ফরাসি দলের জার্সিতে মোরগের ছবি।— ফাইল ছবি।
মুরগি বা মোরগের সঙ্গে দূর-দূরান্ত অবধি ফুটবলের কোনও সম্পর্ক নেই। সার্কাসে হাতি, শিম্পাঞ্জি বা কুকুরদের বল নিয়ে খেলতে দেখা গেলেও মোরগকে দিয়ে ফুটবল খেলানোর কথা ঘুণাক্ষরেও কেউ ভেবেছেন বলে মনে হয় না। কিন্তু কী অদ্ভুত ব্যাপার, ২০ বছরের ব্যবধানে তিন বার বিশ্বকাপ ফাইনাল ওঠা ফরাসি ফুটবল দলের জার্সিতেই কি না আস্ত মোরগের ছবি! কেন?
ফ্রান্সের খেলা দেখে থাকলে কখনও না কখনও এই কৌতূহল আপনার মনে জন্মাতেই পারে আর তা অস্বাভাবিকও নয়। মনে করে দেখুন, জিদানরা যে বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হল, সেই ১৯৯৮ বিশ্বকাপের ম্যাসকটও ছিল একটি মোরগ– নাম ছিল ফুটিক্স।
কিন্তু ফরাসি ফুটবল ফেডারেশনের প্রতীকে মোরগ কেন? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে ফিরে যেতে হবে সেই অ্যাস্টেরিক্সের সময়ে বা প্রথম খ্রিস্ট পূর্বাব্দে, গল-দের ইতিহাসে। প্রাচীন ফ্রান্সের অধিবাসী বা গল-দের সঙ্গে তখন রোমান সাম্রাজ্যের মারাত্মক রেষারেষি। বুধ গ্রহটিকে ঈশ্বরের সমান দেখত গলরা। মোরগ রূপেই চলত বুধের আরাধনা। ল্যাটিন ভাষায় গালাস বললে মোরগ ও গল উভয়কেই বোঝাত। এই নিয়ে রোমানরা গল-দের ব্যঙ্গই করত। মোরগের সঙ্গে প্রাচীন ফ্রান্সের ভালবাসার সম্পর্কের সেই শুরু। মধ্যযুগ অর্থাৎ পাঁচ থেকে পঞ্চদশ শতকে ফ্রান্সের গোঁড়া খ্রিশ্চান রাজাদের কাছেও মোরগ বেশে গুরুত্ব পেত। কারণ খ্রিস্ট ধর্মে মোরগ হল অন্ধকারের উপর আলোর জয়ের প্রতীক। যদিও তারপর কোনও ভাবে ফরাসি সংস্কৃতি থেকে হারিয়েই যায় মোরগের সম্মান।
১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের ম্যাসকট।— ফাইল চিত্র।
আরও পড়ুন: জিদানদের সেই বিশ্বজয়ী দলের সদস্যরা আজ কে কোথায়
ফরাসি সংস্কৃতিতে মোরগ পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নেয় ফরাসি বিপ্লবের সময়। নেপোলিয়ন তখনও ফ্রান্সের অধীশ্বর হননি। ফ্রান্সের ইতিহাস তখন নতুন করে লেখা হচ্ছে। সে সময় ফরাসিদের পূর্বপুরুষ হিসেবে স্বীকৃতি পান প্রাচীন গলের অধিবাসীরা। আর তাদের আরাধ্য দেবতা– মোরগরূপী বুধ, হয়ে ওঠে ফরাসি জাত্যাভিমানের প্রতীক।
আরও পড়ুন: ইতিহাসের হাতছানি, ফাইনালে কেমন হতে ফরাসি একাদশ
এরপর নিয়মিত ভাবে ফরাসিদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে যায় এই প্রতীক। ফরাসি মুদ্রা বা ফ্রাঁ-তেও থাকত মোরগের চিহ্ন। ফ্রান্সের জাতীয় পতাকাতে মোরগ জায়গা না পেলেও ১৯১৯ সালে ফরাসি ফুটবল ফেডারেশন গঠন হওয়ার পর সংস্থার প্রতীক হিসেবে বেছে নেওয়া হয় ফ্রান্সের সাধের মোরগকে।