শুক্রবার মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় শুরু ইউরো কাপ। ছবি: রয়টার্স।
দু’বছর আগেই কাতার দেখেছে জমকালো ফুটবল বিশ্বকাপ। শেষ বার ৩২ দেশের লড়াইয়ে অনেক দেশই আলাদা করে নজর কেড়েছে। বিশ্বকাপের পর তর্কসাপেক্ষে ফুটবলের যে প্রতিযোগিতা বাকিদের থেকে এগিয়ে রয়েছে, সেই ইউরো কাপ শুরু হতে চলেছে শুক্রবার। মিউনিখে প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি জার্মানি এবং স্কটল্যান্ড। শুক্রবার থেকেই ফুটবলপ্রেমীদের রাত জাগার পালা শুরু।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগাল, কিলিয়ান এমবাপের ফ্রান্স, হ্যারি কেনের ইংল্যান্ড বা তিন বারের বিজয়ী স্পেন, ইউরো কাপে নজর কাড়ার মতো দেশের অভাব নেই। কিন্তু এই প্রতিযোগিতা বরাবরই চমকে দিতে অভ্যস্ত। ২০০৪ সালে সবাইকে চমকে দিয়ে ট্রফি জিতেছিল গ্রিস। যুগোশ্লাভিয়া নির্বাসিত হওয়ার পর শেষ মুহূর্তে সুযোগ পাওয়া ডেনমার্ক অবাক করেছিল ১৯৯২ সালের ইউরো জিতে। এ বারও যে কোনও দেশ চমকে দিতে পারে।
২০০৬ সালে বিশ্বকাপ আয়োজন করা জার্মানি এ বার ইউরো কাপের আয়োজক। ১৮ বছর আগের সেই অভিজ্ঞতাই ফিরিয়ে আনতে চাইছে তারা। লক্ষ লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যেই জড়ো হয়েছে সে দেশে। প্রতিটি স্টেডিয়ামই পূর্ণ থাকার সম্ভাবনা। তবে এ বার ইউরোপের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আলাদা। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর প্রথম বার ইউরো হচ্ছে।
জার্মানি ইউক্রেন দলকে ভাল ভাবেই স্বাগত জানিয়েছে। যুদ্ধের পর থেকে তারা জার্মানিতেই নিজেদের ‘হোম’ ম্যাচ খেলেছে। কিন্তু থাকছে না রাশিয়া। উয়েফা তাদের নির্বাসিত করেছে।
প্রথম বড় প্রতিযোগিতা খেলতে নামছে জর্জিয়া। সে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা টালমাটাল। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিরোধী নতুন বিতর্কিত আইন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ না দিতে চাওয়া নিয়ে সে দেশের সরকারের বিরুদ্ধে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাস্তায় নেমেছেন মানুষ।
জার্মানি নিজেও অভিবাসী সমস্যায় ভুগছে। বিভিন্ন দেশ থেকে নাগরিকেরা এসে জার্মানিতে আশ্রয় নিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, জার্মানিকে নোংরা করা ছাড়াও জার্মানদের অপমান করছেন। সে দেশেও সরকার বিরোধী একটা হাওয়া রয়েছে। ইজরায়েলের হামলা এবং গাজ়া নিয়ে এমনিতেই গোটা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পরিস্থিতি টালমাটাল। তার মধ্যেই আয়োজিত হচ্ছে ইউরো কাপ।
পিছিয়ে নেই ফুটবল ‘হুলিগান’রাও। ঝামেলা বাধাতে যাঁরা ‘সিদ্ধহস্ত’। বিভিন্ন দেশের কট্টর সমর্থকেরা দলে দলে চলে গিয়েছেন জার্মানির বিভিন্ন শহরে। নিজেদের প্রিয় দলকে সমর্থন করাই নয়, বিপক্ষকে ‘সমঝে’ দেওয়ার কাজও তাঁদের উপরেই। পরিস্থিতি সামলাতে কড়া হয়েছে জার্মানি। প্রতিযোগিতার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে ২০ হাজার পুলিশ। যে কোনও পরিস্থিতি সামাল দিতে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে সেনাবাহিনীকেও।
গত বার রানার্স হওয়া ইংল্যান্ড এ বার ট্রফির দাবিদার হিসাবেই নামবে। তিন বছর আগে ইটালির বিরুদ্ধে অল্পের জন্য পেনাল্টি শুটআউটে মন ভেঙেছিল তাদের। ১৯৬৬ সালের পর ফুটবলে প্রথম বার কোনও বড় ট্রফি জিততে মরিয়া তারা। কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের অধীনে ইংল্যান্ড দলের অনেকটাই উন্নতি হয়েছে তার পর থেকে। জুড বেলিংহ্যাম, ফিল ফডেনরা তারকা হয়ে উঠেছেন। সঙ্গে হ্যারি কেন তো রয়েছেনই। গত বছর থেকে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে খেলছেন হ্যারি কেন। ৪৭টি ম্যাচে ৪৪টি গোলও করেছেন।
বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্স হারলেও ইউরোতে নতুন উদ্যমে নামছে তারা। কিলিয়ান এমবাপে বিশ্বকাপ, নেশন্স লিগ জিতলেও ইউরো কাপ জেতেননি। দলে এ বার অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি, এডুয়ার্ডো কামাভিঙ্গার মতো তরুণ তারকা রয়েছেন।
সৌদি আরবে ক্লাবজীবন শুরু করার পর এই প্রথম বড় কোনও প্রতিযোগিতায় খেলতে নামছেন রোনাল্ডো। ৩৯ বছরেও তাঁর ফর্ম দেখে বোঝার উপায় নেই। পর্তুগালের যোগ্যতা অর্জন পর্বে ১০টি গোল করেছেন। প্রস্তুতি ম্যাচেও গোল পেয়েছেন রোনাল্ডো।
সাম্প্রতিক বড় প্রতিযোগিতাগুলিতে জার্মানি হতাশ করলেও দেশের মাটিতে ইউরোয় তাদের পিছিয়ে রাখা যাবে না। ইউরোর প্রস্তুতি ম্যাচে ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে জিতেছে জার্মানরা। গোটা দেশ আবার আশা দেখতে শুরু করেছে। এ দিকে, ইউরোপ সেরার খেতাব ধরে রাখতে নামবে ইটালিও।
এক মাসের ফুটবল যুদ্ধ শেষে কে জিতবে, তা আগে থেকে বলা কঠিন। তবে এ বারের ইউরো বাকিগুলির থেকে আলাদা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে উয়েফা এবং আয়োজক জার্মানি। গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা সেই আনন্দ উপভোগ করতে মুখিয়ে রয়েছেন।