ভরসা: দিমিত্রির থেকে গোল চান সতীর্থরা। —ফাইল চিত্র।
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের অন্দরহলের আবহ বদলে গেল নাটকীয় ভাবে। মঙ্গলবার রাতে আইএসএল শেষ চারের প্রথম পর্বের দ্বৈরথে ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধে তিন মিনিটে এগিয়ে গিয়েও হারের ধাক্কায় লিগ-শিল্ড জয়ের উল্লাস উবে গিয়ে শুধুই হতাশা। বুধবার সকালে থমথমে মুখে ভুবনেশ্বর ছাড়লেন মোহনবাগানের ফুটবলাররা। যুবভারতীতে আগামী রবিবার দ্বিতীয় পর্বের দ্বৈরথের উপরের নির্ভর করছে দিমিত্রি পেত্রাতসদের ত্রিমুকুট জয়ের স্বপ্নপূরণ ভবিষ্যৎ।
ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্তিমাচ আগামী ৬ জুন কুয়েতের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচ কলকাতায় খেলতে চান। তিনি বিশ্বাস করেন যুবভারতীর গ্যালারির গর্জন চাপে রাখবে প্রতিপক্ষকে, প্রথমবার তৃতীয় পর্যায়ে যোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগাবে সুনীল ছেত্রীদের। ইগরের মতো মোহনবাগানের ফুটবলারদের ভরসাও যুবভারতীর শব্দব্রহ্ম। অধিনায়ক শুভাশিস বসু বলছিলেন, ‘‘আমরা ঘুরে দাঁড়াবোই। কলকাতায় নিজেদের দর্শকদের সামনে জিতে আইএসএলের ফাইনালে উঠব।’’ জনির কথায়, ‘‘সমর্থকরাই আমাদের অনুপ্রেরণা। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচে যেমন যুবভারতীর গ্যালারি ভর্তি ছিল, একই ছবি দেখতে চাই ওড়িশা-দ্বৈরথেও।’’
ওড়িশার কাছে প্রথম পর্বে ১-২ গোলে হেরেছে মোহনবাগান। সরাসরি ফাইনালে উঠতে হলে যুবভারতীতে আগামী রবিবার অন্তত দু’গোলের ব্যবধানে জিততেই হবে শুভাশিসদের। তবে এক গোলের ব্যবধানে জিতলে ম্যাচ গড়াবে অতিরিক্ত সময় ও টাইব্রেকারে। আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাস থেকে জনি কাউকো— সকলেই আত্মবিশ্বাসী নির্ধারিত ৯০ মিনিটেই ওড়িশাকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার ব্যাপারে। হাবাস বললেন, ‘‘একটা গোল করলেই ম্যাচ গড়াবে অতিরিক্ত সময়ে। আমাদের লক্ষ্য ৯০ মিনিটের মধ্যে দু’গোল করে সরাসরি ফাইনালে যাওয়ার। তবে অতিরিক্ত সময়ে খেলার জন্যও মানসিক ভাবে প্রস্তুত হয়ে নামতে হবে।’’
হাবাসের মতে মঙ্গলবার রাতে ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে ওড়িশার কাছে হারের কারণ ফুটবলারদের একাধিক ভুল ও তিন মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার পরে আত্মতুষ্ট হয়ে পড়া। তিনি বলেছিলেন, ‘‘ফুটবলারদের ব্যক্তিগত ভুলের জন্যই আমাদের হারতে হয়েছে। তা ছাড়া তিন মিনিটের মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার পরে ওদের মধ্যে কিছুটা গা ছাড়া মনোভাব দেখা গিয়েছিল।’’ কোচের সঙ্গে একমত মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা জনি। বললেন, ‘‘গোল খাওয়ার পর আমরা ওদের ম্যাচে ফেরার সুযোগ করে দিই।’ অবশ্য ফুটবলে এ রকম হয়েই থাকে। আশা করছি, দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচে আমরা আরও ভাল খেলা উপহার দেব।’’
মোহনবাগান অধিনায়ক অবশ্য আঙুল তুলছেন রেফারিংয়ের দিকে। বললেন, ‘‘আমার মনে হয়েছে, সকলেই উদ্বুদ্ধ ছিল। নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার জন্য মরিয়া ছিল। আমরা এই ম্যাচটা জিততেও পারতাম।’’ যোগ করলেন, ‘‘রেফারিং আরও ভাল হতে পারত। আশা করছি, ২৮ এপ্রিল ঘরের মাঠে সমস্যা হবে না। ভাল রেফারি পাওয়া যাবে। মুম্বইকে হারিয়ে যেমন লিগ-শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম, তেমনই ওড়িশাকে হারিয়ে
ফাইনালে উঠব।’’
নির্বাসনের কারণে প্রথম পর্বের ম্যাচে ডিফেন্ডার ব্রেন্ডন হামিলকে পায়নি মোহনবাগান। রক্ষণ নিয়ে যে তিনি বিরক্ত, তা স্বীকার করে নিয়ে হাবাস বলেছেন, ‘‘রক্ষণে অনেক ভুল হয়েছে। ফুটবলারদের মধ্যে দূরত্ব প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। এই কারণেই দ্বিতীয় গোল হজম করতে হয়েছিল। কৃষ্ণের সঙ্গে হেক্তর যখন বল দখলের লড়াই করছিল, তখন ওর প্রয়োজন ছিল এক জন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের সহায়তা। কিন্তু ওর ২৫ গজের মধ্যে কেউ ছিল না।’’
রক্ষণের ভুলত্রুটি মেরামত করাই প্রথম কাজ হাবাসের। লাল কার্ড দেখায় ফিরতি ম্যাচে খেলবেন না আর্মান্দো সাদিকু। ফলে যুবভারতীতে শুরু থেকেই খেলার সম্ভাবনা প্রবল জেসন কামিংসের। ফিরতি সাক্ষাতে প্রথম একাদশে ফিরতে পারেন সাহাল আব্দুল সামাদও।