চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ভারতীয় হকি দলের উচ্ছ্বাস। ছবি: টুইটার।
এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হকিতে চ্যাম্পিয়ন হল ভারত। যদিও শনিবার প্রত্যাশিত ছন্দে খেলতে পারল না ফাইনালের আগে পর্যন্ত অপরাজিত থাকা ভারতীয় দল। সে জন্য অবশ্য জয় ছিনিয়ে নিতে অসুবিধা হয়নি। টান টান ফাইনালে দু’গোলে পিছিয়ে পড়ার পরেও ভারত জিতল ৪-৩ ব্যবধানে। মরিয়া মালয়েশিয়া শেষ মিনিটে গোলরক্ষককে তুলে নিয়েও হার বাঁচাতে পারল না।
ফাইনালে প্রথম থেকেই আগ্রাসী হকি খেলতে শুরু করে মালয়েশিয়া। বিশ্ব ক্রমতালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা ভারতকেই ঘরের মাঠে কিছুটা রক্ষণাত্মক দেখাচ্ছিল। ফাইনালের শুরু থেকে কিছুটা ছন্দহীন দেখিয়েছে ভারতীয় দলকে। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ১-৩ গোলে পিছিয়ে পড়েন হরমনপ্রীতেরা। তৃতীয় কোয়ার্টারের রুদ্ধশ্বাস শেষ মিনিটে পর পর দু’গোল দিয়ে সমতা ফেরায় ভারত।
খেলার গতির কিছুটা বিপরীতে প্রথমে গোল দিয়ে অবশ্য ভারতই এগিয়ে গিয়েছিল। ৮ মিনিটে প্রথম পেনাল্টি কর্নার পায় ভারত। গোল করতে ভুল করেননি যুগরাজ সিংহ। পিছিয়ে পড়ার পর আক্রমণের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি করে মালয়েশিয়া। একের পর এক আক্রমণ তুলে আনে ভারতীয় দলের ‘ডি’-র মধ্যে। ১৪ মিনিটে দুর্দান্ত ফিল্ড গোল করে মালয়েশিয়াকে সমতায় ফেরান আবু কমল। প্রথম কোয়ার্টারের খেলা শেষ হয় ১-১ ফলে। প্রথম কোয়ার্টারের শেষ দিকে পর পর দু’টি পেনাল্টি কর্নার পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি ভারতীয় দল।
দ্বিতীয় কোয়ার্টারেও আক্রমণের ঝাঁজ কমায়নি মালয়েশিয়া। বরং ভারতীয় দলকেই প্রত্যাশিত ফর্মে দেখা যাচ্ছিল না। বিশেষ করে ভারতীয় দলের মাঝমাঠ শনিবারের ফাইনালের প্রথমার্ধে বলের দখল রাখতে পারল না তেমন ভাবে। সেই সুযোগে ১৭ মিনিটে গোল করে মালয়েশিয়াকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন রাজ়ি রহিম। ২৭ মিনিটে আবার গোল করে মালয়েশিয়া। ৩-১ গোলে এগিয়ে যায় মালয়েশিয়া।
প্রথমার্ধে ২ গোলে পিছিয়ে পড়েও ভারতীয় দল অবশ্য হাল ছাড়েনি। সমানে সমানে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে রণকৌশল পরিবর্তন করে ভারতীয় দল। তাতে ধীরে ধীরে মাঝমাঠের দখল নেন হরমনপ্রীতেরা। তাতেই এল কাঙ্ক্ষিত জয়। মাঝমাঠের দখল নেওয়ার পর খেলায় ফেরে ভারত। চেনা মেজাজে দেখা যায় হার্দিক সিংহ, যুগরাজ সিংহ, আকাশদীপ সিংহদের। ভারতীয় দলের আক্রমণের তীব্রতা বাড়ে। তবু কাঙ্ক্ষিত গোল আসছিল না। তা এল তৃতীয় কোয়ার্টারের শেষ মিনিটে। ম্যাচের এই ৪৫ মিনিটই ফাইনালের ছবি বদলে দিল। প্রথমে পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে ব্যবধান কমান অধিনায়ক হরমনপ্রীত। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে দুরন্ত ফিল্ড গোল করেন গুরজান সিংহ। তৃতীয় কোয়ার্টার শেষ হয় ৩-৩ গোলে।
সমতায় ফেরা ভারতকে আর রুখতে পারেনি মালয়েশিয়া। ৫৪ মিনিটে পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করতে ভারতীয় দল ব্যর্থ হলেও জয় পেতে সমস্যা হয়নি। ৫৬ মিনিটে প্রায় একক দক্ষতায় অসাধারণ গোল করেন আকাশদীপ। ৪-৩ গোলে এগিয়ে যায় ভারত। পিছিয়ে পড়ার পর সমতা ফেরাতে মরিয়া হয়ে ওঠে মালয়েশিয়া। শেষ মিনিটে গোলরক্ষককে তুলে নিয়ে পাঁচ জন স্ট্রাইকার নামান মালয়েশিয়ার কোচ। তাতেও লাভ হয়নি।
রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল ৪-৩ ব্যবধানে জিতে চতুর্থ বার এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হল ভারত। গোটা প্রতিযোগিতায় একটাও ম্যাচ হারেনি ভারতীয় দল। এই জয় এশিয়ান গেমসের আগে ভারতীয় দলের আত্মবিশ্বাস আরও বৃদ্ধি করতে পারে। শনিবারের ফাইনালে উপস্থিত ছিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন, কেন্দ্রীয় ক্রীড়মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, গ্র্যান্ড মাস্টার বিশ্বনাথন আনন্দ এবং ভারতীয় মহিলা হকি দলের সদস্যেরা।