ইস্টবেঙ্গলের কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত। — ফাইল চিত্র।
গত বার মাঝারি মানের দল নিয়েও সুপার কাপ জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। উঠেছিল ডুরান্ড কাপের ফাইনালে। কিন্তু আইএসএলের প্লে-অফ অধরা থেকে গিয়েছিল। এ বার দলে যোগ দিয়েছেন গত বারের সোনার বুট জয়ী দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোস-সহ অনেকেই। তাই এ বার প্লে-অফ নয়, ইস্টবেঙ্গল কোচ চাইছেন আইএসএল ট্রফি জিততে। অন্য দিকে, অধিনায়ক ক্লেটন সিলভা একটু সাবধানি। তিনি প্লে-অফকেই প্রাথমিক লক্ষ্য রাখছেন।
সোমবার বাইপাসের ধারে ইমামির আর্ট গ্যালারিতে ইস্টবেঙ্গলের কোচ এবং গোটা দলকে হাজির করানো হয়েছিল। সেখানেই আগামী মরসুম নিয়ে কথা বললেন কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত। ইস্টবেঙ্গলের কোচ হিসাবে প্রথম মরসুমেই দিয়েছেন ট্রফি। দ্বিতীয় মরসুমে তাঁর লক্ষ্যটা আরও বড়। সহজে থামতে চাইছেন না।
কুয়াদ্রাত বলেছেন, “আমি জানি পরের মরসুম নিয়ে প্রত্যেকেই উত্তেজিত। আমাদের দলে ভাল ফুটবলার এসেছে। তাই এ বার প্লে-অফে থেমে থাকতে চাই না। আইএসএল ট্রফি জিততে চাই। এটাও জানি, আমাদের ধাপে ধাপে এগোতে হবে। প্রথমে ডুরান্ড কাপ রয়েছে। সেখানে ভাল খেলতে হবে। যে প্রতিযোগিতাতেই খেলি না কেন, জেতার চেষ্টা করতে হবে। দীর্ঘ দিন বাদে ভাল একটা দল হয়েছে আমাদের। ক্লাব ট্রফি জেতায় সমর্থকেরাও খুশি। প্রতিপক্ষ যতই শক্তিশালী হোক, আমরা আরও শক্তিশালী হতে চাই।”
যদিও অধিনায়ক ক্লেটন চাইছেন আগে প্রথম বাধাটা টপকাতে। তিনি বলেছেন, “আগে আমাদের প্রথম ছয়ে শেষ করতে হবে। সেটাই প্রাথমিক লক্ষ্য। তার পরে পরবর্তী লক্ষ্যের কথা ভাবা যাবে।”
গত বার এই একই জায়গায় সাংবাদিক বৈঠকে কুয়াদ্রাত বলেছিলেন, তিনি একটা পরিকল্পনা নিয়ে লাল-হলুদে এসেছেন। এক বছর বাদে কি তিনি খুশি? স্পেনীয় কোচের উত্তর, “সত্যি বলতে, অনেক কিছু হয়েছে গত এক বছরে। সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল, এখন আমাদের দলকে নিয়ে একটা আশা তৈরি হয়েছে। লোকে আমাদের প্রতি বিশ্বাস রাখছে। দুটো ফাইনালে উঠেছি, একটা জিতেছি। এত কিছু পাব নিজেও ভাবিনি।”
সে কারণেই কুয়াদ্রাত মেনে নিয়েছেন, তাঁর কোচিং করানো সেরা দলের মধ্যে এই ইস্টবেঙ্গল থাকবে। বলেছেন, “ভারতীয় ফুটবলে সাতটা মরসুম কাটিয়ে ফেললাম। অনেক পরিস্থিতি দেখেছি। নিঃসন্দেহে আমার কোচিং করানো সেরা দলের মধ্যে এই ইস্টবেঙ্গল থাকবে। অতীতে বেঙ্গালুরুকে কোচিং করিয়ে ট্রফি জিতেছি। তখনও চাপ ছিল, এখনও আছে। তবে সেটা উপভোগই করি।”
কেন ইস্টবেঙ্গলকে সেরা বলছেন তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কুয়াদ্রাত আরও বলেছেন, “বেঙ্গালুরুতে থাকার সময় আমাকে সেট-পিস কোচ বলা হত। আরও অনেক ভূমিকা পালন করেছি। আমি আসার আগে এই দলটা ৫-৬, ৪-৬ ব্যবধানে হেরেছি। কৌশলের অভাব ছিল। গত বার আমরা সেটা বদলে দিয়েছি। ১০টা ম্যাচে গোল খাইনি। টিমওয়ার্ক দেখাতে পেরেছি। এ বার আইএসএলে জেতার জন্যেও তৈরি। আরও বেশি আগ্রাসী হতে হবে আমাদের।”
ঘটনাচক্রে, ইস্টবেঙ্গলের অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা আগেই মোহনবাগানে চূড়ান্ত হয়েছে জেমি ম্যাকলারেনের নাম। অস্ট্রেলিয়ার সফলতম ফুটবলার খেলবেন সবুজ-মেরুনে। প্রতিপক্ষ দলের প্রতিও সমীহ রয়েছে কুয়াদ্রাতের। বলেছেন, “আমরা মোহনবাগানকে সমীহ করি। আসলে, একটা বড় ক্লাব আর একটা বড় ক্লাবকে গড়তে সাহায্য করে। রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনাকে দেখুন। ওরাও একে অপরকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করছে। এত বার মোহনবাগানের কাছে হারার পর গত মরসুমে দু’বার হারিয়েছি। এ বারও সেই ধারা বজায় রাখতে চাই।”
গত মরসুমে ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ ভাগ ততটা শক্তিশালী ছিল না। এ বার ক্লেটনের পাশে দিয়ামানতাকোস, ডেভিড লালানসাঙ্গারা খেলবেন। এ ছাড়া পি ভি বিষ্ণু, সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তরুণেরা তো রয়েছেনই। ক্লেটন কি একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন? ব্রাজিলীয় খেলোয়াড়ের উত্তর, “আমি কখনও আরামে থাকি না। সব সময় নিজেকে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করি। নিজেকে রোজ হারাতে চাই। দলে এ বার যারা যোগ দিয়েছে, ওদের টপকে যেতে চাই না। ওদের সাহায্য চাই। আশা করি দল হিসাবে আগের থেকে অনেক ভাল খেলব।”
ইস্টবেঙ্গল কোচ জানিয়েছেন, ষষ্ঠ বিদেশির জন্য খোঁজ চলছে। এখনও কারও নাম চূড়ান্ত হয়নি। অনেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা চলছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ষষ্ঠ বিদেশি চূড়ান্ত হয়ে যাবে। তবে হরমনজ্যোত খাবরা ইস্টবেঙ্গল ছাড়তে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন কুয়াদ্রাত। এ দিন বাকি খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা যায়নি তাঁকে। ভাল প্রস্তাব পেলে খাবরাকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।