নতুন আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত। ফাইল ছবি
দু’দিন হল আইএফএ সচিবের দায়িত্বে এসেছেন। দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না। কাজের চাপ প্রবল। বিকেল হলেই বেরিয়ে পড়ছেন মাঠ দেখতে। সামনেই কলকাতা লিগ। তার আগে কোথাও যাতে কোনও ফাঁক না থাকে, সেটা সুনিশ্চিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তার ফাঁকেই কিছুটা সময় পেয়ে নতুন আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজার অনলাইনকে:
প্রশ্ন: কিছু দিন আগেই কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়েছিলেন? সেই দায়িত্ব ভাল করে বুঝে নেওয়ার আগেই সচিবের পদ। প্রত্যাশা করেছিলেন?
উত্তর: কোষাধ্যক্ষের পদ অপ্রত্যাশিত নয়। বহু ক্লাবই আমাকে অনেক দিন ধরে অনুরোধ করছিল আইএফএ-তে আসার জন্য। কোষাধ্যক্ষের পদ ফাঁকা হওয়ার পর সেই অনুরোধ বাড়তে থাকে। যে হেতু ক্লাবগুলোর মাঝেই এত দিন থেকেছি, তাই ওদের ‘না’ করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবে এখনই সচিব হব, এটা সত্যিই ভাবিনি। কারণ আগের সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায় যে হঠাৎ করে পদত্যাগ করবেন এটা কেউই জানতাম না। তখন অনেকেই বললেন, আমাকে না কি কোষাধ্যক্ষ হিসেবে তাঁরা চাননি, সচিব হিসাবেই চেয়েছেন। সচিবের পদ ফাঁকা হওয়ায় আমি চ্যালেঞ্জটা নিলাম। লিগ শুরু হতে কয়েক দিন বাকি। আইএফএ-টা ধরার জন্য এক জন কাউকে দরকার ছিল। ক্লাবগুলো চাইছিল আমি সেই দায়িত্ব নিই। একটা দায়বদ্ধতা ছিল। বাকি কর্মকর্তারাও যখন অনুরোধ করলেন তখন আর ফেলতে পারিনি। যখন আইএফএ-র আমাকে দরকার তখন সেখানে যোগ দিয়েছি, এতেই বেশি তৃপ্তি। আমার সুবিধা অনুযায়ী আসিনি।
প্রশ্ন: আপনার বয়স তুলনামূলক ভাবে কম। এটা কি সুবিধা না অসুবিধা?
উত্তর: শুধুই সুবিধা। এত বছর ক্লাব চালানো এবং ক্লাবগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ভাল থাকার কারণে আমি জানি কোথায় কী সমস্যা রয়েছে। জানি কোথায় আমার সমস্যা হতে পারে এবং কী ভাবে সেটার সমাধান করতে পারি। বাকি ক্লাবগুলোর সমস্যাও জানি। কী হলে ভাল হতে পারে, কী করা উচিত, সে সম্পর্কে ধারণা রয়েছে। ফলে আমার মনে হয় সুবিধাই হবে।
প্রশ্ন: সচিব হওয়ার পর বলেছিলেন কলকাতা লিগ হবেই। তবে মোহনবাগান সেখানে খেলবে কি না এখনও নিশ্চিত নয়। এ ব্যাপারে কী বলবেন?
উত্তর: দেখুন, সমস্যা অনেক আছে সেটা অস্বীকার করছি না। তবে আমরা প্রত্যেকেই ফুটলকে ভালবাসি, ফুটবলের ভাল চাই। এত দিন কলকাতার মাঠগুলোয় খেলা হয়নি। এখন যখন সুযোগ রয়েছে, তখন ওরা ময়দানে খেললে সমর্থকরাও খেলা দেখার সুযোগ পাবেন। মনে হয় না কোনও বড় ক্লাবই চাইবে সমর্থকদের বঞ্চিত করতে। সমস্যা সব সময়েই থাকবে। সেটা পেরিয়ে ফুটবলের স্বার্থে সবাইকে এক মত হতে হবে। বাংলার ফুটবলপ্রেমীদের বঞ্চিত করা উচিত নয়।
পরিবারের সঙ্গে অনির্বাণ দত্ত। ছবি ফেসবুক
প্রশ্ন: বাংলার ফুটবলের উন্নতির ব্যাপারে সামগ্রিক ভাবে আপনার কী পরিকল্পনা রয়েছে?
উত্তর: সবে দু’দিন দায়িত্ব নিয়েছি। এখনও পুরোটা পরিকল্পনা করার সময় পাইনি। কিছু পরিকল্পনা অবশ্যই রয়েছে। কলকাতা লিগ থেকে অনেক ফুটবলার উঠে আসছে। বড় ক্লাবে সই করছে। আমরা জেলার ফুটবলারদের উপরে আরও জোর দিতে চাই, যাতে তারা প্রথম সারির ফুটবলে খেলতে পারে। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগ নিয়ে সল্টলেকে ফুটবলারদের থাকার একটা ব্যবস্থা করেছেন। সেখানে প্রায় ২০০ জন থাকতে পারবে। ওদের থেকে মাত্র ২৫ টাকা করে নেওয়া হবে। আগে জেলার ফুটবলারদের আনতে ইতস্তত করতাম। এখন সেটা নিয়ে ভাবতে হয় না। এ ছাড়া আন্তঃজেলা ফুটবল ভাল করে করতে চাই। কারণ জেলা ছাড়া ফুটবলার উঠে আসবে না। পাশাপাশি স্কুল এবং কলেজ ফুটবল লিগ চালু করতে চাই। আমার মনে হয়, কলেজ থেকে অনেক প্রতিভা উঠে আসতে পারে।
প্রশ্ন: আপনি এমন একটা পরিবার থেকে এসেছেন যারা ভারতের ক্রিকেট এবং ফুটবল প্রশাসনে পথিকৃৎ। পদবির কোনও চাপ রয়েছে আপনার উপর?
