আনোয়ার আলি। ছবি: টুইটার
আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে খেলতেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ক্যামেরুনের ফুটবলার মার্ক ভিভিয়ান ফো-র। ২০০৩ সালের সেই মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকেই সতর্ক ফিফা। সতর্ক বিভিন্ন দেশের ফুটবল সংস্থাও।
সেই সতর্কতাই আনোয়ার আলির পা থেকে বল কেড়ে নিয়েছিল। পঞ্জাবের আদমপুরে বেড়ে ওঠা তরুণ ফুটবলারের সমস্যাও হৃদ্যন্ত্রে। তাঁর হৃদ্যন্ত্রের পিছনের দেওয়াল কিছুটা মোটা। এতে রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাযায় এই সমস্যাকে বলা হয় হাইপারট্রফিক মায়োকার্ডিওপ্যাথি। চিকিৎসকরা আনোয়ারকে ফুটবল খেলতে বারণ করেন। পরে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের মেডিক্যাল কমিটিও তাঁকে পেশাদার ফুটবল থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেয়। কারণ একই রকম সমস্যা ছিল ফো-র।
ফুটবলজীবনে হঠাৎ অন্ধকার নেমে আসে আনোয়ারের। দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন কি তবে অধরাই থাকবে? তার আগেই ২০১৭ সালে ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপে খেলেছিলেন আনোয়ার। ২০১৮ সালে মুম্বই সিটি এফসি ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে দলে নেয় তাঁকে। কিশোর ফুটবলারের চুক্তির অঙ্ক হইচই ফেলে দিয়েছিল ভারতীয় ফুটবলে। ২০১৯ সালে ডাক পেয়েছিলেন জাতীয় দলে।
চিকিৎসকদের নির্দেশে ফুটবল বন্ধ হয়ে যাবে, মেনে নিতে পারেননি আনোয়ার। ফুটবল যে প্রাণের থেকেও প্রিয়। তাই জীবনই বাজি। ফেডারেশনকে মুচলেকা দিয়ে আবার শুরু করে দেন ফুটবল। আনোয়ার এবং তাঁর পরিবার জানিয়ে দেন, ফুটবল খেলার জন্য মৃত্যু হলেও কাউকে দায়ী করবেন না তাঁরা।
মুচলেকা দিয়ে আবার পেশাদার ফুটবলে ফিরে আসেন আনোয়ার। ২০২১-২২ মরসুমে যোগ দেন এফসি গোয়ায়। আইএসএলে দুরন্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে আবার তাঁকে জাতীয় দলে ডেকেছেন কোচ ইগর স্তিমাচ। বাহরিন, বেলারুশ ও জর্ডনের বিরুদ্ধে তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচে খেলেছিলেন আনোয়ার। এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বেও খেলেছেন সব ম্যাচ। হংকংয়ের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে প্রথম মিনিটেই গোল করে নজর কেড়েছেন। দেশের হয়ে গোল করে উচ্ছ্বসিত আনোয়ার। তিনি বলেছেন, ‘‘দেশের হয়ে কোনও দিন খেলতে পারব, সেটাই ভাবতে পারিনি। এত ভাল ভাল ফুটবলার থাকতেও আমি দলে! সব স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।’’
তাঁর সাফল্যে খুশি ক্লাবের সতীর্থরাও। সেরিটন ফার্নান্ডেজ বলেছেন, ‘‘জীবনের সঙ্গে প্রায় যুদ্ধ করে ফুটবল মাঠে ফিরেছে। ভারতীয় দলে ডাক পাওয়ায় আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। আনোয়ার নতুন করে ফুটবলজীবন শুরু করল।’’ প্রিন্সটন রেবেলো বলেছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক ফুটবলের শুরুতেই ভাল গোল পেয়েছে। ভারতীয় দলের হয়ে ওর অবদানও খুবই গুরুত্বপূর্ণ এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে।’’ এডু বেদিয়া বলেছেন, ‘‘পাঁচ বছর ভারতে খেলছি। আনোয়ারের মতো ফুটবলার দেখিনি। সর্বোচ্চ পর্যায়ে সফল হওয়ার মতো সব গুণ আনোয়ারের রয়েছে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।