প্রস্তুতি: অনুশীলনে মগ্ন মোহনবাগানের তুরুপের তাস দিমিত্রি। পিছনে ম্যাকহিউ ও বুমোস। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
আইএসএলে ওড়িশা এফসি কখনও হতাশ করেনি এটিকে-মোহনবাগানকে! এই মরসুমে মুম্বইয়ের কাছে হার ও চেন্নাইয়িনের সঙ্গে ড্র করে লিগ টেবলে প্রথম ছয় দলের মধ্যে থেকে সবুজ-মেরুনের নক-আউটে যোগ্যতা অর্জন করা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছিল। যুবভারতীতে দিমিত্রি পেত্রাতোসের জোড়া গোলে দিয়েগো মৌরিসিয়োদের বিরুদ্ধে জিতেই দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছিল মোহনবাগান। আজ, শনিবার ঘরের মাঠে সেই ওড়িশাকে হারিয়েই আইএসএলের শেষে চারে খেলা নিশ্চিত করার হাতছানি হুগো বুমোসদের সামনে।
পরিসংখ্যান যতই মোহনবাগানের পক্ষে থাকুক, ওড়িশার বিরুদ্ধে দ্বৈরথের আগে কোচ জুয়ান ফেরান্দো খুব একটা স্বস্তিতে নেই। স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে অস্ট্রেলিয়া ফিরে গিয়েছেন রক্ষণের অন্যতম প্রধান ভরসা ব্রেন্ডন হামিল। চোট থাকায় শুক্রবার বিকেলেও অনুশীলন করেননি মিডফিল্ডার গ্লেন মার্টিন্স। ডার্বিতে ব্রেন্ডনের অভাব বুঝতে দেননি স্লাভকো দামইয়ানোভিচ। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গোল করে তিনিই এগিয়ে দিয়েছিলেন দলকে। তাই সবুজ-মেরুনের স্পেনীয় কোচের প্রধান পরীক্ষা এখন মাঝমাঠে গ্লেনের শূন্যস্থান পূরণ করার মতো ফুটবলার খুঁজে বার করা। যাঁর উপরে খেলা তৈরি করার পাশাপাশি ওড়িশার দিয়েগো, থৈবা সিংহদের আক্রমণের ঝড়ও থামানোর দায়িত্ব তিনি দিতে পারবেন। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে জুয়ান বললেন, ‘‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবার। ব্রেন্ডনকে সঙ্গত কারণেই ফিরতে হয়েছে। ওকে এখন পরিবারের কথা ভাবতেই হবে।’’ গ্লেন কি খেলতে পারবেন? সবুজ-মেরুন কোচ বললেন, ‘‘ম্যাচের দিন সকাল পর্যন্ত সময় পাব। দেখা যাক কী হয়।’’ একই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন পরিস্থিতি যত প্রতিকূলই হোক, আক্রমণাত্মক ফুটবলই খেলবেন। বললেন, ‘‘নক- আউট ম্যাচ হলেও আমাদের পরিকল্পনায় কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলা লক্ষ্য। আমরা ৯০ মিনিটের মধ্যেই খেলাটা শেষ করতে চাই।” খেলা যদি টাইব্রেকারে গড়ায়? সবুজ-মেরুন কোচের কথায়, ‘‘অতিরিক্ত সময়ে খেলা গড়ালে তার জন্যও আমাদের পরিকল্পনা তৈরি রয়েছে।’’
মোহনবাগানের জয়ের পথে কাঁটা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই যে কলকাতায় এসেছে প্রথমবার নক-আউটে যোগ্যতা অর্জন করা ওড়িশা, কোচ জোসেপ গাম্বৌ সাংবাদিক বৈঠকে খোলাখুলি জানালেন। বললেন, ‘‘আমাদের হারানোর কিছু নেই। অনেকেরই ধারণা এটিকে-মোহনবাগান সহজেই ম্যাচটা জিতবে। আমরা এখানে এসেছি ওদের ধাক্কা দেওয়ার মানসিকতা নিয়েই।’’ কিন্তু আইএসএলে ওড়িশা কখনওই যে হারাতে পারেনি মোহনবাগানকে? জোসেপের হুঙ্কার, ‘‘এই ম্যাচটা সম্পূর্ণ আলাদা। ঘরের মাঠে আমরা ওদের চেয়ে অনেক ভাল খেলেছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত জিততে পারিনি, ড্র হয়েছিল। আমার কাছে পরিসংখ্যানের কোনও গুরুত্ব নেই।’’ জোসেপের সঙ্গে এই ব্যাপারে আশ্চর্য মিল জুয়ানেরও! তিনিও মনে রাখতে চান না ওড়িশার বিরুদ্ধে অতীতের ফলাফল। বললেন, “ওড়িশা ভাল দল। একাধিক দুর্দান্ত ফুটবলার রয়েছে। ওদের খেলার মানও খুব উঁচুতে। তবে নিজেদের দল নিয়েই বেশি ভাবছি।”
এই মরসুমে মোহনবাগানের প্রধান সমস্যা গোল করতে না পারা। ডার্বিতে জিতলেও অসংখ্য গোলের সুযোগ নষ্ট করেছিলেন মনবীর সিংহ, আশিকরা। গত কয়েক দিনের অনুশীলনে এই ভুলত্রুটি কতটা শুধরে নিতে পেরেছেন বুমোসরা? চিন্তিত জুয়ানের কথায়, ‘‘আগেও বলেছি, আমরা অনেক সুযোগ তৈরি করেছি। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একেবারে শেষ মুহূর্তে ব্যর্থ হয়েছি। আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল। আশা করছি, সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। আত্মবিশ্বাস নিয়েই খেলতে পারব।’’