বন্ধুত্ব: থিমকে বুকে টেনে নিলেন পরাস্ত জেরেভ (বাঁ দিকে)। —ছবি এএফপি।
ঠিক আগের রাউন্ডেই রাফায়েল নাদালের মতো চ্যাম্পিয়নকে ছিটকে দিয়েছিলেন। কিন্তু শুক্রবার সেমিফাইনালে নেমে প্রথম সেটেই হারের পরে তাঁর ভক্তরা আশঙ্কায় ছিলেন, এখানেই না শেষ হয়ে যায় ২৬ বছর বয়সি অস্ট্রীয় তরুণের অভিযান। কিন্তু ভক্তদের আশঙ্কা দূর করে পরের তিন সেটে ম্যাচ ও ফাইনালে ওঠার পথ পরিষ্কার করে দিলেন ডমিনিক থিম। ‘বিগ থ্রি’ অর্থাৎ রজার ফেডেরার, রাফায়েল নাদাল এবং নোভাক জোকোভিচের পরবর্তী প্রজন্মের আর এক উঠতি তারকা জার্মানির আলেকজান্ডার জেরেভকে ৩-৬, ৬-৪, ৭-৬ (৭-৩), ৭-৬ (৭-৪) হারিয়ে খেলোয়াড় জীবনে প্রথম অস্ট্রলীয় ওপেন ফাইনালে উঠলেন তিনি। রবিবার খেতাবী লড়াইয়ে থিম মুখোমুখি হবেন জোকোভিচের।
বৃহস্পতিবারই ফেডেরারকে স্ট্রেট সেটে হারিয়ে ফাইনালে ওঠা জোকোভিচ নিঃসন্দেহে অষ্টম বার মেলবোর্ন পার্কে খেতাব জয়ের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। তবে থিমও আশা ছাড়ছেন না। ‘‘অবিশ্বাস্য একটা ম্যাচ খেললাম, দুটো টাইব্রেকার, এত কঠিন, এত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হল। এক সময় প্রায় অসম্ভবই মনে হচ্ছিল আমার প্রতিপক্ষকে হারানো,’’ ফাইনালে ওঠার পরে বলেন থিম। যিনি অস্ট্রিয়ার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে মেলবোর্ন পার্কে ফাইনালে উঠলেন। তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘অস্ট্রেলীয় ওপেনের ফাইনালে ওঠাটা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। নতুন মরসুম আমার জন্য দুরন্ত ভাবেই শুরু হল।’’ পাশাপাশি ফাইনালে জোকোভিচের চ্যালেঞ্জ সামলানো নিয়ে থিমের মন্তব্য, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার রাজা নোভাক। এখানে খেলতে ও খুব স্বচ্ছন্দ বোধ করে। বহু বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় ও সেরাটা দিয়ে আসছে। তবে আমাকেও চেষ্টা করতে হবে। আমিও তৈরি।’’
এর আগে দু’বার ফরাসি ওপেনের ফাইনালে উঠেছেন থিম। কিন্তু গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা হয়নি। দু’বারই হেরেছেন নাদালের কাছে। তবে সেই হার থেকে তিনি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন সেটাই কাজে এল শুক্রবার সেমিফাইনালে। চাপে পড়লেও কখনও ভেঙে পড়েননি তিনি তিন ঘণ্টা ৪২ মিনিটের লড়াইয়ে। ঠান্ডা মাথায় প্রতিপক্ষকে সামলে ফাইনালে ওঠার পরে থিম আরও বলেন, ‘‘কোয়ার্টার ফাইনালে রাফার বিরুদ্ধে চার ঘণ্টা ১০ মিনিট খেলেছি। ওকে হারানো প্রচণ্ড কঠিন ছিল। সেই ম্যাচের ধকল সামলে ওঠা সোজা ছিল না। তবে এক বার দর্শক-ঠাসা এ রকম স্টেডিয়ামের সামনে নামার পরে অ্যাড্রিনালিনের ক্ষরণ টের পাচ্ছিলাম। তবুও একটু সমস্যা হচ্ছিল প্রথম সেটে।’’
