হাঙ্গামা থামাতে ব্যস্ত পুলিশ। ছবি: রয়টার্স
ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ ফুটবল হাঙ্গামা দেখে হতবাক গোটা বিশ্ব। ফুটবলে এর আগে কবে এত বড় দাঙ্গার ঘটনা দেখা গিয়েছে, তা অনেকেই মনে করতে পারছেন না। শনিবার রাতের ঘটনায় ১৭৪ জন মারা গিয়েছেন। আহত ১৮০। তবে মালাঙের কানজুরুহান স্টেডিয়ামে কী এমন ঘটল যে এত মানুষকে প্রাণ হারাতে হল? অতীতে এ রকম ঘটনা কি হয়েছে? জানতে গিয়ে উঠে এসেছে নানা ঘটনা।
পুলিশি ব্যর্থতা
ফিফা নিয়মানুযায়ী সমর্থকদের থামাতে কোনও গ্যাস বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা যায় না। কাঁদানে গ্যাসের শেল কেন ছোড়া হল সে ব্যাপারে এখনও ইস্ট জাভা পুলিশের কোনও বক্তব্য মেলেনি। গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো। সরকারের তরফে মৃতদের সাহায্য করা হবে। আরেমা এফসি-কে নিজেদের ঘরের মাঠে বাকি মরসুমে আর ম্যাচ আয়োজন করতে দেওয়া হবে না।
এর আগে ইন্দোনেশিয়ায় কি দাঙ্গা হয়েছে?
মাঝেমাঝেই হয়ে থাকে। দেশে হোক বা দেশের বাইরে। ২০১৯-এ বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন ম্যাচে জাকার্তায় মালয়েশিয়ার সমর্থকদের হুমকি দেওয়া এবং তাদের উদ্দেশে পাথর ছোড়া হয়েছিল। স্টেডিয়ামে দাঙ্গা শুরু হওয়ার পরেই মালয়েশিয়ার সমর্থকদের বের করে আনে পুলিশ। এ ছাড়াও অতীতে বিভিন্ন ক্লাব ম্যাচে হাঙ্গামা হয়েছে।
এ বার কী হবে?
২০১৫ সালে ফুটবল সংগঠনে সরকারি অনুপ্রবেশের কারণে ইন্দোনেশিয়াকে নির্বাসিত করে ফিফা। এক বছর পর তারা নির্বাসনমুক্ত হয়। তখনই ঠিক হয়, ক্লাবের ম্যাচে বিপক্ষের সমর্থকদের ঢুকতে দেওয়া হবে না। পরের বছর মে মাসে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ আয়োজন করার কথা ইন্দোনেশিয়ার। পাশাপাশি এশিয়ান কাপ আয়োজনের জন্যেও বিড করেছে তারা। শনিবারের এই ঘটনার পর আদৌ সে দেশে আর কোনও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা করা হবে কি না, তাই নিয়ে ভাবনা শুরু হয়েছে।
হাঙ্গামার আসল কারণ
ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল অত্যন্ত জনপ্রিয়। খেলাকে ঘিরে আবেগের বহিঃপ্রকাশ প্রতি ম্যাচেই দেখা যায়। তবে মালাঙে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে পুলিশের ভয়ে এবং পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করায়। আরেমা এফসি-র ঘরের মাঠে খেলা ছিল। বিপক্ষ ক্লাবের সমর্থকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আরেমার বিরুদ্ধে পার্সেবায়া সুরাবায়া ৩-২ ব্যবধানে জিততেই বাধে গন্ডগোল। হাজার হাজার সমর্থক মাঠে ঢুকে পড়েন এবং ফুটবল ও ম্যাচ আধিকারিকদের দিকে বোতল এবং বিভিন্ন জিনিস ছুড়তে থাকেন।
আচমকাই পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে শুরু করে। স্টেডিয়ামের আসন সংখ্যা ছিল ৩৮ হাজার। সেখানে টিকিট বিক্রি করা হয় ৪২ হাজার। ফলে এমনিতেই চার হাজার লোক বেশি ছিল। পদপিষ্ট হয়ে এবং শ্বাসকষ্টের কারণে ১৭৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তার মধ্যে পাঁচ বছরের একটি ছেলে এবং দু’জন পুলিশ অফিসারও রয়েছেন। আরও অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পরে অবশ্য ইস্ট জাভা পুলিশ দাবি করেছে, মৃতের সংখ্যা ১২৫। ঝামেলা ছড়ায় মাঠের বাইরেও। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।