বলের লাইন বুঝতে না পেরে বোল্ড হলেন শুভমন গিল। ছবি: পিটিআই।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে অবসর ঘোষণা করতে গিয়ে বিরাট কোহলি জানিয়েছিলেন, পরবর্তী প্রজন্ম দেশের পতাকা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি। অনেক ভাল ভাল তরুণ ক্রিকেটার উঠে এসেছেন। বিরাটের সেই ঘোষণার সাত দিনের মাথায় জ়িম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ব্যাটিং বিপর্যয়ে হারতে হল ভারতকে। ১১৬ রানও তাড়া করতে পারলেন না শুভমন গিল, রুতুরাজ গায়কোয়াড়েরা। এই হার অনেক প্রশ্ন তুলে দিল। ভারতের পরের প্রজন্ম কি এখনও তৈরি হয়নি? না কি দাদাদের জয়ে ভাইয়েরা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলেন? তাতেই ডুবল দল।
বোলারেরা খুব একটা খারাপ খেলেননি। তার পরেও ৯০ রানে ৯ উইকেট থেকে জ়িম্বাবোয়েকে ১১৫ রান করতে দেওয়া উচিত হয়নি। খেলার রাশ হাতে থাকলে কী ভাবে প্রতিপক্ষকে শেষ করে দেওয়া যায়, তা এখনও শিখতে হবে আবেশ খান, মুকেশ কুমারদের। কিন্তু বোলিংয়ের থেকেও বেশি অবাক করল ভারতের ব্যাটিং। দেখে মনে হয়নি, এই ক্রিকেটারেরাই আইপিএল কাঁপাচ্ছিলেন।
প্রথম ওভারেই অভিষেক শর্মা যে শট খেলে আউট হলেন, তা দেখে বোঝা গেল এখনও আইপিএলের ঘোর কাটেনি তাঁর। রুতুরাজ স্লিপে ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে ফিরলেন। রিয়ান পরাগ অভিষেক ম্যাচেই আগ্রাসী শট খেলতে গিয়ে আউট হলেন। উইকেট বোঝার চেষ্টাই করলেন না। রিঙ্কু সিংহকে দেখে মনে হল, হারারে নয়, আমদাবাদ বা ইডেনের পাটা উইকেটে ব্যাট করতে নেমেছেন। নইলে নেমেই কেউ ওই শট খেলতে যান? যেখানে জুটি বাঁধা দরকার, সেখানে সবাই বড় শট খেলার চেষ্টা করলেন। যেখানে ২০ ওভারের মধ্যে জিতলেই চলে, সেখানে সবাই ১০ ওভারে খেলা শেষ করার চেষ্টা করলেন। কোনও ব্যাটারের শট দেখে মনে হল না, পরিকল্পনা করে নেমেছেন। উইকেট ছুড়ে দিয়ে এলেন।
শুধু ভারতের টপ অর্ডার নয়, মিডল অর্ডারেরও একই হাল। ধ্রুব জুরেল বলের লাইন বুঝতে পারলেন না। শুভমন কোনও রকমে রান করছিলেন। কিন্তু সিকন্দর রাজার নিরীহ বলে আড়াআড়ি ব্যাট চালাতে গেলেন। যে উইকেটে ব্যাটে বল সহজে আসছে না, সেখানে যে সোজা ব্যাটে খেলতে হয়, সেটা তো ক্রিকেটে সদ্য হাতেখড়ি হওয়া ব্যাটারও জানেন। এত দিনের অভিজ্ঞ শুভমন, যাঁকে ভবিষ্যতের অধিনায়ক ধরা হচ্ছে, সেই তিনি এই সহজ কথাটা ভোলেন কী ভাবে?
জ়িম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ভারতের তরুণ ক্রিকেটারেরা যে ভাবে ব্যাট করলেন, তা অনেক প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। বিরাট, রোহিতেরা অবসর নিয়েছিলেন যে বিশ্বাস থেকে, তা কি ভুল? ভারতের পরের প্রজন্ম কি এখনও তৈরি হয়নি? আইপিএলে খেলা, আর জাতীয় দলের হয়ে খেলা যে এক নয়, সেটা কি তাঁরা ভুলে গিয়েছেন? সব উইকেটে যে একই ভাবে খেলা যায় না, পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলার ধরন বদলাতে হয়, সেটা কি তাঁদের শিখিয়ে দিতে হবে? তা-ই যদি হয়, তা হলে বলা যেতে পারে, এখনও রোহিত, কোহলিদের বিকল্প তৈরি হয়নি।
আরও একটি বিষয় উঠে আসছে। বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে না পারা জ়িম্বাবোয়েকে কি খুব হালকা ভাবে নিয়েছিল ভারতীয় দল? ১১৬ রান চোখ বন্ধ করে তাড়া করা যাবে, এ কথা ভেবেছিলেন তাঁরা? নইলে ব্যাট করতে নেমে যে সব শট তাঁরা খেললেন, তা পাড়ার ক্রিকেটে খেললে পরের ম্যাচে বাদ পড়তে হত।
অধিনায়ক শুভমন ম্যাচ শেষে স্বীকার করে নিলেন যে, তাঁরা ভাবেননি এই পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। তাঁরা ভেবেছিলেন, ধীরেসুস্থে ম্যাচ জিতে যাবেন। কিন্তু যে ভাবে ভারত একের পর এক উইকেট হারাল, যে ভাবে ১১ জন ব্যাটারকেই খেলতে হল, তা চিন্তার কারণ বলেই স্বীকার করে নিয়েছেন অধিনায়ক। জ়িম্বাবোয়ের অধিনায়ক সিকন্দর রাজাও বলে দিলেন, এই উইকেটে ১১৫ রান করা খুব কঠিন নয়। অর্থাৎ, তিনিও বুঝিয়ে দিলেন, ভারতীয় ব্যাটারেরা খেলতেই পারেননি। উইকেটের দোহাই দেওয়া উচিত নয়।
ভারতের বিশ্বকাপের দলে রিঙ্কু ও খলিল ছিলেন। মাঠে না নামলেও কাছ থেকে দেখেছেন, কী ভাবে একের পর এক ম্যাচে কঠিন পরিস্থিতি থেকে দল জিতেছে। সে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১১৯ রান জেতাই হোক, বা ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩০ বলে ৩০ রান করতে না দেওয়া। কঠিন পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ বার করতে হলে ম্যাচ উইনারের প্রয়োজন। যশপ্রীত বুমরা, হার্দিক পাণ্ড্য, কুলদীপ যাদবেরা সেই কাজ করেছেন। কিন্তু এই দলে তেমন কোনও ম্যাচ উইনার দেখা গেল না। সবাই একই ভাবে খেললেন। কারও ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি, নিজের কাঁধে খেলা জেতানোর চেষ্টা করছেন।
হয়তো পরের ম্যাচেই জয়ে ফিরবে ভারত। হয়তো জ়িম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ়ও জিতবে তারা। তার পরেও কিন্তু এই প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক থাকবে। কারণ, পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আইপিএল ও ঘরোয়া ক্রিকেটে নজরকাড়া ক্রিকেটারেরা জ়িম্বাবোয়ের মতো অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের বিরুদ্ধে যে ব্যাটিং করলেন তা চোখে দেখা যায় না। আর যদি ভারত এই সিরিজ় হারে, তা হলে আরও কঠিন প্রশ্ন উঠে যাবে নির্বাচকদের সামনে। বিরাট, রোহিতদের ব্যাটন সঠিক হাতে গেল কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে তাঁদের।