উত্তর: তুলনা আসবে এটা জানতামই। আমার বাবা (প্রদ্যোৎ দত্ত, প্রাক্তন আইএফএ সচিব) কিংবদন্তি প্রশাসক ছিলেন। সেটা আমার পক্ষে সুবিধার। আমি লক্ষ্যটা দূরের রাখতে চাই, যাতে অন্তত তাঁর কাছাকাছি পৌঁছতে পারি। মানুষ শেষ পর্যন্ত কাজ দিয়েই বিচার করে। বাবার সময়ে পরিবেশ এক রকম ছিল। এখন ময়দান অনেক বদলে গিয়েছে। কাজ নির্ভর করে সময়ের উপর। আমার বাবাকে অনেকে ভালবাসতেন। আজও অনেকে সে কথা বলেন। যে ভালবাসা আমরা পেয়েছি তা ভোলার নয়। তবে ভালবাসা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যায়, ক্ষমতাটা যোগ্যতা দিয়ে অর্জন করতে হয়।
প্রশ্ন: এ বার কলকাতা লিগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্লাব, রাজ্য সরকারের ক্লাব এবং মদন মিত্রের ক্লাব খেলবে। কোনও অদৃশ্য চাপ কি থাকছে?
উত্তর: চাপ নেওয়া আমার স্বভাবে নেই। কোনও দিনই ছিল না। আমি কাজে বিশ্বাস করি। কাজ ঠিক করলে ফল ভাল হবেই। যে ক্লাবগুলো আসছে, তারা ফুটবলের উন্নতির জন্যেই আসছে। কিবু ভিকুনাকে স্বাগত জানাতে তিন হাজার সমর্থক বিমানবন্দরে গিয়েছিল। এটাই তো আমরা চাই। প্রথম ডিভিশনে খেলেও ফুটবলাররা আইএসএলের স্বাদ পাচ্ছে, পরিচিতি পাচ্ছে। এর থেকে ভাল কিছু হতে পারে না।
প্রশ্ন: অর্থ একটা বড় সমস্যা। সেটা কী ভাবে সামলাবেন?
উত্তর: কিছু দিন আগেই অনূর্ধ্ব-১৭ মহিলা দল স্পনসর পেয়েছে। আশা করি আগামী দিনেও অনেককে পাশে পাব। অনেকের সঙ্গেই কথা চলছে।
প্রশ্ন: এআইএফএফে যে সমস্যা চলছে তার প্রভাব কি বাংলার ফুটবলে পড়তে পারে?
উত্তর: প্রভাব একটা পড়বেই। বাড়ির কর্তা যদি অসুস্থ হয়, তা হলে ছেলেপিলেরা কি শান্তিতে থাকতে পারে? তবে আমার ধারণা, শীঘ্রই নির্বাচন হবে এবং সব সমস্যা মিটে যাবে।
প্রশ্ন: রোজই মাঠ পরিদর্শনে যাচ্ছেন। কী রকম দেখলেন?
উত্তর: কিছু ছোটখাটো সমস্যা রয়েছে। কোথাও গোলপোস্ট ঠিক করতে হবে, কোথাও ঘাস কাটাতে হবে। কোথাও মাটি সামান্য অসমান। তবে মূল মাঠটা প্রায় সব জায়গাতেই ভাল। আশা করি দ্রুতই বাকি কাজ শেষ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: কলকাতা লিগ কবে শুরু হতে পারে?
উত্তর: ৩০ জুনের মধ্যে শুরু করতে চাইছি। প্রিমিয়ার ‘এ’ শুরু হতে জুলাইয়ের মাঝামাঝি হয়ে যাবে। ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান দুটো ক্লাবই খেলবে বলে দিয়েছে। মোহনবাগানের সচিব দেবাশিস দত্ত শহরে ফিরলে ওদের ব্যাপারে জানতে পারব। আমার ধারণা ওরাও খেলবে।
প্রশ্ন: বাংলার সন্তোষ ট্রফির দল নিয়ে কোনও ভাবনা রয়েছে?
উত্তর: পরের সন্তোষ শুরু হতে অনেক দেরি। আশা করি এ বার এক ঝাঁক নতুন ফুটবলারকে পাব। গত বার রানার্স হয়েছে বাংলা। প্রাক্তন সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায় খুবই ভাল কাজ করেছেন ওদের জন্য। ভাল জায়গায় থাকা, সব সময় খোঁজ রাখা, কেরলে গিয়ে ওদের পাশে দাঁড়ানো — অনেক কাজই করেছেন। আমিও চেষ্টা করব উনি যে কাজগুলো করেছেন সেগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।