উড়ন্ত: পাকিস্তানের আসাদ শফিক শূন্যে শরীর ছুড়ে দিয়ে অনবদ্য ক্যাচ নিয়ে ফেরান ইংল্যান্ডের ডম বেসকে। শুক্রবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে প্রথম টেস্টে। ছবি: গেটি ইমেজেস
মহম্মদ আব্বাস, শাহিন শাহ আফ্রিদি ও নাসিম শাহের গড়া মঞ্চে সফল পাকিস্তানের দুই রিস্টস্পিনার। চার উইকেট ইয়াসির শাহের। দুই উইকেট পেয়েছেন শাদাব খান। তাঁদের দাপটে ৩২৬ রানের জবাবে ইংল্যান্ড অলআউট ২১৯ রানে। ১০৭ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে পাকিস্তান। তৃতীয় দিন ব্যাট করে বিপক্ষের সামনে বড় রানের লক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ ছিল তাদের। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেনি আজ়হার আলির দল। দ্বিতীয় ইনিংসে আট উইকেট হারিয়ে তাদের রান ১৩৭। এগিয়ে ২৪৪ রানে।
৯২-৪ স্কোরে দ্বিতীয় দিন শুরু করেন অলি পোপ ও জস বাটলার। শুরু থেকেই শাহিন শাহ ও আব্বাসের সুইংয়ে বিভ্রান্ত হয়ে ধৈর্য হারান পোপ। সামনের পায়ের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন গালিতে। সেই নড়বড়ে ইংল্যান্ড ব্যাটিং লাইন আপের ফায়দা তোলেন ইয়াসির ও শাদাব। স্লিপ অঞ্চলে দুরন্ত ক্যাচ নিয়ে বিপক্ষের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করেন আসাদ শাফিক। কিন্তু দিনের শেষে আট উইকেট হারিয়ে তাঁরাই এখন বিপদে। চতুর্থ দিন পাকিস্তানকে দ্রুত অলআউট করে দিতে পারলে জয়ের আশা তৈরি হতে পারে ইংল্যান্ড শিবিরেও।
অন্য দিকে শক্তিশালী পেস বিভাগ থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে সফল হতে পারেনি ইংল্যান্ড। একই পিচে ইংল্যান্ডের উপরের সারির ব্যাটসম্যানদের ফিরিয়ে চমকে দিয়েছে পাক পেস বিভাগ। প্রথম দিন উইকেট না পেলেও টানা ৯০ মাইল প্রতি ঘণ্টায় বল করে নজর কেড়েছেন নাসিম শাহ। দ্বিতীয় দিন তাঁর গতি ও সুইংয়ে পরাস্ত হয়েই ফেরেন পোপ। অথচ আর্চারের গড় গতি ছিল ৮০ থেকে ৯০ মাইল প্রতি ঘণ্টার মধ্যে। আর্চারকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এখনও পর্যন্ত চলতি টেস্টে দ্রুততম বোলার অবশ্যই নাসিম। যা শুনে সম্প্রচারকারী চ্যানেলকে তরুণ পেসার বললেন, ‘‘প্রত্যেক দিন ৯০ মাইল প্রতি ঘণ্টায় (১৪৪ কিমি প্রতি ঘণ্টা) বল করা যায় না। কেউ ইচ্ছে করে মন্থর গতিতে বল করে না। আজ নাসিমকে দেখেছি ৯০ মাইল প্রতি ঘণ্টায় বল করতে। দেখি কাল সকালে ও দুপুরে কত জোরে বল করে ও।’’ আর্চার যোগ করেন, ‘‘কেউ রোবট নয়। তাই আমি দেখতে চাই কিছুক্ষণ বল করার পরে একই গতিতে ও বল করে যেতে পারে কি না। অতিরিক্ত কোমরের জোর প্রয়োগ করে বল করার মতো উইকেট এটা নয়। দ্বিতীয় দিন থেকেই বল কী রকম ঘুরতে শুরু করেছে দেখতে পাচ্ছেন?’’
