নাদালের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ফ্রান্সের কিছু সাইক্লিস্ট। ফাইল ছবি।
রাফায়েল নাদাল কি ডোপিং করে ফরাসি ওপেন জিতেছেন? এমনই প্রশ্ন উঠছে খোদ ক্রীড়াবিদদের থেকে। ফ্রান্সের কয়েকজন সাইক্লিস্টের তোলা এই প্রশ্নকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
ফরাসি ওপেন জয়ের পরেই নাদাল জানান, পায়ের অসহ্য যন্ত্রণা কমাতে ইঞ্জেকশন নিতে হয় তাঁকে। চিকিৎসক তাঁর পায়ের চোট লাগা জায়গা ইঞ্জেকশন দিয়ে অসাড় করে রাখেন। সেই ইঞ্জেকশন নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক ক্রীড়াব্যক্তিত্ব। তাঁরা সবাই সাইক্লিস্ট। তাঁদের দাবি, সাইক্লিংয়ে ব্যথা কমানোর এমন ইঞ্জেকশন নিষিদ্ধ। এই ধরনের ওষুধে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি ডোপিং এজেন্সির (ওয়াডা) নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, তবে কি বিভিন্ন খেলার জন্য ওয়াডার ডোপিংয়ের সূত্র ভিন্ন? না কি নাদাল ডোপিং করেই ১৪তম ফরাসি ওপেন জিতেছেন?
ফরাসি ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডের পর থেকেই পায়ে ইঞ্জেকশন নিয়ে খেলেন নাদাল। ফ্রান্সের প্রথম সারির সাইক্লিস্ট গুইলাম মার্টিন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘যদি কোনও সাইক্লিস্ট এমন করত, তা হলে কী হত! সাইক্লিংয়ে এই ধরনের ইঞ্জেকশন অনেক আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেউ এমন ইঞ্জেকশন নিলে বলা হবে, সে ডোপিং করেছে। কারণ আমাদের খেলাটায় এরকমই একটা সংস্কৃতি বা আবহ গড়ে তোলা হয়েছে।’’ কটাক্ষের সুরে মার্টিন আর বলেছেন, ‘‘সকলেই নাদালের প্রশংসা করছেন। বলছেন, তীব্র যন্ত্রণা নিয়েও কতদূর পর্যন্ত গিয়েছে ও। আশা করব ইব্রাহিমোভিচও এ বার ওর হাঁটুর ব্যথার ইঞ্জেকশন নিয়ে কিছু বলবে।’’ মার্টিনের যুক্তি, ‘‘সাইক্লিং এবং টেনিস প্রায় একইরকম শারীরিক পরিশ্রমের খেলা। একই রকম সহনশীলতা প্রয়োজন হয়। সুতরাং একই রকম ওষুধ কেন ডোপিংয়ের আওতাভুক্ত হবে না!’’
ফ্রান্সের আরও এক খ্যাতনামী সাইক্লিস্ট থিবাট পিনোট টুইটে লিখেছেন, ‘নাদাল সর্বত্রই নায়কের মর্যাদা পাচ্ছে। কিন্তু ব্যথা কমানোর জন্য নাদাল যা করেছে, সেটা তো আমাদের খেলায় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দুর্ভাগ্যজনক এই বিষয়টা কি নিন্দনীয় নয়? আমার কাছে বিষয়টা অত্যন্ত হতাশার।’
ফ্রান্সের সাইক্লিস্টরা নাদালের বিরুদ্ধে ডোপিংয়ের অভিযোগ তোলার চেষ্টা করলেও, তা নাকচ করে দিয়েছে ওয়াডা। সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল অলিভিয়ার নিগলি বলেছেন, ব্যথা কমানোর ইঞ্জেকশন নিষিদ্ধ তালিকায় নেই। ১৩টা ফরাসি ওপেন যে ইঞ্জেকশন ছাড়াই জিতেছে, ১৪তম খেতাবের জন্য তার ডোপিং করার দরকার নেই।
নিগলি বলেছেন, ‘‘নিষিদ্ধ তালিকায় সেই ওষুধগুলোকেই রাখা হয়, যেগুলো পারফরম্যান্সকে প্রভাবিত করতে পারে। ওষুধগুলো শুধু শরীরের জন্যই ক্ষতিকর নয়, খেলাধুলোর নীতির বিরোধী। অবশ করার ইঞ্জেকশন কখনই নিষিদ্ধ তালিকায় নেই। এই ধরনের ইঞ্জেকশন শরীরে কোনওরকম উত্তেজনা তৈরি করে না। তাই এই প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক। অবশ করার ইঞ্জেকশন পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে পারে না।’’
ওয়াডা কর্তা আরও বলেছেন, ‘‘নীতি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। এক জন সেরা মানের ক্রীড়াবিদের কি ইঞ্জেকশন নিয়ে খেলা উচিত? এই প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। সেটাও চিকিৎসক এবং চিকিৎসা নীতির বিষয়। ইঞ্জেকশনই নাদালকে ১৪তম ফরাসি ওপেন জিতিয়েছে, এটা মনে করার কোনও কারণ থাকতে পারে না।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।