FC Goa

প্রিয় ব্যাডমিন্টন ছেড়ে ফুটবলের নতুন ‘সুপারম্যান’ ধীরজ

সপ্তম আইএসএল চলাকালীন সবুজ-মেরুন ছেড়ে এফসি গোয়ায় সই করার পরেই জীবন বদলে যায় চার বছর আগে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের গোলরক্ষকের।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

গোয়া শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৪১
Share:

চর্চায়: এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নজর কেড়েছেন ধীরজ টুইটার

অনেক স্বপ্ন নিয়ে কেরল ব্লাস্টার্স ছেড়ে ২০১৯-২০ মরসুমে এটিকে-তে যোগ দিয়েছিলেন ধীরজ সিংহ। কিন্তু সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র একটি ম্যাচে। এটিকে-র সঙ্গে মোহনবাগানের সংযুক্তকরণের পরেও ছবিটা বদলায়নি।

Advertisement

সপ্তম আইএসএল চলাকালীন সবুজ-মেরুন ছেড়ে এফসি গোয়ায় সই করার পরেই জীবন বদলে যায় চার বছর আগে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের গোলরক্ষকের। শনিবার এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় ম্যাচে ধীরজের দু’হাতেই শেষ হয়ে গিয়েছিল আল ওয়াহাদার জয়ের স্বপ্ন। ম্যাচের পরে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ক্লাবের কোচ বার্সেলোনায় ফ্র্যাঙ্ক রাইকার্ডের প্রাক্তন সহকারী হেঙ্ক টেন কাট বলেছেন, ‘‘ধীরজ অসাধারণ গোলরক্ষক। সংযুক্ত সময়ে যে ভাবে ও গোল বাঁচাল, তা অবিশ্বাস্য।’’

উচ্ছ্বসিত এফসি গোয়া কোচ খুয়ান ফেরান্দোও। ধীরজের তিনি নতুন নামকরণ করেছেন ‘সুপারম্যান’! খুয়ান বলেছেন, ‘‘আল ওয়াহাদা দু’-তিনটি দুর্দান্ত সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু ধীরজ সুপারম্যানের মতো দলকে রক্ষা করেছে।’’

Advertisement

নাটকীয় প্রত্যাবর্তনের মতোই চমকপ্রদ ২০ বছর বয়সি ধীরজের গোলরক্ষক হয়ে ওঠার কাহিনি। ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। সারা সপ্তাহ পড়ে থাকতেন ব্যাডমিন্টন কোর্টে। ফুটবল খেলতেন শুধু রবিবার!

ধীরজের জন্ম মণিপুরের মইরাংথেম গ্রামে। বাবার ছোটখাটো ব্যবসা ছিল। ছেলে যাতে লেখাপড়া শিখে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, তার জন্য মাত্র আট বছর বয়সেই ধীরজকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন গ্রাম থেকে প্রায় চার ঘণ্টা দূরের একটি আবাসিক স্কুলে। সেখানেই ব্যাডমিন্টনের প্রতি আকৃষ্ট হন ভারতের প্রতিশ্রুতিমান এই গোলরক্ষক। শনিবার স্কুল ছুটির পরে মইরাংথেম ফিরতেন। রবিবার সকাল হলেই বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল নিয়ে নেমে পড়তেন। গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলার সময় চোখে পড়ে যান সুরেন্দ্র সিংহের। তিনি মইরাংথেমে ছোটদের ফুটবল শেখান। ধীরজকে নিজের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হওয়ার প্রস্তাব দেন সুরেন্দ্র। সেই সময় রীতিমতো সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলেন গোয়া গোলরক্ষক। ধীরজ বলেছিলেন, ‘‘বাবা আমাকে কখনওই স্কুল ছাড়ার অনুমতি দিতেন না। সুরেন্দ্র স্যরকে সমস্যার কথা জানালাম। উনি বলছিলেন, স্কুল ছাড়ার দরকার নেই। তুমি শুধু রবিবার সকালেই আমার কাছে অনুশীলন করবে।’’ শুরু হল ধীরজের জীবনের নতুন অধ্যায়। মণিপুরের বিভিন্ন ফুটবল প্রতিযোগিতায় খেলতে খেলতেই রাজ্য দলে নির্বাচিত হন তিনি। সুযোগ পান সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের অ্যাকাডেমিতে। ব্যাডমিন্টন ভুলে ধীরজের চোখে তখন শুধুই গোলরক্ষক হওয়ার স্বপ্ন। ব্যাডমিন্টন খেলা অবশ্য এখনও ছাড়েননি গোয়ার প্রহরী। ফিটনেস বাড়াতে মাঝেমধ্যেই র‌্যাকেট হাতে কোর্টে নেমে পড়েন পেতর চেহ‌্-র ভক্ত ধীরজ।

এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের তৃতীয় ম্যাচে গোয়া মঙ্গলবার খেলবে গত বারের রানার্স ইরানের পার্সিপোলিস এফসি-র বিরুদ্ধে। রবিবার সন্ধ্যায় গোয়া থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে ধীরজ বললেন, ‘‘পার্সিপোলিস অন্যতম সেরা দল। লক্ষ্য থাকবে নিজেদের স্বাভাবিক ফুটবল খেলা।’’ এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স কি এটিকে-মোহনবাগানের উপেক্ষার জবাব? ধীরজ বললেন, ‘‘জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত থেকে শিক্ষা নিয়েছি। এটিকে-মোহনবাগানে খেলার সুযোগ না পেলেও আমি অনেক কিছু শিখেছি।’’ কী রকম? ধীরজ যোগ করলেন, ‘‘জীবনের সব চাহিদা কখনওই পূরণ হয় না। কিন্তু সব সময় নিজেকে তৈরি রাখতে হবে। সুযোগ পেলেই যাতে সদ্ব্যবহার করতে পারি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement