খেলোয়াড়জীবনে আন্তর্জাতিক মানের ফুটবলার ছিলেন পিকে, বললেন মজিদ। —ফাইল চিত্র।
পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় আর নেই। খবরটা শোনার পরে অনেক পুরনো কথা মনে পড়ছে। ক্লাব ফুটবলে আমার প্রথম কোচ পিকে। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য ইরান থেকে ভারতে এসেছিলাম। ১৯৮০ সালে ইস্টবেঙ্গলে খেলতে আসি। সেখানেই পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়।
একটা কথা বলি। পিকে নিজে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। অলিম্পিক্সে খেলেছেন। ফলে উনি খেলোয়াড়জীবনেই আন্তর্জাতিকতায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। অনেকেরই জানা নেই, পিকে ইরানেও পরিচিত নাম ছিল। আমি ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপে ইরান জাতীয় দলের সদস্য ছিলাম। সেই সময়ের ইরানের কোচ পরে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তুমি তো ভারতের ক্লাবে খেলছো। পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়কে চেনো? আমি কোচকে বলি, ক্লাব ফুটবলে পিকেই আমার প্রথম কোচ।
পিকের কোচিংয়ের সব চেয়ে ভাল দিক হল, উনি সবার কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনতেন। প্র্যাকটিসে তো বটেই, ম্যাচের আগেও আমাদের উদ্বুদ্ধ করতেন। ম্যাচের দিনগুলোয় দেখতাম, পিকে একটা নির্দিষ্ট পোশাক পরে আসতেন। আমি একদিন জিজ্ঞাসা করি, আপনি প্রতিটি ম্যাচের সময়ে একই জামা কাপড় পরে আসেন কেন? সেই সময়ে পিকে জবাব দেননি। পরে জানতে পেরেছিলাম, ওই নির্দিষ্ট পোশাক ছিল পিকের কাছে লাকি। তাই ওই জামাকাপড় ছাড়তেন না।
ইস্টবেঙ্গলে খেলার সময়ে অনুশীলনের দিনগুলো মনে পড়ছে। বল বসিয়ে পিকে ব্যানার্জি আমাকে বলতেন কোন জায়গায় শট করতে হবে। আমিও ওঁর কথামতো সেই জায়গাতেই শট মারতাম।
পিকের কোচিংয়ে বহু ম্যাচ আমরা জিতেছি। আলাদা করে কোনও একটা ম্যাচের কথা বলবো না। রোভার্স কাপে আমরা মোহনবাগান, মহমেডান স্পোর্টিংকে হারিয়েছিলাম। দার্জিলিং গোল্ড কাপ ফাইনালে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ২ গোলে পিছিয়ে থেকে আমরা ৩-২ গোলে জিতেছিলাম। অনেক ঘটনাই মনে পড়ছে। পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রইল। সবাইকেই একদিন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়। এটাই নিয়ম। কোচ আপনি যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন।