লক্ষ্য: বেঙ্গালুরুকে এ বার চ্যাম্পিয়ন করতে চান সুনীল। ফাইল চিত্র।
নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে ভারতের অষ্টমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের নেপথ্যে অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। নেপালের বিরুদ্ধে ফাইনালে ৮০তম গোল করে লিয়োনেল মেসিকেও ছুঁয়েছেন সুনীল ছেত্রী। ট্রফি নিয়ে মলদ্বীপ থেকে সরাসরি দিল্লি গিয়েছিলেন বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। এ বার তাঁর পাখির চোখ আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। তাই মাত্র এক দিন দিল্লিতে কাটিয়েই ফিরে এসেছেন বেঙ্গালুরুতে। বুধবার ক্লাবের নতুন মরসুমের জার্সি উন্মোচনের ব্যস্ততার মধ্যেই আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন ভারত অধিনায়ক।
প্রশ্ন: মলদ্বীপে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সুনীল ছেত্রী: অস্বীকার করার জায়গা নেই, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এ বার আমরা শুরুটা একেবারেই প্রত্যাশা অনুযায়ী করতে পারিনি। তবে প্রতিযোগিতা যত এগিয়েছে, আমরাও উন্নতি করেছি। দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানো আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল। আমি গর্বিত, সেটা শেষ পর্যন্ত
করতে পেরেছিলাম।
প্র: প্রথম দু’ম্যাচে ড্রয়ের পরে যে ভাবে সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল, তাতে নিশ্চয়ই খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলেন?
সুনীল: সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের সঙ্গে ১-১ ড্র। পরের খেলায় শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ফল ছিল গোলশূন্য। ফুটবলপ্রেমীদের হতাশার কারণটা আমি বুঝি। এর জন্য কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। কাউকে অসম্মানও করতে চাই না। কারণ, প্রত্যেকেই আমাদের কাছ থেকে আরও ভাল ফল প্রত্যাশা করেছিলেন। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এ বার অংশ নেওয়া দলগুলিকে সম্মান জানিয়েই বলছি, আমরাই ছিলাম সবচেয়ে শক্তিশালী। যদিও প্রথম দু’টি ম্যাচে কিছুই করতে পারিনি আমরা।
প্র: দুরন্ত প্রত্যাবর্তনের মন্ত্র কী?
সুনীল: ফাইনালে উঠতে হবে। চ্যাম্পিয়ন হয়েই দেশে ফিরতে হবে। এর চেয়ে ভাল মন্ত্র আর কী হতে পারে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য? প্রথম দু’টি ম্যাচে জিততে না পারলেও বিশ্বাস করেছিলাম— আমরা ভাল ফুটবল উপহার দিতে পারি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্যতা আমাদের আছে। আমরা কিন্তু সেটা প্রমাণ করেছি।
প্র: ভারতের হয়ে ৮০তম গোল করে মেসিকে ছোঁয়ার পরে কী রকম অনুভূতি হয়েছিল?
সুনীল: দেশের হয়ে সব চেয়ে বেশি গোল করার তালিকায় বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের পাশে আমার নাম থাকার অনুভূতিটাই আলাদা। মনে হয় যেন, এটা সব কিছুর চেয়ে আলাদা। একেবারে অন্য পর্যায়ের। তবে আমার প্রবল আপত্তি রয়েছে তুলনায়।
প্র: সাফ ফাইনালে আর একটি গোল করলেই তো মেসিকে ছাপিয়ে যেতে পারতেন। সেই সুযোগ হাতছাড়া করায় আক্ষেপ হচ্ছে না?
সুনীল: একেবারেই না।
প্র: অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে ২৪ অক্টোবর ভারতের প্রথম ম্যাচ ওমানের বিরুদ্ধে। এই দলের অনেকেই আপনার সতীর্থ ছিলেন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। কতটা আশাবাদী তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে?
সুনীল: আমি শুধু আশাবাদী নই, ভারতীয় ফুটবলের তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত। আমাকে মুগ্ধ করে ওদের আত্মবিশ্বাস ও সাহসী মানসিকতা। প্রতিপক্ষ যত শক্তিশালীই হোক, ওরা কিন্তু ভয় পায় না। নিজেদের ভাবনা-চিন্তা প্রকাশ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। যে কোনও দলের পক্ষে এটা খুবই ইতিবাচক দিক। আমি বিশ্বাস করি, প্রত্যেকের মতামত সমান গুরুত্বপূর্ণ। মনে করি পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক, সকলে মিলে তার মোকাবিলা করতে হবে। ভারতীয় দলের পরিবেশটা এখন এ রকমই। প্রত্যেকেই নির্ভয়ে তাদের মতামত দিতে পারে। আলোচনায় অংশ নেয়।
প্র: অষ্ঠম আইএসএলে বেঙ্গালুরুর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা কতটা?
সুনীল: প্রত্যেকটি প্রতিযোগিতাতেই আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামি। নিজেদের উপরে এই বিশ্বাসটা রাখি যে, সফল হবই। আসন্ন আইএসএলেও তার ব্যতিক্রম হবে না। নিজেদের যোগ্যতার প্রতি বিশ্বাস রয়েছে। গত বারের আইএসএল আমাদের জন্য একেবারেই ভাল ছিল না। এ বার আমরা সেই ছবিটা বদলে ফেলতে মরিয়া। অবশ্য অন্য দলগুলিও একই লক্ষ্য নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য মাঠে নামবে।
প্র: আইএসএলে আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য কী?
সুনীল: আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেঙ্গালুরু এফসি-র সাফল্য।