ক্লাবের সমস্যা নিয়ে মুখ খুললেন শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত।
এখন সময়টাই এমন, যে কোনও বিষয়ে যে কেউ মন্তব্য করে দিতে পারে। সেই বিষয় নিয়ে আগে বিস্তারিত জেনে নেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করে না কেউ। এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। মাঝে মাঝে কিছু মানুষের বক্তব্য দেখে খুব কষ্ট হয়, অসহায় লাগে। কিন্তু বলা যায় না কিছু।
ইস্টবেঙ্গল যাতে আইএসএল খেলতে পারে, সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত বছর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আমরা ওঁর কাছে চির কৃতজ্ঞ। এখনও আমাদের সমস্যাটা উনি দেখছেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে যখন উদ্যোগী হন, সেখানে অন্য কাউকে নিযুক্ত করাটা অনুচিত। তবু আমরা ক্লাবের সমস্যায় প্রাক্তনদের বারবার অনুরোধ করছি এগিয়ে আসার জন্য, ক্লাবের পাশে থাকার জন্য। আসলে ছেলেবেলা থেকে আমরা এটাই শিখেছি যে, মানুষ বিপদে পড়লে শুভানুধ্যায়ীরাই নিজে থেকেই এগিয়ে আসেন। তাঁদের আলাদা করে ডাকার প্রয়োজন হয় না।
প্রাক্তনরা যাঁরা ক্লাবে আসেন, দেখা হলেই তাঁদের বলি, কফি শপে বসুন, আড্ডা দিন, আপনারা থাকলে অনেক সহযোগিতা পাওয়া যায়। আশা করি এটা কেউ অস্বীকার করবে না।
—ফাইল চিত্র
প্রাক্তন অধিনায়ক সুমিত মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কেউ কেউ শ্রী সিমেন্টের অফিসে গিয়ে ওঁদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তখন মধ্যস্থতাকারীরা আমাদের বলেছিলেন, কেন প্রাক্তনদের পাঠানো হচ্ছে? আমরা বুঝতে পারি, ওঁদের হয়তো কাজ করতে অসুবিধে হচ্ছে। আমরা তারপর সুমিতকে বলি, আপাতত আর যাওয়ার দরকার নেই। এটাও বলি, আবার দরকার হলে অবশ্যই বলব।
গত শুক্রবারের কার্যকরী সমিতির সভায় আমরা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি, যেখানে লেখা আছে, সমস্যার সমাধান না হলে আমরা সদস্য, সমর্থক, প্রাক্তন খেলোয়াড় (ক্রিকেট, ফুটবল, হকি) সবার পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব। যে সব প্রাক্তন এখন ক্লাবের বিরুদ্ধে গিয়ে বিবৃতি দিচ্ছেন, তাঁরা হয়তো এটা খেয়াল করেননি। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভাল, আমরা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে বহু প্রাক্তন খেলোয়াড়ের সদস্যপদ করে দিয়েছি।
দেখলাম কোনও কোনও প্রাক্তনী বলছেন, কেন জনসম্মুখে চুক্তিপত্র আনা হচ্ছে না? আমরা তাদের উদ্দেশে বলি, গত ২২ শে মার্চ ক্লাব বলেছিল, যে কেউ এসে চুক্তিপত্র দেখতে পারেন। আজও আমরা সেই একই কথাই বলছি। আপনারা ক্লাবে এসে চুক্তিপত্রের কাগজ দেখে যান।
প্রায়ই শোনা যায় গত ১৮ বছরে সচিব কল্যাণ মজুমদারের নেতৃত্বে এই কর্মসমিতি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে কোনো সাফল্যই এনে দিতে পারেনি। ১৮ বছর, অর্থাৎ ২০০৩ এর পরবর্তী সময়ে ইস্টবেঙ্গল কী কী সাফল্য পেয়েছে, সেটা একটু স্মরণ করি।
২০০৪, ২০০৬, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ সালে আমরা কলকাতা লিগে চ্যাম্পিয়ন হই। ২০০৭, ২০০৯, ২০১০, ২০১২ ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন। ২০১২, ২০১৮ আইএফএ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন। ২০০৪ ডুরান্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন। ২০১৮ দার্জিলিং গোল্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন।
২০১০ মহমেডান স্পোর্টিং প্ল্যাটিনাম জুবিলি কাপ চ্যাম্পিয়ন। ২০০৬, ২০১১ সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন। ২০০৪ নেপালের সান মিগুয়েল ইন্টারন্যাশনাল ক্লাব চ্যাম্পিয়ন। এ ছাড়া ২০০৪, ২০০৫, ২০০৮, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৩, ২০১৫ সালে এএফসি কাপে অংশগ্রহণ এবং ২০১৩ তে এএফসি কাপের সেমিফাইনালে ওঠাও রয়েছে। এছাড়াও ক্রিকেটে আমরা এই ১৮ বছরে সিএবি-র প্রতিযোগিতাগুলিতে প্রায় ২৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।
ময়দানে সবাই জানে, ইস্টবেঙ্গল ক্লাব প্রাক্তন খেলোয়াড়দের কতটা সম্মান দেয়। আমরা সবসময় প্রাক্তনদের ক্লাবে আসার জন্য বলি। আমরা এটাও বলি, যে কোনও প্রাক্তন খেলোয়াড় ক্লাব পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে পারেন। আমাদের এই কর্মসমিতিতে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, সমাজসেবী সর্বস্তরের লোক রয়েছেন। আর এই কর্মসমিতি সদস্যদের দ্বারাই গঠিত হয়। তাই আমাদের লড়াইটা ক্লাবের সভ্য-সমর্থকদের অধিকার রক্ষার লড়াই।
(লেখক ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কার্যকরী সমিতির সদস্য)