অলিম্পিক্সের জন্য সেজে উঠেছে প্যারিস। ছবি: এক্স (টুইটার)।
প্যারিস অলিম্পিক্সে বাংলার এক জন খেলোয়াড়ও দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারছেন না। অথচ দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আট জন পড়ুয়াকে দেখা যাবে প্যারিস অলিম্পিক্সে। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন সব খেলার এক ঠিকানা সেটি হল চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়।
কুস্তিতে রীতিকা হুডা, তিরন্দাজিতে ভজন কৌর, হকিতে সঞ্জয়, অ্যাথলেটিক্সে আকাশদীপ সিংহ এবং শুটিংয়ে অর্জুন বাবুতা। এই পাঁচ জন প্যারিস অলিম্পিক্সে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। এ ছাড়াও কায়াকিংয়ে যশ, তাইকোন্ডোতে অরুণা তানওয়ার এবং ব্যাডমিন্টনে পালক কোহলি পদকের জন্য লড়াই করবেন প্যারিস প্যারা অলিম্পিক্সে। এই আট জনই চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া।
দেশের বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। কী ভাবে এই সাফল্য? না, কোনও চমক নেই। এই সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, উন্নত পরিকাঠামো এবং আন্তরিকতা। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয় পঞ্জাবের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিজ্ঞানসম্মত ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় পড়ুয়াদের। পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁদের খেলার দিকেও সমান নজর রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। অনুশীলনের আধুনিক ব্যবস্থা তো আছেই। আছেন সফল পেশাদার কোচ, ট্রেনারেরাও। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি পড়ুয়ারা কী খাবেন, কী খাবেন না তা-ও ঠিক করে দেওয়া হয়। নজর রাখা হয় প্রত্যেকের উপর। কারও কোনও সমস্যা বা অসুবিধা হলে সমাধান করার চেষ্টা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে রয়েছে জিম, সুইমিং পুলের ব্যবস্থাও। গড়ে তোলা হয়েছে একটা ক্রীড়া অ্যাকাদেমি।
১৮ বছরের তিরন্দাজ ভজন বিএ প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। শুটার অর্জুন এমবিএ করছেন। কুস্তিগির রীতিকা, হকি খেলোয়াড় সঞ্জয় বিএ পড়ছেন। আকাশদীপ বিপিএড পড়ছেন চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাকিরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের পড়ুয়া। খেলোয়াড়-পড়ুয়াদের উন্নতির জন্য চলতি শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ করেছেন সাড়ে ৮ কোটি টাকা। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক স্তরে সফলদের জন্য রয়েছে মেজর ধ্যানচাঁদ স্কলারশিপ। এই খাতে এ বছর বরাদ্দ ৩.৮৪ কোটি টাকা। মোট ১১৮৩ জন পড়ুয়া এই স্কলারশিপের সুবিধা পান। এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৫৬২। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্যের নিরিখে ১০০ শতাংশ স্কলারশিপ পান ৪০৭ জন।
চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আট জন পড়ুয়া প্যারিস অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করবেন, তাঁরা প্রত্যেকে আন্তর্জাতিক স্তরে সফল হয়েছেন। সেই সাফল্যেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার রাস্তা দেখিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশিক্ষকেরা। যে রাস্তা গিয়ে মিশতে চলেছে প্যারিসের অলিম্পিক্স ভিলেজে।
চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পড়ুয়াদের পথ দেখাচ্ছে না। দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সামনে তৈরি করছে উদাহরণ। ইচ্ছা, আন্তরিকতা, পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে খামতি না থাকলে সম্ভব। পড়া থেকে খেলা— সব। অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণকারী অনেক দেশের আট জন প্রতিনিধিই থাকবে না প্যারিসে। একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আট জন প্রতিযোগী গল্পের মতোই এ দেশে।