Manchester Derby

হ্যাটট্রিক হালান্ড-ফোডেনের, হাফ ডজন গোল হজম রোনাল্ডোর দলের! ম্যাঞ্চেস্টার ডার্বির রং আবার নীল

প্রথমার্ধেই চার গোল খেয়ে ম্যাচ থেকে হারিয়ে যায় ইউনাইটেড। দ্বিতীয়ার্ধে খায় আরও দু’টি। পরে তিন গোল শোধ দিলেও ডার্বিতে হারের জঘন্য হারের লজ্জা থেকে বাঁচতে পারল না ইউনাইটেড।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২২ ২০:২১
Share:

হ্যাটট্রিকের দুই নায়ক। হালান্ড এবং ফোডেন। ছবি রয়টার্স

প্রথমার্ধের খেলা তখনও শেষ হয়নি। হঠাৎই ক্যামেরা ধরল ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থকদের। দেখা গেল, দর্শকাসন প্রায় অর্ধেক খালি। আরও অনেকে সারি বেঁধে বেরিয়ে যাচ্ছেন। লাল জার্সি পরা হতাশ, বিধ্বস্ত সমর্থকদের সেই চেহারাই বলে দিল রবিবার ম্যাঞ্চেস্টার ডার্বির ফলাফল।

Advertisement

চিরশত্রুর কাছে প্রথমার্ধেই চার গোল খেয়ে গেলে আর কী বলার থাকে! ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থকদের তাই দোষ দেওয়ার কিছুই ছিল না। শহরের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে খেলা দেখতে এসেছিলেন তাঁরা। আশা ছিল অঘটনের। সেটা তো হলই না, উল্টে ৪৩ মিনিটেই চার গোল হজম! এরিক টেন হ্যাগের ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধেই ম্যাচ শেষ করে দেয় পেপ গুয়ার্দিওলার ম্যাঞ্চেস্টার সিটি।

সব বিভাগে ডাচ কোচকে টেক্কা দিলেন স্প্যানিশ কোচ। প্রথম বার ম্যাঞ্চেস্টার ডার্বির স্বাদ তেঁতো হয়ে গেল টেন হ্যাগের কাছে। প্রথমার্ধে ইউনাইটেড বল কার্যত ছুঁতেই পারেনি। ইউনাইটেডের অর্ধে বল গেলেই মনে হচ্ছিল গোল হবে। এবং হচ্ছিলও। দিয়োগো দালত, টাইরেল ম্যালাসিয়ারা কিছুই করতে পারেননি। ফিল ফোডেন এবং আর্লিং হালান্ডের হ্যাটট্রিকের সৌজন্যে রবিবার ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে ৬-৩ ব্যবধানে উড়িয়ে দিল ম্যাঞ্চেস্টার সিটি।

Advertisement

রবিবারের ম্যাচে ইউনাইটেডের বিপদ এবং সিটির ভরসা ছিলেন একজনই। আর্লিং ব্রাউট হালান্ড। নরওয়ের তারকা এই মরসুমে সিটির হয়ে দু’টি হ্যাটট্রিক-সহ নয় ম্যাচে ১১টি গোল করেছিলেন। তৃতীয় হ্যাটট্রিক হয়ে গেল রবিবারই। কেন তিনি এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকার, সেটা আরও এক বার প্রমাণ করে দিলেন হালান্ড। তাঁকে হাজার চেষ্টা করেও আটকাতে পারেনি ইউনাইটেড। প্রতি বারই বিপক্ষ ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে গোল করেছেন। কেউ মার্ক করতে পারেননি তাঁকে।

তবে যিনি হিসাবের বাইরে ছিলেন, তিনি ফিল ফোডেন। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতে খেলে গিয়েছিলেন ফোডেন। কলকাতায় হওয়া ফাইনালে ম্যাচের সেরাও হয়েছিলেন। জোড়া গোল করেছিলেন সেই ম্যাচে। তার পরে ইংল্যান্ড এবং ম্যাঞ্চেস্টার সিটির সিনিয়র দলেও নিয়মিত সদস্য হয়ে যান তিনি। গুয়ার্দিওলার আমলে নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে প্রকাশ করতে পেরেছেন এই মিডফিল্ডার। প্রথমে তাঁকে উইংয়ে খেলানো হলেও, গুয়ার্দিওলা ফোডেনকে মাঝ মাঠে খেলাতে শুরু করেন। তখন থেকেই ফুল ফোটাচ্ছেন ফোডেন। তাঁর প্রতিভার আরও একটা নিদর্শন দেখা গেল রবিবার।

