ইস্টবেঙ্গলের কোচ অস্কার ব্রুজ়ো। ছবি: সমাজমাধ্যম।
শনিবার ভোর রাতে শহরে পা রেখেছিলেন তিনি। ১৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সেই অস্কার ব্রুজ়ো একেবারে প্রধান কোচ হিসাবে বসে পড়লেন ইস্টবেঙ্গলের ডাগআউটে। জাদুকরের মতো আর্বিভাবেই সব বদলে দিতে পারেননি তিনি। ইস্টবেঙ্গল আবার কলকাতা ডার্বিতে হেরেছে। তবে এই হারেও বেশ কিছু ইতিবাচক দিক খুঁজে পেয়েছেন অস্কার। পাশাপাশি দলের অসুখগুলিকেও চিহ্নিত করে ফেলেছেন। জানিয়েছেন, প্লে-অফ নয়, সত্যিকারের লক্ষ্য রাখতে হবে প্রথম দুই-তিনে শেষ করার চেষ্টা করতে হবে।
কলকাতায় এসে হোটেলে গিয়ে সামান্য ঘুমিয়েই মাঠে চলে এসেছিলেন। টিম লিস্টে কোচ হিসাবে তাঁর নাম দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। কারণ তাঁর শুধু ডাগআউটে বসারই কথা ছিল। এসেই যে কোচের আসনে বসে পড়বেন ভাবা যায়নি। তবে গোটা ম্যাচে অস্কারের আচার-আচরণ দেখে বোঝা গেল তিনি নিজের কাজটাকে নিয়ে কতটা আগ্রহী। এমন ভাবে কোচিং করালেন, নির্দেশ দিলেন, প্রতিবাদ করলেন যেন দীর্ঘ দিন ধরেই তিনি লাল-হলুদের কোচ।
ডার্বিতে হারের পরেও দলের ইতিবাচক দিকগুলি বলতে গিয়ে অস্কার বলেছেন, “অনেক ইতিবাচক দিক খুঁজে পেয়েছি। খেলোয়াড়দের মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে। যারা খেলেছে তাদের মানসিকতার মধ্যেও ইতিবাচক ভাব লক্ষ করেছি। পরিবর্ত হিসাবে যারা নেমেছে তারা সাধ্যমতো নিজেদের প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। আমি আশাবাদী। তাই দলের মধ্যে ইতিবাচক দিকগুলো খুঁজে বার করতে হবে। একই সঙ্গে নিজেদের ভুলগুলোও শুধরে নিতে।”
দলের ‘অসুখ’ও ধরে ফেলেছেন তিনি। সাফ বলে দিলেন, “আমি দেখতে চেয়েছিলাম দল কতটা তৈরি। তাই ডাগআউটে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ মরসুমে ইস্টবেঙ্গল যতগুলো ম্যাচ খেলেছে সব দেখেছি। চেষ্টা করেছি ভুলভ্রান্তি খোঁজার। আজও বুঝতে চাইছিলাম কোথায় কোথায় খামতি রয়েছে। যা দেখলাম, আমার দলে অনেক কিছুর অভাব রয়েছে। আগ্রাসন, তীব্রতার অভাব। দ্রুত বল হারিয়ে ফেলছি। খেলা বদলে দেওয়ার মোড় এলে সেটা কাজে লাগাতে পারছি না। রক্ষণ নিয়ে অনেক কাজ করতে হবে।”
প্রতিপক্ষ মোহনবাগানের প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, “মোহনবাগান যোগ্য দল হিসাবেই জিতেছে। মাঠে আমাদের সব বিভাগেই পিছনে ফেলেছে। ওরা বেশি সুযোগ তৈরি করেছে, কাজে লাগিয়েছে এবং জিতেছে। আমরা সেটা পারিনি। শারীরিক দিক থেকে ওরা এগিয়ে ছিল। আমাদের দলেও মাদিহ তালাল, দিয়ামানতাকোস, সাউলের মতো খেলোয়াড় রয়েছে। শারীরিক ভাবে আমরাও টেক্কা দিতে পারি। ওদের দিয়ে সেটাই করাতে হবে। প্রতি ম্যাচেই চার-পাঁচ গোলে জিতব সেটা হতে পারে না। রক্ষণ নিয়ে বেশ কিছু কাজ করতে হবে। আমাদের দল পাঁচ ম্যাচে ১১টা গোল খেয়েছে। সেটার দিকে তো নজর দিতে হবেই।”
আইএসএলে পাঁচ ম্যাচের পর একটিও পয়েন্ট না পাওয়া ইস্টবেঙ্গল প্রথম দুয়ে শেষ করতে পারে বলে মনে করছেন অস্কার। তাঁর কথায়, “অবশ্যই সম্ভব। আমি জানি ইস্টবেঙ্গল এখনও পর্যন্ত কোনও দিন আইএসএলে প্রথম ছয়ে শেষ করতে পারিনি। তাই আগের মরসুমগুলোয় দল ব্যর্থ হয়েছে বলেই ধরে নেব। তাই আমাদের লক্ষ্য প্লে-অফ নয়, প্রথম দুই-তিনে শেষ করা। আমরা যে ব্যর্থ হয়েছি সেটা কোনও ভাবেই লুকাতে চাই না। সত্যিটা মেনে নেওয়াই ভাল। সবে এলাম। একটু সময় দিলে মনে হয় ঠিক হয়ে যাবে সব।”
দলের প্রয়োজনে তিনি যে মেন্টাল কন্ডিশনিং কোচও রাখতে পারেন, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন অস্কার। বলেছেন, “আমি জানি না সে রকম কোচ দরকার কি না। তবে মানসিক দিকটা নিয়ে অনেক খাটতে হবে এটুকু বলতে পারি। মেন্টাল কন্ডিশনিং কোচ রাখা যায় কি না সেটা ঠিক করে দেখব। কখনও কোনও পেশাদার মানুষ এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেন। আবার কখনও ফুটবলারেরা নিজেরাই নিজেদের ভুল খুঁজে বার করতে পারে। এটা ঠিক যে দলটার মধ্যে একটা সমস্যা রয়েছে। আমরা প্রচুর চাপ মাথায় নিয়ে খেলছি।”