নতুন: করোনার জের। আর্চারের উল্লাসের ভঙ্গিতেও বদল। রয়টার্স
দেখে মনে হবে কোনও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটার। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান শেন ডাউরিচের অভিষেক হয় ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। বার্বেডোজের ডাউরিচ ও রস্টন চেজ যে গুরুত্বপূর্ণ ৮১ রানের জুটি গড়ে দিল, তার সুবাদেই ইংল্যান্ডের চেয়ে প্রথম ইনিংসে ১১৪ রানে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দিনের শেষে ইংল্যান্ডের স্কোর ১৫-০।
উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে দস্তানা হাতে হোল্ডার, শ্যানন গ্যাব্রিয়েলদের ভরসা হয়ে উঠেছে ডাউরিচ। তেমনই উইকেটের সামনেও ওর অবদান অনস্বীকার্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রত্যেকেই উইকেটে দাঁড়াতে পেরেছে। একজনকে দেখেও মনে হয়নি, ইংল্যান্ডের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে। ওপেনার ক্রেগ ব্রাথওয়েটের প্রশংসা প্রাপ্য। ভেবেছিলাম সেঞ্চুরি করে মাঠ ছাড়বে। নতুন বলে অ্যান্ডারসন, মার্ক উড ও আর্চারকে খুব ভাল সামলেছে। নতুন বলের ধার কমিয়ে দিতেও সে কার্যকরী। কিন্তু বেন স্টোকসের সোজা বল মিডউইকেট অঞ্চলে ঠেলতে গিয়ে পরাস্ত হয় ব্রাথওয়েট। প্যাডে আছড়ে পড়ে স্টোকসের ডেলিভারি। ৬৫ রানে ফিরে যেতে হয় ক্যারিবিয়ান ওপেনারকে।
চার নম্বরে আসা শারমা ব্রুকসকে সব চেয়ে সাবলীল লেগেছে। টেস্ট ম্যাচের আদর্শ ব্যাটিং করছিল ও। অ্যান্ডারসনকে মারা ওর ব্যাকফুট কভার ড্রাইভ দিনের সেরা। সেই অ্যান্ডারসনেরই ‘লেট সুইং’ শিল্পের শিকার হয়ে ফিরতে হয় ব্রুকসকে। ব্যাটের সামনে থেকে বল বাঁক খেয়ে চলে যায় বাটলারের হাতে। এই দৃশ্য যদিও আর্চার, মার্ক উড বল করার সময় দেখা যায়নি।
বল পুরনো হলেও রিভার্স সুইং দেখা গেল না। ধারাভাষ্যকার মাইকেল হোল্ডিংও বলছিলেন, ‘‘বল পুরনো হয়ে গিয়েছে, অথচ রিভার্স সুইংয়ের চিহ্নই নেই।’’ করোনা পরবর্তী ক্রিকেটে এই দৃশ্য কিন্তু চিন্তায় রাখবে বোলারদের। রিভার্স বন্ধ হওয়ার সুবিধা নিয়েই রস্টন চেজ (৪৭) ও ডাউরিচ ৮১ রান যোগ করে বিপক্ষের স্কোরের চেয়ে এগিয়ে যায়। চল্লিশ ওভারের আগে পর্যন্ত চার উইকেট পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তার মধ্যে তিন উইকেট পেসারের, এক উইকেট স্পিনারের। চল্লিশ থেকে আশি ওভারের মধ্যে পড়ে এক উইকেট। অফস্পিনার ডমিনিক বেসের সৌজন্যে। এই পরিসংখ্যানই বলে দিতে পারে, পুরনো বলে বিপক্ষকে চাপে ফেলতে পারেনি ইংল্যান্ড।
প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তা হলে কি ঘামের সাহায্যে বলের এক দিক ঠিক মতো চকচকে রাখা যাচ্ছে না? বলের দু’দিকের ওজনে কি পার্থক্য গড়তে পারছে না শুধু ঘাম? একই পিচে জেসন হোল্ডার ও গ্যাব্রিয়েল বিপক্ষ শিবিরে ধস নামানোর পরে ইংল্যান্ড পেসাররা কেন ব্যর্থ? প্রথম কারণ, মেঘলা আবহাওয়া ও বিপক্ষের অতি সাবধানতার সুবিধা পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাশাপাশি হোল্ডারও বলের সিম ও কব্জির দুরন্ত ব্যবহার করেছে। ইংল্যান্ডের অ্যান্ডারসন ছাড়া কেউই সে রকম বল নড়াচড়া করাতে পারল না। মার্ক উডকে দেখে আমি হতাশ। ম্যাচ চলাকালীন ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমের দিকে ক্যামেরা ঘোরাতেই দেখা গেল বসে আছে স্টুয়ার্ট ব্রড। এই দৃশ্য যে কোনও ক্রিকেটপ্রেমীর কাছে দুঃখের। হয়তো দল পরিচালন সমিতি ভেবেছিল গতিতে বিপক্ষকে পরাস্ত করবে উড। তাই জায়গা হয়নি ব্রডের। টেস্ট শেষেই বোঝা যাবে এই সিদ্ধান্ত ব্যুমেরাং হয়ে ফিরল কি না। আশা করি, দ্বিতীয় টেস্টে অবশ্যই ফিরে আসবে ব্রড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ইংল্যান্ড ২০৪ ও ১৫-০, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩১৮ (ব্রাথওয়েট ৬৫, চেজ ৪৭, স্টোকস ৪-৪৯, অ্যান্ডারসন ৩-৬২)।