সতর্কতা: জীবানুমুক্ত করা হচ্ছে কর্নার ফ্ল্যাগও। (ডান দিকে) স্ট্রেচারে মাঠ ছাড়ছেন এরিক গার্সিয়া। রয়টার্স
পরিবর্তনের আবহে প্রত্যাবর্তন! তবু কিছু কিছু জিনিস যে পাল্টানোর নয়! যেমন পেপ গুয়ার্দিওলার সুন্দর ফুটবল। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির ইঞ্জিন হিসেবে কেভিন দ্য ব্রুইনের ‘টোটাল ফুটবলের’ মুখ হয়ে ওঠা। আর্সেনালের দুর্ভোগ চলতে থাকা। এবং, দাভিদ লুইজের সমস্ত কিছু গুলিয়ে ফেলার অভ্যেস। ৪৯তম মিনিটে লাল কার্ড দেখে বাইরে গেলেন ব্রাজিলীয় ডিফেন্ডার, সঙ্গে ম্যান সিটিকে পেনাল্টি উপহার।
বুধবারের রাত এ সব কিছুই দেখল। দাঁড়ান, দেখল কী ভাবে বলা হবে? মাঠই যে ছিল ফাঁকা! জার্মানি, স্পেন, ইটালির পরে এ বার ইংল্যান্ড। করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে ফুটবল ফিরল দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে। মেরেকেটে তিনশো লোক ছিল এতিহাদ স্টেডিয়ামের ভিতরে। দু’দলের সদস্য, কর্তাদের বাদ দিলে মেডিক্যাল টিম, সংবাদমাধ্যমের দল এবং মাঠের কর্মীরা। সকলকে ঢুকতে হয়েছে শরীরের তাপমাত্রা মেপে।
তবু কিছু কিছু জিনিস যে পাল্টায় না! এতিহাদের বাইরে দুই ভক্তকে দেখা গিয়েছিল বুধবার রাতে। ম্যান সিটির আকাশি নীল জার্সি পরা। গেটের সামনের স্টলে ‘ফিশ অ্যান্ড চিপ্স’ খাচ্ছেন। প্রায় ২০ মাইল দূরের ওয়ারিংটন থেকে এসেছেন। তাঁরাও জানেন, মাঠে প্রবেশ নিষেধ। তা বলে প্রাক-ম্যাচ সংস্কার পালনের উপরে করোনাকে তো থাবা বসাতে দেওয়া যায় না! এত দিনের অভ্যেস মেনে পয়মন্ত স্টলে খেয়ে আবার গাড়ি করে ওয়ারিংটন ফিরে গিয়ে টিভির সামনে বসেছেন তাঁরা।
প্রথম দিনেই প্রতিবাদ, বিতর্ক, আঘাত সব মিলেমিশে একাকার। অ্যাস্টন ভিলা-শেফিল্ড ইউনাইটেডের গোলশূন্য প্রথম ম্যাচে গোললাইন প্রযুক্তি নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠল। গোল হয়ে গেলেও রেফারির ঘড়িতে সঙ্কেত আসেনি। ওই যে, কিছু কিছু জিনিস যে পাল্টানোর নয়! ইপিএলে ‘ভার’ (ভিডিয়ো অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) বিতর্কও সেরকমই।
ম্যাচ শুরুর আগে হাঁটু মুড়ে বসে দু’দলের ফুটবলারেরা জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু এবং বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেন। এমনকি, রেফারিকেও যোগ দিতে দেখা গেল। জার্সির সামনে করোনা-যুদ্ধে সামিল ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। পিঠে ফ্লয়েডের মৃত্যুর পরে গর্জে ওঠা সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়ে যাওয়া ‘ব্ল্যাক লাইভ্স ম্যাটার’ প্রচারকে সমর্থন। গুয়ার্দিওলা ম্যাচের পরে এমন কথাও বলে গেলেন যে, ‘‘কৃষ্ণাঙ্গদের কাছে আমাদের সকলের ক্ষমা চাওয়া উচিত।’’ লকডাউনে কণ্ঠ তৈরি হয়েছে ইপিএলের। একতার কণ্ঠ। প্রতিবাদের কণ্ঠ। আর্সেনালকে ৩-০ উড়িয়ে দেওয়ায় ম্যান সিটি নিশ্চিত করে দিল, এভার্টনকে হারালেও রবিবারেই খেতাব জেতা হচ্ছে না লিভারপুলের। তিরিশ বছর পরে স্বর্ণালী সন্ধ্যা ফিরিয়ে আনতে অপেক্ষা করতে হবে য়ুর্গেন ক্লপের দলকে। তিনটি গোল যথাক্রমে দ্য ব্রুইন, স্টার্লিং এবং ফিল ফডেনের। শেষের জন কলকাতায় যুব বিশ্বকাপ খেলে গিয়েছেন এবং এখন চাণক্য পেপের হাত ধরে বিশ্ব ফুটবলের আকাশে উদিত নতুন তারা।
ওদিকে আবার ম্যান সিটির এরিক গার্সিয়াকে নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। নিজের দলেরই আগুয়ান গোলকিপার এদার্সনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হলেন। হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও এ দিন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। আর পাঁচটা স্বাভাবিক দিন হলে গুয়ার্দিওলার জন্য হাততালি আর আর্তেতার জন্য ধিক্কার অপেক্ষা করত। বুধবার রাতে কোনওটটাই ছিল না। একশো দিন পরে ইপিএল ফিরল যে দর্শকহীন, নিস্তব্ধ পুরীতে!