতের কাছে।
প্রতিটি স্টেডিয়ামে সোলার প্যানেল ফার্ম থাকবে। থাকছে তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা। নভেম্বর-ডিসেম্বরে খেলা হলেও কাতারে গরম থাকবে। ফুটবলার এবং দর্শকদের যাতে অসুবিধা না হয় তার জন্যেই এই ব্যবস্থা। কেমন হয়েছে আটটি স্টেডিয়াম, বিশ্লেষণে আনন্দবাজার অনলাইন।
লুসাইল স্টেডিয়াম: উদ্বোধনী ম্যাচ এবং ফাইনাল-সহ মোট ১০টি খেলা হবে এখানে। ৮০ হাজার দর্শকাসন রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের থেকে অনেক দেরি করে এ বছরই এই স্টেডিয়ামের উদ্বোধন হয়েছে। ঝাঁ চকচকে এই স্টেডিয়ামে রয়েছে অনেক সুবিধা।
সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার, বিশ্বকাপের পরেই স্টেডিয়ামের যাবতীয় আসন বিক্রি করে দেওয়া হবে এবং স্টেডিয়ামটি ভেঙে ফেলা হবে। কারণ লুসাইলে আর নতুন স্টেডিয়াম নাকি দরকারই নেই।
আল জানিয়ুব স্টেডিয়াম: দর্শকাসন ৪০ হাজার। মোট সাতটি ম্যাচ হবে এখানে। এটি আগে আল আকরা স্টেডিয়াম নামে পরিচিত ছিল। এই স্টেডিয়ামের ছাদ ঢাকা যায় এবং ভেতরে তাপমাত্রা ঠান্ডা করার উদ্ভাবনী ব্যবস্থা রয়েছে। সব সময় যাতে ম্যাচ আয়োজন করা যায়, তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আরবের বিশেষ নৌকার অনুকরণে এটি তৈরি করা হয়েছে।
এই স্টেডিয়ামের নকশা ছড়িয়ে পড়ার পরেই বিতর্ক হয়েছে। ব্রিটিশ ভাস্কর দামে জাহা হাদিদের নকশা উন্মোচনের পরেই অনেকে অভিযোগ করেন, এটি দেখতে মহিলাদের যৌনাঙ্গের মতো। প্রবল সমালোচনা হলেও নকশা বদলানো হয়নি। সবার আগে এই স্টেডিয়ামটি তৈরি হয়।
আল বায়াত স্টেডিয়াম: দর্শকাসন ৬০ হাজার। প্রথম ম্যাচ-সহ আটটি ম্যাচ হবে এখানে। একটি সেমিফাইনালও রয়েছে। এটি দেখতে মরুভূমির তাঁবুর মতো, যা আরবদেশে প্রায়ই দেখা যায়। এখানেও ছাদ দিয়ে স্টেডিয়াম ঢাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
দোহার কেন্দ্রস্থলের থেকে সবচেয়ে দূরে এই স্টেডিয়াম। তবে স্টেডিয়ামের মধ্যে পাঁচ তারা হোটেলে থাকা এবং বাকি সমস্ত সুবিধা রয়েছে। দর্শকদের সুবিধার জন্য আরও বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকছে।
আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়াম: দর্শকাসন ৪০ হাজার। সাতটি ম্যাচ হবে এখানে। প্রথমে এটির নাম ছিল আল-রায়ান স্টেডিয়াম। পরে নাম বদল হয়। কাতারের সংস্কৃতির আদলে তৈরি করা হয়েছে এই স্টেডিয়াম।
এটি কাতারের মরুভূমির কাছাকাছি। তবে মরুভূমির সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে, এ রকম কিছু স্থাপত্য এই স্টেডিয়ামে দেখা যাবে। তাপমাত্রা এখানে কিছুটা বেশি থাকতে পারে।
এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম: দর্শকাসন ৪০ হাজার। আটটি ম্যাচ হবে এখানে। কাতার ফাউন্ডেশন এলাকার মধ্যেই রয়েছে এই স্টেডিয়াম। বিশ্বকাপের পর কাতারের মহিলা দল পাকাপাকি ভাবে এই স্টেডিয়াম ব্যবহার করবে।
এই স্টেডিয়াম দেখতে হিরের মতো। তাই নাম দেওয়া হয়েছে ‘মরুভূমির হিরে’। সকালে রোদ পড়লে স্টেডিয়ামটি চকচক করবে। রাতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা থাকছে। গত বছর ফিফার ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনাল হয়েছিল এখানে।
আল থুমামা স্টেডিয়াম: দর্শকাসন ৪০ হাজার। আটটি ম্যাচ হবে। এই স্টেডিয়ামটি ‘গাফিয়া’, অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের মহিলাদের একটি বিশেষ টুপির আদলে তৈরি করা হয়েছে। কাতারের প্রথম কোনও ভাস্কর একটি ফুটবল স্টেডিয়াম নকশা করেন।
বিশ্বকাপের পরেই এর দর্শকাসন কমিয়ে অর্ধেক করা হবে। আসনগুলি বিক্রি করা হবে উন্নত দেশগুলিতে। স্টেডিয়ামের মধ্যে একটি মসজিদ এবং হোটেলও তৈরি করা হবে।
স্টেডিয়াম ৯৭৪: দর্শকাসন ৪০ হাজার। সাতটি ম্যাচ হবে। স্টেডিয়ামের অদ্ভুত নামকরণ নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, ৯৭৪টি শিপিং কন্টেনার দিয়ে এই স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে বলে এমন নামকরণ। বিশ্বকাপ হয়ে গেলেই এটি ভেঙে ফেলা হবে।
কাতারের সামুদ্রিক এলাকার পাশেই অবস্থিত এই স্টেডিয়াম এবং আশপাশের এলাকা সৌন্দর্যের বিচারে আলাদা করে নজর কাড়তে বাধ্য। স্টেডিয়াম ভাঙার সময় যাতে দূষণ না হয়, তা আলাদা করে ভাবা হয়েছে।
খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম: দর্শকাসন ৪৫,৪১৬। আটটি ম্যাচ হবে এখানে। এটিই একমাত্র স্টেডিয়াম, যেটি কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়ার আগেই উদ্বোধন করে ফেলা হয়। এটি ১৯৭৬ সালে তৈরি হয়। এটি দেশের পুরুষ ফুটবল দলের স্টেডিয়াম।
এর আগে এশিয়ান গেমস, গালফ কাপ, এএফসি এশিয়ান কাপ এবং বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স হয়েছে এখানে। ২০০৯-এ এই স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচ খেলে ব্রাজিল। ২০১৯-এ এখানেই ক্লাব বিশ্বকাপ জেতে লিভারপুল।