Football

‘গো ব্যাক’ ধ্বনি ওঠে উঠুক, দর্শন বদলাব না

কিবু ভিকুনা শোনালেন নানা অজানা কাহিনি। 

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:৩০
Share:

কারিগর: মোহনবাগানকে আই লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন কিবু। ফাইল চিত্র

আই লিগের খেতাবি দৌড়ে তাঁর কোচিংয়ে অশ্বমেধের ঘোড়ার গতিতে ছুটছে মোহনবাগান। ১১ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবলের শীর্ষে জোসেবা বেইতিয়ারা। অথচ আই লিগের দ্বিতীয় ম্যাচে চার্চিল ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে হারের পরেই রাউল গার্সিয়া, জাভি মার্তিনেসের প্রাক্তন কোচকে শুনতে হয়েছিল ‘গো ব্যাক’ ধ্বনিও। আনন্দবাজারকে দেওয়া খোলামেলা সাক্ষাৎকারে কিবু ভিকুনা শোনালেন নানা অজানা কাহিনি।

Advertisement

হার না মানা মানসিকতা: ভাল খেলা সত্ত্বেও অনেক সময় সাফল্য আসে না। আই লিগের প্রথম ম্যাচে আইজল এফসির বিরুদ্ধে ড্র করেছিলাম। দ্বিতীয় ম্যাচে চার্চিলের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত খেলেও হেরে গিয়েছিলাম। শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রবল সমালোচনা। সমর্থকেরাও ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি ভেঙে পড়িনি। আমি দর্শন বদলাব না। আমি বিশ্বাস করি, ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেললে, সাফল্য আসবেই। হয়তো একটু সময় বেশি লাগবে। কিন্তু সফল আমরা হবই। আমার দর্শন ফুটবলারদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলাম বলেই এখন এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি।

প্রথম দু’ম্যাচে ব্যর্থতার কারণ: নদী যেমন নিজের ছন্দে বয়ে চলে, আমি চাই ছেলেরা ফুটবলটা সে রকম ভাবেই খেলবে। রক্ষণ, মাঝমাঠ থেকে আক্রমণ ভাগ— প্রতিটি বিভাগের মধ্যে অসাধারণ বোঝাপড়া থাকবে। চার্চিলের বিরুদ্ধে ম্যাচে এই তালটা কেটে গিয়েছিল। রক্ষণের ভুলে আমরা দু’টো গোল খেয়েছিলাম। কী কী ভুল সেই ম্যাচে আমরা করেছিলাম, তা নিয়ে ফুটবলারদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। ওদের বলেছিলাম, দ্রুত ভুলভ্রান্তি শুধরে নিতে না পারলে সমস্যা আরও বাড়বে। ওরা আমার কথা শুনেছে। ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছি। এই সাফল্যের আসল কারিগর ফুটবলাররাই।

Advertisement

আরও পড়ুন: ফেরার পথে উইলিয়ামসন, সুযোগ পাবেন কি ঋষভরা

চামোরোর বদলে পাপা: সালভা চামোরোকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা অত্যন্ত কঠিন ছিল। আমি এখনও মনে করি ও দারুণ স্ট্রাইকার। কিন্তু ক্লাব চাইছিল, অন্য স্ট্রাইকার আনতে। আমার সঙ্গে আলোচনা করেই পাপাকে নেওয়া হয়। আমি ওকে আগে থেকেই চিনতাম। তাই আপত্তি করিনি।

আক্রমণাত্মক ফুটবলই অস্ত্র: আক্রমণাত্মক ও আগ্রাসী ফুটবল আমার পছন্দ। আক্রমণে ঝড় তোলার পাশাপাশি বিপক্ষের ফুটবলারদের পা থেকে বল ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যও সকলকে ঝাঁপাতে হবে। এই কারণেই বিশেষ কোনও ছকের প্রতি আমার দুর্বলতা নেই। আমার কাছে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ফুটবলারেরা কোন ছকে খেলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করছে, সেটা।