আরও পড়ুন: আজ অন্য ফাইনাল দুই বিস্ময়-কন্যার
প্রথম গেমেই থিমের সার্ভিস ভেঙে দিয়েছিলেন জেরেভ। দুটো ব্রেক পয়েন্ট বাঁচিয়েও গেমটা হাতছাড়া হওয়া আটকাতে পারেননি। এর পরেই কিছুক্ষণের জন্য খেলা থেমে ছিল বৃষ্টির জন্য। স্টেডিয়ামের ছাদ ঢেকে দেওয়ার পরে নিখুঁত সার্ভিসের জোরে থিমের সার্ভিস ভেঙে দ্রুত প্রথম সেট দখল করে ফেলেন জেরেভ। টেনিস সার্কিটে বরিস বেকারের দেশের তরুণ পূর্বসুরির মতোই বুম বুম সার্ভিসের জন্য পরিচিত। কিন্তু ২২ বছর বয়সি জার্মান তারকা দ্বিতীয় সেটে ছন্দ হারিয়ে ফেলেন। দুটো ডাবল ফল্ট করে বসেন তৃতীয় গেমে। যে সুযোগে ২-১ এগিয়ে যান থিম। জেরেভ পাল্টা থিমের সার্ভিস ভেঙে সামলানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু থিম ততক্ষণে ছন্দে আসতে শুরু করেছেন। প্রতিপক্ষের সার্ভিস আবার ভেঙে তিনি দ্বিতীয় সেট দখল করে নেন।
আরও পড়ুন: নির্ভীক নোভাক
তৃতীয় সেটে ৯ মিনিটের জন্য খেলা বন্ধ ছিল বেসলাইনের কাছে আলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। যে জন্য জেরেভকে অসন্তুষ্ট লাগছিল। এখান থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ থিমের হাতে আসতে শুরু করে। কী ভাবে? তাও ম্যাচের পরে ফাঁস করেন থিম। তখন স্টেডিয়ামে দর্শকদের বিনোদনের জন্য নিল ডায়মন্ডের বিখ্যাত গান ‘সুইট ক্যারোলিন’ চলছিল। থিম বলেন, ‘‘গানটা আমার খুব পছন্দ। মনে হচ্ছিল তখন যেন অস্ট্রিয়ায়, বন্ধুদের সঙ্গে ছুটিতে স্কি করছি। কারণ, স্কি করার সময় আমার বন্ধুরা এই গানটাই সব সময় বাজাত। তাই ওই সময়টা কোর্টে চাপ কাটাতে খুব সাহায্য করেছে।’’
জেরেভকে দেখে তখন মনে হচ্ছিল ছন্দ হারিয়ে ফেলেছেন। তবে জুনিয়র টেনিস থেকেই থিমের ভাল বন্ধু জেরেভ অবশ্য হার মানতে না চেয়ে পাল্টা থিমের সার্ভিস ভেঙে দেন, সেট গড়ায় টাইব্রেকে। যেখানে ঠাণ্ডা মাথায় সেট দখল করে নেন তিনি। চতুর্থ সেটেও পাল্লা দিয়ে থিমের শটের জবাব দিয়ে যাচ্ছিলেন জেরেভ। যে কারণে এই সেটও টাইব্রেকে গড়ায়। যেখানে নিজের অভিজ্ঞতা উজাড় করে দিয়ে সেট ও ম্যাচ দখল করে নেন থিম। হারলেও রবিবারের ফাইনালে কিন্তু বন্ধুকেই এগিয়ে রাখছেন জেরেভ। ‘‘যদি শারীরিক ভাবে ফিট থাকে, ফাইনালে জেতার সুযোগ আছে থিমের। এটা ঠিক ওকে কয়েকটা লম্বা ম্যাচও খেলতে হয়েছে। তবে এখন ও জীবনের সেরা টেনিস খেলছে,’’ বলেছেন জেরেভ।