ছন্দে: ৪ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে ২১৯-এ আটকে দিলেন ইয়াসির। ছবি: এপি।
আর্চার খুব একটা ভুল বলেননি। লেগস্পিনার ইয়াসির শাহই চার উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ান। জো রুট, জস বাটলার, ক্রিস ওকস ও ডমিনিক বেসের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে তিনিই পাক বোলিং বিভাগের নায়ক। দ্বিতীয় ইনিংসেও পাকিস্তানের সামনে বড় রান তোলার সুযোগ থাকলেও দ্রুত উইকেট হারিয়ে বিপদ ডেকে আনে।
সাফল্যের মাঝেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। প্রাক্তন অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদকে দেখা গিয়েছে জল ও জুতো নিয়ে মাঠে যেতে। যা নিয়ে শোয়েব আখতার বলেছেন, ‘‘সরফরাজের এই দৃশ্যে আমি মর্মাহত। ওর আরও সম্মান প্রাপ্য ছিল।’’
স্কোরকার্ড
পাকিস্তান ৩২৬ ও ১৩৭-৮
ইংল্যান্ড ২১৯
ইংল্যান্ড (প্রথম ইনিংস, আগের দিন ৯২-৪ এর পরে)
অলি পোপ ক শদাব বো নাসিম ৬২ • ১১৭
জস বাটলার বো ইয়াসির ৩৮ • ১০৮
ক্রিস ওকস বো ইয়াসির ১৯ • ৪৮
ডম বেস ক আসাদ বো ইয়াসির ১ • ১২
জোফ্রা ক রিজওয়ান বো শদাব ১৬ • ৩৩
স্টুয়ার্ট ব্রড ন.আ ২৯ • ২৫
জেমস অ্যান্ডারসন এলবিডব্লু শদাব ৭ • ১১
অতিরিক্ত ২১
মোট ২১৯-৯ (৭০.৩)
পতন: ৫-১২৭ (পোপ, ৪৪.৩), ৬-১৫৯ (বাটলার, ৫৩.২), ৭-১৬১ (বেস, ৫৭.৪), ৮-১৭০ (ওকস, ৬১.৪), ৯-১৯৭ (আর্চার, ৬৬.৪), ১০-২১৯ (অ্যান্ডারসন, ৭০.৩)।
বোলিং: শাহিন শাহ আফ্রিদি ১৮-৪-৫১-১, মহম্মদ আব্বাস ১৫-৬-৩৩-২, নাসিম শাহ ১৬-৪-৪৪-১, ইয়াসির শাহ ১৮-২-৬৬-৪, শদাব খান ৩.৩-০-১৩-২।
পাকিস্তান (দ্বিতীয় ইনিংস)
শান মাসুদ ক বাটলার বো ব্রড ০ • ১১
আবিদ আলি ক ওকস বো বেস ২০ • ৪৬
আজহার আলি এলবিডব্লু ওকস ১৮ • ৫৪
বাবর আজম ক স্টোকস বো ওকস ৫ • ২০
আসাদ শফিক রান আউট ২৯ • ৪৩
রিজওয়ান এলবিডব্লু স্টোকস ২৭ • ৪৩
শদাব খান এলবিডব্লু ব্রড ১৫ • ২২
ইয়াসির শাহ ব্যাটিং ১২ • ১৫
শাহিন আফ্রিদি ক বার্নস বো স্টোকস ২ • ১১
মহম্মদ আব্বাস ব্যাটিং ০ • ৩
অতিরিক্ত ৯
মোট ১৩৭-৮ (৪৪)
পতন: ১-৬ (মাসুদ, ১.৬), ২-৩৩( আবিদ আলি, ১৩.৬), ৩-৪৮ (বাবর, ১৯.৫), ৪-৬৩ (আজহার আলি, ২৩.৫), ৫-১০১ (শফিক, ৩৩.৫), ৬-১২০ (রিজওয়ান, ৩৮.২), ৭-১২২ (শদাব, ৩৯.৬), ৮-১৩৭ (শাহিন, ৪৩.৩)।
বোলিং: জেমস অ্যান্ডারসন ৯-২-৩৪-০, স্টুয়ার্ট ব্রড ৯-৩-২৩-২, জোফ্রা আর্চার ৫-০-১৩-০, ডম বেস ১২-২-৪০-১, ক্রিস ওকস ৫-১-১১-২, বেন স্টোকস ৪-১-১১-২।