সচিনের টুইটে ক্ষোভ উগরে দিলেন নেটাগরিকরা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যাবেলা ‘ঐক্যবদ্ধ ভারত’ নিয়ে টুইট করেন সচিন তেন্ডুলকর। রাতের দিকে টুইট করেন বিরাট কোহালি, রোহিত শর্মারাও। সেই টুইট ঘিরেই অসন্তোষ নেটাগরিকদের মধ্যে। কেউ কেউ রাগে সচিনের শেষ টেস্টের ছেঁড়া টিকিটের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘আমি আগে সচিনের ভক্ত ছিলাম। আজ থেকে সব শ্রদ্ধা হারালাম।’
ভারতে ক্রিকেট যদি ধর্ম হয়, তবে ঈশ্বর অবশ্যই সচিন। সেই সচিনের টুইটের তলায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ভক্তরা। কেউ লিখছেন, ‘আপনি আগে কথা বললে রিহানাদের বলতে হতো না’। কেউ আবার নরেন্দ্র মোদীর ওয়াশিংটনের ঘটনার সম্পর্কের টুইট তুলে ধরে লিখেছেন, ‘এই সময়ে বাইরের লোক কথা বলেনি অন্য দেশের বিষয়ে’। কোনও ভক্ত আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করেছেন, বিজেপি-র হয়ে কথা বলার জন্য অর্জুন তেন্ডুলকর ভারতীয় দলে জায়গা পাবেন কি না।
অনেক নেটাগরিক মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, এই কৃষকদের অনেকেই তাঁর খেলা দেখতেন। তাঁর করা প্রতিটা রান তাঁদের মুখে হাসি এনে দিত। সেই কৃষকদের নিয়ে কথা না বলে নীরব দর্শক হয়ে থাকার জন্যও সচিনকে ব্যঙ্গ করেছেন অনেকে। মারিয়া শারাপোভা একবার বলেছিলেন যে তিনি সচিনকে চেনেন না। সেই ছবি পোস্ট করে এক নেটাগরিক সমর্থক করেছেন টেনিস তারকাকে। অনেকে লিখেছেন সঙ্ঘের হয়ে ব্যাট করতে নেমেছেন সচিন।
সচিনের উদ্দেশে এক নেটাগরিক লেখেন, ‘টুইট করার আগে ক্রিকেটের ভগবান ছিলেন, টুইট করার পর অম্বানির কুকুর’। সচিনকে সচিনই আউট করেছেন বলেও মত এক নেটাগরিকের। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সচিন ১৯৪ রানে ব্যাট করার সময় ডিক্লেয়ার ঘোষণা করেন রাহুল দ্রাবিড়। সচিনের এই টুইটের পর রাহুলের সেই সিদ্ধান্তকে সামনে এনে একজন লিখেছেন, ‘আজ মনে হচ্ছে, সেদিন রাহুল ঠিক করেছিল।’
অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ের একটি ঘটনাও তুলে ধরেছেন নেটাগরিকরা। সেই সময় সচিন নিজের প্রিয় ফেরারি গাড়িটি কিনেছিলেন। কর মুকুব করে দিয়েছিল ভারত সরকার। নেটাগরিকদের মতে বাজপেয়ীর দলের প্রতি সেই অনুগত্যই প্রকাশ করেছেন সচিন। সচিনকে চুপ থাকতেও পরামর্শ দিয়েছেন অনেক ভক্ত।
বহু নেটাগরিকদের মতে বিদেশিরা কৃষক আন্দোলন নিয়ে কথা বলেছেন, কারণ সচিনরা সেই সময় চুপ ছিলেন। অনেক নেটাগরিকের মতে সচিনের ভক্ত থাকলেও আর তাঁকে ঈশ্বরের আসনে বসাতে পারবেন না তাঁরা।
শুধু সচিন নন, বিরাটদের টুইটের নীচেও দেখা যায় একই ক্ষোভ। অনেকে সচিনদের কৃষকদের কথা ভেবে দেখার উপদেশ দিয়েছেন। অনেক সচিন অনুরাগী জানিয়েছেন, এই টুইটের পর আর তাঁরা সচিনভক্ত নন।
কী লিখেছিলেন সচিনরা?
সচিন টুইট করে লেখেন, ‘ভারতের সার্বভৌমত্ব নিয়ে আপস করা যায় না। বাইরের লোকজন দর্শক হতে পারে, তবে অংশ নিতে পারে না। ভারতীয়রা ভারতকে জানে এবং ভারতের পক্ষেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আসুন আমরা জাতি হিসাবে ঐক্যবদ্ধ থাকি’। সচিনের এই টুইটটি রিটুইট করেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
ভারত অধিনায়ক বিরাট লেখেন, ‘আসুন আমরা সকলে মতবিরোধের এই মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ থাকি। কৃষকরা আমাদের দেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, এবং আমি নিশ্চিত যে, শান্তি বজায় রাখতে এবং একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সব পক্ষের সঠিক এমন সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে’।
বাদ যাননি রোহিতও। তিনি লেখেন, ‘ভারত যখন এক হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখনই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এখন প্রয়োজন সমাধান খুঁজে পাওয়া। আমাদের কৃষকরা আমাদের দেশের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং আমি নিশ্চিত সবাই মিলে সমাধানের জন্য তাদের ভূমিকা পালন করবে’।
টুইট করেছেন অনিল কুম্বলেও। তিনি লেখেন, ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসাবে ভারত তার অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলিতে মৈত্রীমূলক সমাধান খুঁজে নিতে যথেষ্ট সক্ষম’।
কেন করেছেন তাঁরা এই টুইট?
মনে করা হচ্ছে কৃষকদের পক্ষে রিহানা, গ্রেটা থুনবার্গ, মিয়া খলিফারা সরব হতেই মোদী সরকারের সুরে সুর মেলালেন সচিনরা। প্রত্যেকের টুইটেই দেখা যায় #ইন্ডিয়াটুগেদ্যর, অর্থাৎ #ভারত_ঐক্যবদ্ধ। মঙ্গলবার প্রথমে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টুইট করে বলেন, ‘কোনও প্রচারেই ভারতের ঐক্য নষ্ট হওয়ার নয়’। তাঁর টুইটের সুরই যেন দেখা গেল বিরাটদের টুইটে।