নজরে: ফিটনেস বাড়িয়ে এখন দারুণ ছন্দে অভিমন্যু। ফাইল চিত্র
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় টেস্ট দলকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল যে জুটি। অভিমন্যু ঈশ্বরনের উন্নতির নেপথ্যেও ঘুরেফিরে আসছে তাঁদেরই অবদান। প্রথমজন ভিভিএস লক্ষ্মণ, অন্যজন রাহুল দ্রাবিড়। লক্ষ্মণ কাজ করেছেন অভিমন্যুর টেকনিকের উপরে। মানসিক দৃঢ়তা বাড়ানোর শিক্ষা পেয়েছেন দ্রাবিড়ের থেকে। ভারতীয় ক্রিকেটের দুই সেরা ব্যাটসম্যানের পরামর্শ মেনে আরও পরিণত হয়ে উঠেছেন বাংলার তরুণ ওপেনার।
রঞ্জি ট্রফিতে ছয় ম্যাচে তাঁর রান ৮৬১। রয়েছে দু’টি সেঞ্চুরি ও একটি ডাবল সেঞ্চুরি। বুধবার ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন ১১৭ রান করে ভারত ‘এ’ দলকে সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে দেন অভিমন্যু। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনে ১৪০ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড লায়ন্স। ফলো অন হওয়ার পর ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের রান ২৪-০।
ঈশ্বরন জানিয়েছেন, টেকনিক ও মানসিকতায় পরিবর্তনই তাঁর উত্থানের মূল কারণ। বৃহস্পতিবার মহীশূর থেকে ফোনে ঈশ্বরন বলেন, ‘‘ভিশন ২০২০ প্রকল্পে লক্ষ্মণ স্যরের থেকে অনেক কিছু শেখার সৌভাগ্য হয়েছে। তেমনই ভারত ‘এ’ দলের হয়ে খেলতে এসে দ্রাবিড় স্যরের বেশ কিছু মূল্যবান পরামর্শ আমাকে সাহায্য করেছে।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘ইনসুইং খেলতে আমার বেশ সমস্যা হত। বুঝতে পারছিলাম না অসুবিধার কারণ কী! লক্ষ্মণ স্যর দেখিয়ে দেন যে, আমার ব্যাট গালি থেকে আসছে। তাই ব্যাট ও প্যাডের মধ্যে বেড়ে যাচ্ছে ফাঁক। প্রথম স্লিপ থেকে ব্যাট আনার পরে সেই অসুবিধা কমে গিয়েছে। আর ইনসুইং বা রিভার্স সুইং খেলতে সমস্যা হচ্ছে না।’’
আর দ্রাবিড়ের থেকে কী শিখলেন তরুণ ব্যাটসম্যান? ঈশ্বরনের উত্তর, ‘‘দ্রাবিড় স্যর সব সময় একটি কথা বলেন, কখনও নিজের প্রতি আস্থা হারাবে না। মনে রাখবে ভারতের সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তুমি একজন। ওঁর সঙ্গে কথা বলে এমনিতেই মনের জোর দ্বিগুণ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে উইকেট কামড়ে পড়ে থাকার রসদও তাঁর থেকে রপ্ত করা।’’
ভারতের দুই সেরা ব্যাটসম্যানের পাশাপাশি আরও একজন রয়েছেন, যিনি নেপথ্যে থেকে ঈশ্বরনের উন্নতিতে বড় ভূমিকা নিয়েছেন। তিনি বাংলা দলের ফিজিক্যাল ট্রেনার সঞ্জীব দাস। অফ-সিজন বলে কিছু নেই ঈশ্বরনের। সারা বছর ধরে চলে ফিটনেস ট্রেনিং। যখন কোনও ম্যাচ থাকে না, তখন প্রত্যেক দিন সকালে সঞ্জীবকে ফোন করেন ঈশ্বরন। দু’জনে মিলে চলে যান রবীন্দ্র সদন লাগোয়া একটি জিমে। সেখানেই নিয়মিত ফিটনেস ট্রেনিং করেন বাংলার ওপেনার।
ঈশ্বরন বলছিলেন, ‘‘আমার উন্নতির পিছনে সঞ্জীবদার প্রচুর অবদান রয়েছে। ওঁর সঙ্গে নিয়মিত ফিটনেস ট্রেনিং করে এই জায়গায় পৌঁছেছি। এখন রানিং বিটউইন দ্য উইকেটসও অনেক দ্রুত হয়েছে।’’
সঞ্জীবের থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গত মরসুমের শেষে ঈশ্বরনের গতি ও শক্তি বাড়ানোর ট্রেনিং করানো হয়েছে। সঞ্জীব বলছিলেন, ‘‘ওর ‘রিয়্যাকশন এবিলিটি’ (দ্রুত নড়াচড়া করার ক্ষমতা), ‘পাওয়ার এনহ্যান্সিং’ (শক্তিবৃদ্ধি)-এর উপর সব চেয়ে বেশি জোর দিয়েছি। এ মরসুমেও সেটাই চালিয়ে যাব।’’
ভারতীয় টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়ার স্বপ্নে কতটা বিশ্বাসী ঈশ্বরন? তরুণ ওপেনারের উত্তর, ‘‘স্বপ্ন তো রয়েইছে। সেটা বাস্তবায়িত করার দায়িত্ব আমারই। আপাতত নিয়মিত রান করে যেতে চাই। বাকিটা নির্বাচকদের হাতে। কাজের প্রতি যদি আমি সৎ থাকি, সুযোগ আসবেই।’’
আকাশকে নিয়ে উদ্বেগ: অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় ওয়ান ডে প্রতিযোগিতায় শুক্রবার ওড়িশার বিরুদ্ধে নামছে বাংলা। গত ম্যাচে কর্নাটকের বিরুদ্ধে ২৫ রানে হারে ঋত্বিক রায়চৌধুরীর দল। কিন্তু ওড়িশার বিরুদ্ধে পয়েন্ট নষ্ট করলে সমস্যায় পড়তে হবে বাংলাকে। সেই সঙ্গে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে পেসার আকাশ দীপের কুঁচকিতে চোট। দ্বিতীয় ম্যাচে অনিশ্চিত তিনি।
গত ম্যাচের সব ভুল শুধরেই এ ম্যাচে নামতে চায় সৌরাশিস লাহিড়ীর দল। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘চার দিনের ম্যাচে প্রত্যেকেই নিজেদের প্রমাণ করেছে। কিন্তু ওয়ান ডে-র প্রথম ম্যাচে আমাদের ব্যাটিং বিভাগে সমস্যা দেখা গিয়েছে। গত বারের রানার্স আমরা। তাই দলের উপর থেকে ভরসা হারাচ্ছি না।’’
কর্নাটক অনূর্ধ্ব-২৩ দলে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, দেবদূত পাড়িক্কালের মতো তারকা ছিলেন। ওড়িশায় যদিও বড় নাম নেই। তবুও এ সব নিয়ে ভাবতে চান না সৌরাশিস। তাঁর কথায়, ‘‘ওয়ান ডে ফর্ম্যাটে কোনও দলকেই ছোট করে দেখা উচিত নয়।