প্রস্তুত: রজার শো এ বার প্রিয় উইম্বলডনে। ফাইল চিত্র
প্রশ্ন: অনেকেই বলে থাকেন, উইম্বলডন আপনার ঘর-বাড়ি। ২০০১ সালে প্রথম বার এখানে খেলার কথা মনে আছে? পিট সাম্প্রাসের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচ?
ফেডেরার: ওই প্রথম এবং শেষ বার খেলেছিলাম পিটের বিরুদ্ধে। পঞ্চম সেটে ম্যাচটা জিতেছিলাম ৭-৫। আমার বয়স ছিল ১৯। তখনই বুঝেছিলাম, সুইৎজারল্যান্ডের কোনও এক জায়গায়, ঠান্ডা একটা হল ঘরের মধ্যে প্র্যাকটিস করে যাওয়ার চেয়েও টেনিসে বেশি কিছু আছে। বুঝেছিলাম, এটাই হচ্ছে আসল টেনিস। তখন থেকেই ঠিক করে নিই, এই কোর্টে আবার ফিরতে হবে। এদের সঙ্গে নিয়মিত খেলতে হবে। আমি টেনিস খেলে যাব আর খেলব বড় কোর্টে।
প্র: তা হলে কি ওটাই আপনার টেনিস জীবনের বিশাল টার্নিং পয়েন্ট ছিল?
ফেডেরার: বলতে পারেন। তখন থেকেই বুঝতে শিখেছিলাম, পরিশ্রমের মুল্যটা কী। কেন আপনি দিনের পর দিন জিমে কাটাচ্ছেন, কেন নিয়মিত দৌড়চ্ছেন, কেন টুর্নামেন্টে আগে আগে চলে আসছেন, কেন রাতে ভাল করে ঘুমোতে চেষ্টা করছেন— সব কিছুরই জবাব পেয়ে গিয়েছিলাম। বুঝেছিলাম, প্রতিটি কাজ নিখুঁত ভাবে করতে পারলে ফল পাওয়া যাবে। এ সব কিছুই আপনার জীবনে তফাত গড়ে দেবে।
প্র: টেনিস না থাকলে জীবন নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী হতো?
ফেডেরার: টেনিসের কাছে আমি সত্যি কৃতজ্ঞ। আমার দৃষ্টিভঙ্গিকে অনেক প্রসারিত করেছে টেনিস। আমি যদি টেনিস প্লেয়ার না হতাম, তা হলে বাসেলেই থাকতাম। ছোটখাটো কোনও কাজ করতাম। জীবন সম্পর্কে আমার ধারণাটাও বদলে যেত।
প্র: টেনিসের বাইরে আপনি দুঃস্থ শিশুদের শিক্ষার প্রসারে অনেক কাজ করছেন। আপনার কাছে শিক্ষার প্রসার এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
ফেডেরার: স্কুল জীবনটা আমি খুব উপভোগ করতাম। ওই সময়টা আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল। সব সময় যে ভাল ফল করতাম, তা নয়। আমি মাঝারি গোছের ছাত্র ছিলাম। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গ খুব উপভোগ করতাম। যা শিখেছি, তার জন্য আমার শিক্ষকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। স্কুলেও আমার কাছে স্পোর্টসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি মাঝে মাঝে ফুটবল খেলতে, টেবল টেনিস খেলতে চলে যেতাম। তার পর স্কুলে এসে আবার নিজের কাজে মনঃসংযোগ করতাম। আমি মনে করি, শিক্ষা মানুষকে অনেক সুযোগ দেয়। দারিদ্রের কষ্ট থেকে মুক্তি দেয়।
আরও পড়ুন: কুম্বলের সঙ্গে নাকি কথাই বলেনি সৌরভ, সচিনের কমিটি!
প্র: এ বছরের কথায় আসা যাক। ফরাসি ওপেন, পুরো ক্লে কোর্ট মরসুমে র্যাকেট হাতে তুললেন না। কারণটা কী?
ফেডেরার: আমি ঠিক করেছিলাম ফরাসি ওপেনটা অন্তত খেলব। কিন্তু এপ্রিল, মে মাসটা সুইৎজারল্যান্ডে খুব ঠান্ডা। গত বছর ঠান্ডার জন্য খুব সমস্যায় পড়েছিলাম। তাই এ বার ঠিক করি, একটু গরম জায়গায় চলে যাব। সেখানে হার্ডকোর্টে প্র্যাকটিস করি। পরে যখন ফিরে আসি, দেখলাম আমি মানসিক এবং শারীরিক ভাবে ফরাসি ওপেনের জন্য তৈরি নই। তা ছাড়া আমার লক্ষ্য ছিল ঘাসের কোর্ট— উইম্বলডন এবং স্টুটগার্ট, হালে ভাল কিছু করা। সিদ্ধান্তটা খুব কঠিন ছিল। সুস্থ থাকা অবস্থায় এই প্রথম কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম। তবে শেষ পর্যন্ত কিন্তু বলব, আমার সিদ্ধান্তটা ঠিকই ছিল।
প্র: ফিরে আসার পরে স্টুটগার্টে টমি হাসের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচেই হেরে গিয়েছিলেন। তখন কি মনে হয়েছিল, বিশ্রামটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল?
ফেডেরার: না, সে রকম কখনও মনে হয়নি। স্টুটগার্টে খারাপ খেলিনি। ম্যাচ পয়েন্টও পেয়েছিলাম, কিন্তু শেষ করতে পারিনি। হতে পারে ওই হারটাই আমাকে উইম্বলডনের জন্য বাড়তি ক্ষুধার্ত করে তুলবে।
প্র: উইম্বলডন এসে গেল। এ বার আপনার সামনে রেকর্ড আটবার ট্রফি জেতার সুযোগ। কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ— উইম্বলডন জেতা না আবার এক নম্বর হওয়া?
ফেডেরার: আমি আরও টুর্নামেন্টে জিততে চাই। এ বছরে আমার শুরুটা অবিশ্বাস্য হয়েছে। সব প্রত্যাশা ছাপিয়ে গিয়েছি। আমার লক্ষ্য ছিল, উইম্বলডনে প্রথম আট জনের মধ্যে থাকা (ফেডেরার খুব সম্ভবত চতুর্থ বাছাই হতে যাচ্ছেন)। ঘাসের কোর্টে খেলার ব্যাপারটা আমার কাছে খুব স্বাভাবিক ভাবে আসে। ইতিবাচক মানসিকতা নিয়েই কোর্টে নামব। আমার অভিজ্ঞতা আছে। আরও এক বার উইম্বলডন জিততে চাই।