সেই ছিয়াশিতে মারাদোনাকে দেখার পর থেকেই বাংলায় আর্জেন্তিনার সমর্থকের সংখ্যা কম নয়। বিশ্বকাপ ফাইনালে হারের দুঃখ ভুলতে যাঁরা তাকিয়ে ছিলেন বুধবারের জার্মানি-আর্জেন্তিনা ফ্রেন্ডলির দিকে। যেখানে মেসিহীন আর্জেন্তিনাকে দি মারিয়া নিজের কাঁধে তুলে জেতানোর পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শপিং মল, বাজার, কফি শপে ফুটবল পাগল বাঙালির অন্যতম আলোচনা— দি মারিয়া থাকলে বিশ্বকাপ ফাইনালের ফল অন্য রকম হত।
আর্জেন্তিনা, মারাদোনা, মেসির জন্য আমার হৃদয়ে একটা বড় আসন পাতা থাকলেও এই আলোচনার সঙ্গে আমি কিন্তু এক মত নই। আমি মনে করি না, দি মারিয়া থাকলেই ১৩ জুলাই মারাকানা স্টেডিয়ামে মেসির হাতে বিশ্বকাপ উঠত। মেসি-দি মারিয়া জুটি নিঃসন্দেহে ভয়ঙ্কর। কিন্তু তখন জার্মান মেশিন যে ভাবে এগোচ্ছিল, আটকানো কঠিন হত।
তা বলে কিন্তু কোনও ভাবেই জোয়াকিম লো-র দলের বিরুদ্ধে আর্জেন্তিনার এই ৪-২ জয়কে আমি খাটো করছি না। শুধু এটাই বলব, ওটা ছিল বিশ্বকাপ ফাইনাল। আর এটা ফিফা ফ্রেন্ডলি। ওটা ছিল কম্পিটিশন। আর এটা আরও একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
আমার মনে আছে ছিয়াত্তর সালে লিগ-শিল্ড জেতার পর আমরা বার্নপুরে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে গিয়ে বার্নপুর ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে জিততে পারিনি। ড্র করেছিলাম। তার মানে কি আমাদের সেই ট্রফিগুলো ফ্লুকে এসেছিল? এখানেও ঠিক সেটাই হয়েছে। যারা বিশ্বকাপে ব্রাজিলের মাটিতে ব্রাজিলকে ৭-১ হারায়, রোনাল্ডোর পর্তুগালকে দাপুটে ফুটবল খেলে ৪ গোল দিয়ে বসে, তাদের জেতার খিদে, একাগ্র মানসিকতার সামনে দি মারিয়া পড়লে ফাইনালের ফল কখনই উল্টে যেত বলে মনে করি না। হয়তো ম্যাচটা আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হত।
আর দি মারিয়ার এই অতিমানবিক পারফরম্যান্স সম্পর্কে এটাই বলব যে ফাইনালে না খেলার দুঃখ, রিয়াল ছাড়ার মনঃকষ্ট ওকে এই ম্যাচের জন্য সংকল্পবদ্ধ করে তুলেছিল। আমি দি মারিয়া। বিশ্বকাপে তোমাদের বিরুদ্ধে খেলিনি। আর তার পর রিয়াল আমাকে ছেড়ে ভুল করল এটা বোঝাতেই সম্ভবত আরও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে নেমেছিল আর্জেন্তিনার উইঙ্গার। যার ফল তিনটে গোলের পাস বাড়ানো। আর নিজের গোল।