মুকেশকে কাঁধে তুলে নিয়েছেন আকাশ দীপ। অভিনন্দন কোচ অরুণের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
প্রশ্ন: শেষ কবে কেঁদেছিলেন?
অরুণ: যে দিন জানতে পারি আমি ক্যানসার-মুক্ত, সে দিন চোখের জল আটকে রাখতে পারিনি। আজও পারলাম না। ম্যাচ জেতার পরে সমর্থকদের উন্মাদনা দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। খেয়ালও করিনি কখন চোখ ভিজে গিয়েছে। আসলে শুরু থেকে এই দলটির সঙ্গে আছি। কখনও খুব রাগ হতো। মনে হত, যাদের জন্য এত কষ্ট করছি, তারা আমাকে ভুল বুঝবে না তো। কত বকা দিয়েছি। কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পুরোটাই দলের জন্য।
প্রশ্ন: মরসুম শুরু হওয়ার দু’মাস আগে থেকে ট্রেনিং করিয়েছেন। তখন কোনও বাধা আসেনি?
অরুণ: বাধা আসেনি বলা ভুল। অনেকেই বলেছিল, এখন এতটা পরিশ্রম করলে মরসুমের মাঝেই হাঁপিয়ে যাবে। অনেকে ফোন করে বলেছিল, এতটা পরিশ্রমের প্রয়োজন নেই। বলেছিলাম, কোচ আমি। কার কতটা পরিশ্রম প্রয়োজন, আমি বুঝে নেব। এখন তাদের অনেকেই আমার কাছে এসে অভিনন্দন জানাচ্ছে।
প্রশ্ন: ক্রিকেটার হিসেবে রঞ্জি ট্রফি ফাইনালে উঠেছেন। এ বার কোচ হিসেবে সেই প্রাপ্তি। কোন অনুভূতিটা বিশেষ?
অরুণ: (হাসি) ক্রিকেটার হিসেবে ফাইনালে ওঠার অনুভূতি এক রকম। কোচ হিসেবে অন্য রকম। বাংলার বর্তমান দলের ক্রিকেটারেরা আমার ছেলের মতো। যে ভাবে নিজের ছেলেকে মানুষ করার পরে আনন্দ হয়েছে। সে রকমই এই দল তৈরি করে ভাল লাগছে। গত বছর প্রথম রাউন্ড থেকে ছিটকে যাওয়ার পরে প্রত্যেকের কষ্ট অনুভব করেছি। নিজেকে বলেছি, আগামী বছর যেন ছেলেরা এই কষ্ট না পায়। তাই মরসুম শুরু হওয়ার আগে কঠোর পরিশ্রম করিয়ে দেখেছি, ছেলেরা পারবে কি না। যে ছেলেরা মাঠের তিন পাক দৌড়েই বসে পড়ত। তাদের এখন পঁচিশ পাক দৌড় করান। এক বারের জন্যও হাঁপাতে দেখবেন না।
ইডেন প্রদক্ষিণ ঈশানদের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
প্রশ্ন: দলের সাফল্যের নেপথ্যে কোন দু’টি বিষয় তুলে ধরবেন?
অরুণ: ফিটনেসে উন্নতিই সব পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। গত বছর দলের ফিল্ডিং মনে আছে? আকাশে বল উঠলেই ফেলে দিত। এ বছর একটিও ক্যাচ পড়ার মুহূর্ত আপনার মনে পড়ছে? দলের দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম দিনই বলে দিয়েছিলাম, দেশের সেরা দল হয়ে উঠতে হবে। তার জন্য বাড়াতে হবে ফিটনেস। উন্নতি করতে হবে ফিল্ডিংয়ে। বদলাতে হবে মানসিকতা। টেকনিক নিয়ে কোনও কাজ করার প্রয়োজন পড়েনি। রান করার সময় তোমার ব্যাট কোথায় আর পা কোথায় কেউ দেখবে না। দেখবে তুমি কত রান করলে।
প্রশ্ন: বাংলার এই দল থেকে ভারতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার প্রতিভা খুঁজে পেলেন?
অরুণ: আকাশ দীপ, ঈশান পোড়েল ও মুকেশ কুমার তিনজনই ভারতীয় দলে খেলার মতো প্রতিভাবান। আশা করি, ভবিষ্যতে অবশ্যই ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে উঠবে ওদের। (হাসি) ওরা ভারতীয় দলে খেললে বাংলায় আবার পেসারদের খরা পড়বে না তো!
প্রশ্ন: গত বছর মুকেশ কুমারকে দেখে অতি সাধারণ লেগেছে। এক বছরের মধ্যে কী করে এতটা পরিবর্তন?
অরুণ: ক্রিকেট শুধু খেলা নয়। সাধনা। গত বছর পর্যন্ত ড্রেসিংরুমে এই মানসিকতা তৈরি হয়নি। এ বছর ওরাও বুঝতে পেরেছে, কিছু পাওয়ার জন্য কিছু ছাড়তে হয়। মুকেশ শেষ কবে তেলেভাজা খেয়েছে ও নিজেও মনে করতে পারবে না। গত আট মাস বিরিয়ানি ছুঁয়েও দেখেনি আকাশ দীপ। তা ছাড়া ওয়েট ট্রেনিং ওদের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করেছে। ফিজিক্যাল ট্রেনার সঞ্জীব দাসকে ধন্যবাদ দিতেই হবে। অর্ণব নন্দী যখন শিবিরে যোগ দেয়, ওর ওজন ছিল আশির কাছাকাছি। ২৮ কেজি ওজন কমিয়েছে ও।
প্রশ্ন: ফাইনালের অঙ্ক এখন থেকেই কষা শুরু?
অরুণ: আমরা এত ভাবি না। বেশি ভাবলে মাথা ঠিক রাখা যায় না। তা ছাড়া আমি কখনওই ফলের পিছনে দৌড়ইনি। দলের মান উন্নতি করতে চেয়েছি। সেই লক্ষ্যে আশা করি সফল। আগামী পাঁচ বছরে বাংলার ক্রিকেট কোথায় পৌঁছয় দেখুন।