গোলের শুরু আট মিনিটেই। কেভিন দ্য ব্রুইন বাঁ দিকে পাস দিয়েছিলেন বার্নার্দো সিলভাকে। প্রায় টাচলাইনের কাছ থেকে বক্সে পাস দিলেন সিলভা। অরক্ষিত অবস্থায় থাকা ফিল ফোডেন চলতি বলেই শট নিয়ে গোল করলেন। পরের গোল এল ৩৪ মিনিটে। এমন এক জনের কাছ থেকে, যিনি এই ম্যাচে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিলেন। হতাশ করলেন না হালান্ড। কর্নার থেকে মার্কার ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনকে দূরে সরিয়ে হেডে গোল করলেন। গোললাইন পেরনোর পর ডিফেন্ডার ম্যালাসিয়া বাঁচালেও, রেফারি মাইকেল অলিভার গোলের সিদ্ধান্ত দিতে দেরি করেননি।

হালান্ডের দ্বিতীয় গোল তিন মিনিট পরেই। এ বার মাঝ মাঠ থেকে ডিফেন্সচেরা পাস দিয়েছিলেন সেই দ্য ব্রুইন। ঝাঁপিয়ে পড়ে কোনও মতে বাঁ পা ঠেকিয়ে গোল করেন হালান্ড। ৪৩ মিনিটে সিটির চতুর্থ এবং নিজের দ্বিতীয় গোল ফোডেনের। দ্বিতীয়ার্ধেই নিজের হ্যাটট্রিক সম্পূর্ণ করেন হালান্ড এবং ফোডেন। মাঝে ইউনাইটেডের হয়ে একটি গোল শোধ করেন অ্যান্টনি। তবে নাটকের তখনও বাকি ছিল। ৭৩ মিনিটে হালান্ডের থেকেই পাস পেয়ে নিজের হ্যাটট্রিক সম্পূর্ণ করেন ফোডেন। এর পরেও হাল ছাড়েনি ইউনাইটেড। জোড়া গোল করেন মার্শিয়াল। তবে সেই দু’গোল কোনও কাজেই দেয়নি।

প্রথম ম্যাচে ব্রেন্টফোর্ডের কাছে চার গোল খাওয়ার পর এই ম্যাচের আগে খুব একটা খারাপ খেলেনি ইউনাইটেড। কিন্তু সিটির বিরুদ্ধে তাদের হতশ্রী দশা আরও এক বার প্রকট হল। প্রশ্ন উঠতে পারে টেন হ্যাগের কৌশল নিয়েও। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে বহু মূল্যে কেনা ক্যাসেমিরোকে কেন তিনি প্রথমে নামালেন না? রিয়ালে থাকার সময় ডিফেন্সিভ ব্লকার হিসাবে দুর্দান্ত খেলতেন ক্যাসেমিরো। তিনি শুরু থেকে মাঠে থাকলে ফলাফল একটু হলেও ভাল হতে পারত। দ্বিতীয়ত, রোনাল্ডোকে নিয়ে কেন এত অনীহা টেন হ্যাগের? হয়তো রোনাল্ডো নিজের সেরা ছন্দে নেই। কিন্তু তিনি মাঠে থাকা মানে একটু হলেও বিপক্ষকে চাপে রাখা যায়। তাঁর জায়গায় মার্কাস রাশফোর্ড, ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনরা কিছুই করতে পারেননি।

ডার্বিতে শেষ বার সিটির কাছে ইউনাইটেড ছ’গোল খেয়েছিল ১১ বছর আগে। সেটাও ছিল এক অক্টোবরের সন্ধে। তখন ইউনাইটেডের কোচ ছিলেন স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসন, যাঁকে এ দিন এতিহাদ স্টেডিয়ামে বেজার মুখে বসে থাকতে দেখা গেল। তবে সেই ফল ছিল নেহাতই একটা দুর্ঘটনা। কিন্তু ম্যাঞ্চেস্টার ডার্বির সাম্প্রতিক যা ফলাফল, তাতে রবিবারের এই স্কোরলাইনকে আর যা-ই হোক, দুর্ঘটনা বলা চলে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement