দুরন্ত: বার্নলির বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রথম গোল করার পরে ফডেনকে অভিনন্দন আগুয়েরোর। এতিহাদ স্টেডিয়ামে। রয়টার্স
বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে প্রতিবাদের সুর কিছুটা হলেও বিঘ্নিত হল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। সোমবার ভারতীয় সময় অধিক রাতে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি বনাম বার্নলির ম্যাচে হঠাৎই দেখা যায় আকাশে উড়ানের সঙ্গে লাগিয়ে ওড়ানো হচ্ছে একটি ব্যানার। তাতে লেখা— ‘হোয়াইট লাইভ্স ম্যাটার’। লেখাটির শেষে বার্নলি থাকায় ধরে নেওয়া হচ্ছে এটি সেই ক্লাবের ভক্তের কাজ।
আমেরিকায় জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বের খেলোয়াড়েরা বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন। ইপিএলে ম্যাচ শুরুর আগে প্রতিবাদ জানাতে হাঁটু মুড়ে বসার ভঙ্গি করছেন ফুটবলারেরা। সোমবারের ম্যাচে ম্যান সিটি এবং বার্নলি দু’দলের ফুটবলারেরাই এই ভঙ্গি করেছিলেন। আর জার্সির পিঠে ফুটবলারদের নাম লেখা থাকছে না। তার বদলে লেখা থাকছে— ‘ব্ল্যাক লাইভ্স ম্যাটার’। অর্থাৎ, কি না বিশেষ বার্তা দেওয়া যে, কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের জীবনেরও গুরুত্ব আছে। তাঁদের পক্ষপাতিত্ব বা হেলাফেলা প্রাপ্য নয়।
কিন্তু সোমবার রাতে ঠিক উল্টো বার্তা নিয়ে ম্যাঞ্চেস্টারের এতিহাদ স্টেডিয়ামের মাথার উপরে চক্কর কাটা উড়ান সেই সুর কেটে দিয়েছে। বার্নলি ক্লাবের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, তারা এ ধরনের ঘটনায় লজ্জিত। হাফটাইমেই বিবৃতি দিয়ে তারা বলে, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছে।
বিতর্ক: ম্যাচের মধ্যেই উড়ছে ব্যানার ‘হোয়াইট লাইভ্স ম্যাটার’। গেটি ইমেজেস
ব্ল্যাকপুল বিমানবন্দর থেকে এই উড়ানে করে ব্যানার ওড়ানোর জন্য একটি সংস্থা রয়েছে। অতীতেও ম্যাঞ্চেস্টারের মাঠের উপরে এ ভাবে বার্তা-সহ ব্যানার ওড়াতে দেখা গিয়েছে। ২০১৯ বিশ্বকাপেই ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচে কাশ্মীর নিয়ে ব্যানার ওড়ানো হয়। সংস্থাটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, আপত্তিকর শব্দ না-থাকলে আইনগত ভাবে কোনও ব্যানার ওড়ানোয় তারা অবৈধ কিছু খুঁজে পায়নি। তাই সোমবার রাতে এতিহাদের উপর এই বার্তা ওড়ানো হয়েছে। সংস্থাটির দাবি, পুলিশকে আগাম জানানো হয়েছিল, এমন ব্যানার ওড়ানো হচ্ছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, তা হলে পুলিশ এটা থামাল না কেন?
এ সব নাটকের মধ্যেই পেপ গুয়ার্দিওলার ম্যাঞ্চেস্টার সিটি তাঁদের সুন্দর ফুটবলের জয়যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। বার্নলিকে তারা হারাল ৫-০ গোলে। যার অর্থ তিরিশ বছর পরে লিগ খেতাব জয়ের জন্য লিভারপুলকে আরও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বুধবার য়ুর্গেন ক্লপের দল নামছে ক্রিস্টাল প্যালেসের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার ম্যান সিটির প্রতিপক্ষ চেলসি।
বার্নলির বিরুদ্ধে প্রথমার্ধেই পেপের দল এগিয়ে ছিল তিন গোলে। দু’টি করে গোল করেছেন নতুন তারকা, কলকাতায় যুব বিশ্বকাপ খেলে যাওয়া বছর কুড়ির ফিল ফডেন এবং রিয়াদ মাহরেজ়। দূরপাল্লার শটে প্রথম গোল করেন ফডেন। এর পরে ফের্নান্দিনহোর বাড়ানো ৫০ গজের পাস থেকে বক্সের উপরে দুর্দান্ত ড্রিবলে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে জোরালো শটে বার্নলি গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন মাহরেজ়। তাঁর দ্বিতীয় গোলটি পেনাল্টি থেকে। সের্খিয়ো আগুয়েরোকে ফাউল করেন বার্নলির বেন মি, যা মাঠের রেফারিদের চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। পেনাল্টির নির্দেশ আসে ভিডিয়ো অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভার) মারফত।
দেখে মনে হয়েছিল, বেনের স্পাইকের আঘাতে আগুয়েরোর পায়ের পাতায় চোট লেগেছে। তাঁকে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়। গুয়ার্দিওলা ম্যাচের পরে বলেছেন, হয়তো আর্জেন্টিনীয় তারকার মরসুমই শেষ হয়ে গেল। ম্যানেজারের আশঙ্কা, ফের হাঁটুতে চোট পেয়েছেন তাঁর স্ট্রাইকার। দ্বিতীয়ার্ধেও কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে ওঠেন ফিল ফডেন। একটি গোল তিনি করান বের্নার্দো সিলভা হয়ে দাভিদ সিলভাকে দিয়ে। অন্যটি নিজে করেন। চার গোলের পরেও যে গুয়ার্দিওলা রাশ হাল্কা করতে চাননি, তা থেকে বোঝা যায়, প্রতিপক্ষকে দুমড়ে জেতার লক্ষ্যে কতটা নির্মম তিনি।