ফাইল চিত্র।
ক্রিকেটের প্রতি তাঁর অনুরাগ সর্বজনবিদিত। সেই লতা মঙ্গেশকরই প্রবল আর্থিক সঙ্কট থেকে উদ্ধার করেছিলেন ইস্টবেঙ্গলকে। ১৯৮৮ সালে ক্লাবের প্রাক-প্ল্যাটিনাম জুবিলিতে নামমাত্র অর্থে ইস্টবেঙ্গল মাঠে অনুষ্ঠান করেছিলেন। নেপথ্যে ছিলেন ক্লাবের তৎকালীন ফুটবল সচিব সুপ্রকাশ গড়গড়ি।
চার সপ্তাহের দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে রবিবার সকালে মুম্বইয়ে ৯২ বছর বয়সে প্রয়াত হন সুরসম্রাজ্ঞী। তাঁর মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন লাল-হলুদের প্রাক্তন ফুটবল সচিব। লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যে ছিল একেবারে দিদি ও ভাইয়ের। আনন্দবাজারকে সুপ্রকাশ গড়গড়ি বললেন, ‘‘সেই সময় প্রবল আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল ক্লাব। আমরা সকলেই চিন্তিত ছিলাম তা নিয়ে। রোভার্স কাপে সব সময় দলের সঙ্গে আমিই বম্বে (তখনও মুম্বই হয়নি) যেতাম। দিদির সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ করলাম কলকাতায় অনুষ্ঠান করার। উনি প্রথমে ভেবেছিলেন, আমার নিজের কোনও অনুষ্ঠানের জন্য বলছি। আমি ক্লাবের কথা বলতেই জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার এতে কী লাভ হবে।’’ তার পরে? ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন কর্তা যোগ করলেন, ‘‘দিদিকে খোলাখুলি ক্লাবের আর্থিক সঙ্কটের কথা বললাম। সেই সঙ্গে জানালাম, আমি ইস্টবেঙ্গলের ফুটবল সচিব। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যে অর্থ উঠবে, তা ক্লাবের জন্য ব্যবহার করা হবে। সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন দিদি। শুধু তাই নয়, পারিশ্রমিক হিসেবে নামমাত্র অর্থ নিয়েছিলেন।’’ আরও বললেন, ‘‘দিদির যাবতীয় ভালবাসা ছিল ক্রিকেটকে কেন্দ্র করেই। ফুটবল নিয়ে একেবারেই আগ্রহী ছিলেন না। তা সত্ত্বেও এক ডাকে ইস্টবেঙ্গলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।’’লতা মঙ্গেশকর রাজি হলেও ময়দানে এই ধরনের অনুষ্ঠানের অনুমতি সাধারণত দিত না সেনাবাহিনী। অনেক চেষ্টার পরে সেই বাধাও দূর করেছিলেন সুপ্রকাশ গড়গড়ি। বলছিলেন, ‘‘দিদির সঙ্গে অমিত কুমারও গান গেয়েছিলেন।এই অনুষ্ঠানের পরে প্রয়াত জ্যোতিষ গুহর নামে একটি ফুটবল প্রতিযোগিতাও করেছিলাম। দু’টি থেকে প্রায় সাড়ে আঠাশ লক্ষ টাকা আমাদের লাভ হয়েছিল। অধিকাংশ অবশ্য ব্যাঙ্কের ঋণ মেটাতে চলে গিয়েছিল। বাকি যে অর্থ ছিল, তা খরচ হয়েছিল আর্জেন্টিনার ফুটবলার জুলিয়ান ক্যামিনোকে আনতে।’’
এই অনুষ্ঠানেই লতা মঙ্গেশকরকে ইস্টবেঙ্গলের আজীবন সদস্যপদ দেওয়া হয়। রবিবার তাঁর প্রয়াণের পরে লাল-হলুদ পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।