ফাইল চিত্র।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল নিয়ে চর্চা বাড়ছে ক্রিকেট মহলে। প্রশ্ন উঠছে, ইংল্যান্ডের মেঘলা আবহাওয়ায় কোন দল বেশি সুবিধে পাবে? ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদিদের কী ভাবে সামলাবেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা? প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক দিলীপ বেঙ্গসরকর ও প্রাক্তন বাঁ-হাতি পেসার কার্সন ঘাউড়িও স্পষ্ট করলেন নিজেদের মত। দেখা গেল, দু’জনে রয়েছেন বিপরীত মেরুতে।
বেঙ্গসরকর মনে করেন, সাউদিদের দাপট সামলানোর জন্য বিশেষ দায়িত্ব নিতে হবে ওপেনারদের। অতিরিক্ত সমীহ করলে ব্যাটসম্যানদের উপরে চাপ বাড়াতে পারেন বোল্টরা। তাই শুভমন গিল, রোহিত শর্মাদের আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলার পরামর্শ দিচ্ছেন বেঙ্গসরকর। প্রাক্তন অধিনায়ক জানিয়েছেন, প্রথম কুড়ি ওভার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ডিউকস বল তখন নতুন থাকে। শুরুর দিকে সুইংয়ের সঙ্গেই সেলাইয়ে বল পড়ে নড়াচড়া করতে পারে। সেটাই সব চেয়ে ভয়ঙ্কর। তাঁর আরও মত, প্রথম ২০ ওভার সামলে দিতে রোহিত, শুভমন ও চেতেশ্বর পুজারার বাড়তি দায়িত্ব নেওয়া উচিত। তাতে পরের দিকের ব্যাটসম্যানেরা সহজেই রান করতে পারবেন।
কার্সন ঘাউড়ি যদিও জানিয়েছেন, বোল্টদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হওয়াটা বোকামো হবে। ভারত যা করেছিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। বোল্টকে সমীহ না করেই প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন বিরাট। অপেক্ষা করেননি বাঁ-হাতি পেসারের সুইংয়ের। ইংল্যান্ডের পরিবেশে যতটা সম্ভব দেরি করে খেলা উচিত। যাতে শেষ পর্যন্ত বল দেখতে পারেন ব্যাটসম্যান। শেষ মুহূর্তে বল সেলাইয়ে পড়ে নড়াচড়া করলেও যাতে সমস্যা না হয়। ঘাউড়ির মত, এই দক্ষতা রয়েছে পুজারার। এতটাই দেরিতে উনি খেলেন যে, সেই জায়গা থেকে বিপদ ঘটার সুযোগ অনেকটাই কমে যায়।
ঘাউড়ির সঙ্গে যদিও একমত হতে পারেননি বেঙ্গসরকর। আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, ‘‘ইংল্যান্ডে যে কোনও টেস্ট ম্যাচে প্রথম বল থেকে আক্রমণ করা যায় না। তবে ডিউকস বল এতটাই নড়াচড়া করে যে, রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি রান করার কথাও ভাবতে হবে। না হলে একটা সময়ের পরে দেখা যাবে উইকেটও পড়ছে, রানও হচ্ছে না।’’ যোগ করেন, ‘‘প্রথম কুড়ি ওভার বিপক্ষকে সমীহ করা উচিত। নতুন বলের চকচকে ভাব তুলে ফেলার দায়িত্ব নিতে হবে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে। বিদেশের মাটিতে সফল হয়েছে শুভমন। ওপেনিংয়ে ভারতের অন্যতম অস্ত্র ছেলেটা। রোহিত এখনও বিদেশের মাটিতে সাফল্য পায়নি। টেস্ট ফাইনাল ওর কাছে নিজেকে তুলে ধরার অনেক বড় মঞ্চ। তিন নম্বরে নেমে পুজারাকেও প্রথম কুড়ি ওভারের বিপদ কাটাতে হবে।’’ যোগ করেন, ‘‘তার পর থেকে যারাই ব্যাট করতে আসবে, সহজেই রান করতে পারবে। এমনিতেই সাউদাম্পটনের পিচ শুকনো থাকে। দ্বিতীয় দিন থেকেই ব্যাটসম্যানদের স্বর্গ হয়ে ওঠে।’’
বেঙ্গসরকর আরও বলেন, ‘‘মাঝের সারিতে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে পন্থ। শেষ দু’টি টেস্ট সিরিজে ছেলেটা এমন তিনটি ইনিংস খেলেছে, যা সারা জীবন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেও অনেকে পারে না। ভারতের সাফল্যের নেপথ্যে আমার বাজি ঋষভ।’’ ঘাউড়ি আবার বিশ্বাস করেন, কেউ যদি পার্থক্য গড়তে পারেন, তবে তিনি পুজারা। বলেন, ‘‘সৌরাষ্ট্রের কোচ ছিলাম অনেক দিন। কাছ থেকে দেখতাম, কতটা দেরিতে খেলত পুজারা। বল যতই নড়াচড়া করুক, ওর উইকেট পেতে গেলে বোলারকে বাড়তি পরিশ্রম করতেই হবে। ও একমাত্র ব্যাটসম্যান যাকে আউট করতে হাঁপিয়ে যায় অনেকে। বোল্ট, সাউদিদের হতাশ করার জন্য পুজারাই যথেষ্ট।’’
সাউদাম্পটনে পুজারার পরিসংখ্যান খারাপ নয়। দু’টি টেস্টে রান ১৬৩। গড় ৫৪.৩৩। এখনকার ভারতীয় দলে সাউদাম্পটনে সব চেয়ে বেশি রান যদিও বিরাট কোহালির। দু’ম্যাচে ১৭১। রাহানের দুই ম্যাচে সংগ্রহ ১৬৮। গড় পঞ্চাশের আশপাশে।
বেঙ্গসরকর ও ঘাউড়ি একটা ব্যাপারে অবশ্য একমত। দু’জনই মনে করেন, নিউজ়িল্যান্ডের চেয়ে ভারতীয় পেস বিভাগ বেশি শক্তিশালী। বেঙ্গসরকরের কথায়, ‘‘মহম্মদ শামি, যশপ্রীত বুমরা ও ইশান্ত শর্মার হাতে যেমন সুইং আছে, ঠিক ততটাই কাবু করে দিতে পারে গতিতে। ইশান্ত বাড়তি সুবিধে পায় ওর উচ্চতার জন্য। বিপক্ষ পেসারদের অস্ত্র তো শুধুই সুইং।’’ ঘাউড়ির কথায়, ‘‘ইংল্যান্ডের পরিবেশে ভারতীয় পেস বিভাগের সব চেয়ে বড় অস্ত্র শামি। তবে আমাদের বোলারেরা ভাল পরিবেশ দেখে যেন প্রভাবিত হয়ে অতিরিক্ত কিছু করতে না যায়। ব্যাটসম্যানকে ড্রাইভ করার লোভ দেখালেই পরিবেশের সুবিধে পাবে শামিরা।’’