আদর্শ গুয়ার্দিওলা-সিমিয়োনে: আমি মনে করি, এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা। সব সময় নতুন কিছু আবিষ্কারের চেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছেন। অসম্ভব দূরদর্শী। দিয়েগো সিমিয়োনেকেও ভাল লাগে ওঁর মানসিকতার জন্য। যদিও সিমিয়োনের কোচিং পেপের দর্শনের সম্পূর্ণ উল্টো। কিন্তু ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলার আশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে সিমিয়োনের। শুধু তাই নয়। রক্ষণাত্মক ফুটবলকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। আমি যদিও একেবারেই রক্ষণাত্মক ফুটবল পছন্দ করি না।

আরও পড়ুন: দিদিকে হারিয়েও বিশ্ব জয়ের নায়ক যোদ্ধা আকবর

খেলতে খেলতেই কোচিংয়ে: আমার বয়স তখন ২৬। মরসুমের মাঝপথে ব্যর্থতার দায় নিয়ে কোচ পদত্যাগ করেন। আমি তখন সেই দলের অধিনায়ক ছিলাম। পাশাপাশি পড়াশোনাও চলছিল। কোচ আমাকে ডেকে বলেন, আমি পদত্যাগ করছি। তোমাকেই এ বার দায়িত্ব নিতে হবে। খেলার পাশাপাশি এ বার থেকে কোচিংও করাবে তুমি। খেলা ছেড়ে কোচিং করাতে শুরু করলাম। উয়েফা ‘প্রো’ লাইসেন্স পাওয়ার পরে ওসাসুনার জুনিয়র দলে কোচিং করানোর সুযোগ পেলাম। ওসাসুনাতেই আমি পেয়েছিলাম রাউল গার্সিয়া, নাচো মুনরিয়াল, জাভি মার্তিনেস, সেসার আৎপিলিকুয়েতার মতো অসাধারণ ফুটবলারদের। তিন বছর থাকার পরে সিদ্ধান্ত নিলাম, এ বার সিনিয়র দলে কোচিং করাতে হবে। স্পেনেরই একটি তৃতীয় ডিভিশন দলের দায়িত্ব পাই। প্রথম মরসুমটা দারুণ কেটেছিল। দ্বিতীয় মরসুম শুরু হওয়ার পরে পোলান্ডের প্রাক্তন তারকা ইয়ান উব্রান ওঁর সহকারী হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দেন। পোলান্ডের সেরা দল লেগিয়া ওয়ারশতে যোগ দিই। পাঁচ বছরে প্রচুর ট্রফি জিতি। ইউরোপা লিগ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের যোগ্যতা অর্জন পর্বে খেলার সুযোগ পাই। ওখানেই বছর সাতেক আগে কাসা বিয়েলের সঙ্গে আমার আলাপ হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কাসা স্পেনে আমার শহরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা করতে গিয়েছিল। যদিও আমাদের প্রথম দেখা পোলান্ডেই। এর পরেই এক দিন ইয়ানকে বললাম, আর সহকারী নয়, প্রধান কোচ হিসেবে কাজ শুরু করতে চাই। গত মরসুমেই লিথুয়েনিয়ার একটি ক্লাবের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। মাস পাঁচেক পরে পোলান্ডে ফিরে যাই। তার পরে মোহনবাগানের দায়িত্ব নিয়ে কলকাতায় এলাম।

ভারতীয় ফুটবলে অভিজ্ঞতা: আমি সব সময়ই তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে কাজ করতে ভালবাসি। ওদের গড়ে তোলার মধ্যে দারুণ আনন্দ রয়েছে। নাচো, জাভি, সেসারদের মতো মোহনবাগানের নওরেম সিংহ, শেখ সাহিল, শুভ রায়ের মধ্যেও একই রকম শেখার আগ্রহ রয়েছে।

ভবিষ্যৎ নিয়ে উদাসীন: আমি জানি এটিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে মোহনবাগান। আগামী মরসুমে আইএসএলে খেলবে। কিন্তু আমি তা নিয়ে ভাবছি না। আমার সঙ্গে মোহনবাগানের চুক্তি এই মরসুম শেষ হওয়া পর্যন্ত। তাই আগামী মরসুমে কী হবে তা নিয়ে ভাবতে চাই না। তা ছাড়া আমি মনে করি, কোচেদের কখনও বেশি দূরের কথা ভাবা উচিত নয়। আমরা কেউ জানি না, আগামী কাল কোথায় থাকব।

আই লিগ ট্রফি প্রায় মুঠোয়: আমার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। যে কোনও মুহূর্তে বিপদ ঘটে যেতে পারে। তাই ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement