অবিশ্বাস্য: সতীর্থদের সঙ্গে শেরিফের গোলদাতা থিল। রয়টার্স
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
রিয়াল ১ শেরিফ ২
পোর্তো ১ লিভারপুল ৫
ইউরোপের সব চেয়ে গরিব দেশ। অপরাধ জগতের কারখানা। বিশ্ব চেনে চোরাচালান আর পাচার কার্যের আখড়া হিসেবে। আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি নেই। প্রাক্তন কেজিবি এজেন্ট পরিচালিত ক্লাব। পূর্বাভাস অনুযায়ী, যাদের জেতার ১.৪ শতাংশ সম্ভাবনা ছিল। তারাই মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে সব চেয়ে বড় অঘটনগুলির একটি ঘটিয়ে দিল।
লিয়োনেল মেসির নতুন ক্লাবের হয়ে প্রথম গোল নিয়ে মাতামাতির মধ্যেই আর্জেন্টিনীয় তারকার এতকালের প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে তাদের ঘরের মাঠে স্তব্ধ করে দিল ২-১ ফলে। লিভারপুল ৫-১ হারাল পোর্তোকে। আতলেতিকো দে মাদ্রিদ ২-১ জিতল এসি মিলানের বিরুদ্ধে। বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ১-০ হারাল স্পোর্টিং লিসবনকে। কিন্তু যাবতীয় চর্চা মেসি আর তাদের নিয়ে। এফসি শেরিফ তিরাসপোল— কারা তারা?
সারা দিন ধরে ফুটবল দুনিয়ায় সকলের মুখে ঘুরল এই প্রশ্ন। সংক্ষেপে উত্তর হচ্ছে, মলডোভার একটি ক্লাব, যাদের পুরো দলের মূল্য ১২ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ১০৩ কোটি)। যা রিয়ালের মাঝারি দরের ডিফেন্ডার দাভিদ আলাবার একার বার্ষিক বেতনের সমান। যাদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে খেলতে আসাটাই ছিল এক নজির। দু’টি অসাধারণ গোল করে ‘জায়ান্টকিলার’ হয়ে ফিরল। ইয়াকশিবোয়েভ এবং সেবাস্তিয়ান থিল গোলদাতা। তৃতীয় গোলও করেছিল কিন্তু অফসাইডের জন্য নাকচ হয়। ‘‘আমরা জিততে এসেছিলাম,’’ শেরিফের অধিনায়ক ফ্রাঙ্ক কাস্তানেদা বলে চলেন, ‘‘ঘুরতে আসিনি। দলে ভাল ফুটবলার রয়েছে। আমরা সুযোগ কাজে লাগাতে পেরেছি, রিয়াল পারেনি।’’ এ ভাবে শেষ কবে কোনও অখ্যাত ক্লাবের অধিনায়ককে সদর্পে বলতে শোনা গিয়েছে সান্তিয়াগো বের্নাবাউতে? সেবাস্তিয়ান থিলের হাতে একটা ট্যাটু রয়েছে। কী তাঁর অর্থ? না, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার স্বপ্ন দেখছেন। কে ভেবেছিল, শুধু স্বপ্নই সফল হবে না, মেসির রাতে অনবদ্য গোল লেখা থাকবে তাঁর নামের পাশেও। ৮৯ মিনিটে দুর্ধর্ষ ভলিতে গোল করে তিনি জয় নিশ্চিত করেন শেরিফের। ‘‘জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং উত্তেজক গোল। দল দুঃসাহসিক ফুটবল খেলেছে,’’ বলেন সেবাস্তিয়ান। শেরিফ কর্পোরেশন এই ক্লাবের মালিক। ক্লাবের জন্ম ১৯৯৭ সালে এবং ২৪ বছরে ১৯ বার মলডোভান চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে। শোনা যায়, কর্পোরেশন ও ক্লাবের মালিক ভিক্টর গুশান প্রাক্তন কেজিবি শীর্ষ কর্তা।
মলডোভা-ইউক্রেন সীমান্তে অবস্থিত ট্রান্সনিস্ত্রিয়ার রাজধানী তিরাসপোল। সেখানকার খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি ভিক্টর। ব্যবসা, ব্যাঙ্ক, ফুটবল থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সব প্রভাবশালী পদ, সবই ভিক্টরদের নিয়ন্ত্রণে। রাশিয়া ভেঙে পড়ার পর থেকে এই জায়গাকে মলডোভার অংশ হিসেবে ধরা হত। কিন্তু নব্বইয়ের শুরুতে গৃহযুদ্ধ ঘোষণা করে মলডোভা থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে নিজেদের ঘোষণা করে তারা। ভিক্টরদের স্বশাসিত রাজ্য আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতই নয়।
তবে সাম্প্রতিক নিয়ম শিথিলের জোরে বাইরে থেকে ফুটবলার আনতে পারছে তারা। তাতে নিঃসন্দেহে অনেক শক্তিশালী হয়েছে দল। এই দলটায় যেমন ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগো, উজ়বেকিস্তান, ঘানা, পেরু এমনকি ব্রাজিল থেকেও ফুটবলার রয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেরা অঘটনের মধ্যে ২০১২-তে সেল্টিকের ২-১ গোলে বার্সেলোনাকে হারানো রয়েছে। গত বছর আটলান্টা ২-০ হারিয়েছিল লিভারপুলকে। ২০১৯-এ আয়াখ্স ৪-১ হারিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদকে। আরও রয়েছে। কিন্তু শেরিফ তিরাসপোলের অবিশ্বাস্য অভিযান সবাইকে ছাপিয়ে এক নম্বরে উঠে এল।