জুটি: কোচ পকন্যালের সঙ্গে কনওয়ে (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।
বছর চারেক আগে ‘ওয়েলিংটন ফায়ারবার্ডস’-এর হয়ে একটা প্রস্তুতি ম্যাচে খেলতে নেমেছিলেন ২৫ বছরের এক তরুণ। সদ্য দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে নিউজ়িল্যান্ডে এসেছেন। ওয়েলিংটনের কোচ তখন মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে ম্যাচটা দেখছিলেন। একটা ছবির মতো কভার ড্রাইভ দেখার পরে বিনা দ্বিধায় ক্লাবের চূড়ান্ত দলে ছেলেটার নাম লিখে নেন কোচ গ্লেন পকন্যাল।
বছর চারেক পরে লর্ডসে অভিষেক টেস্টে ঐতিহাসিক ডাবল সেঞ্চুরি করে ডেভন কনওয়ে ক্রিকেটবিশ্বকে বুঝিয়ে দিলেন, সে দিন তাঁর কোচ ভুল সিদ্ধান্ত নেননি। এই কনওয়েকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা এখন হাত কামড়াবে। নিউজ়িল্যান্ড স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। আর ভারত চিন্তায় পড়তে পারে। ১৮ জুন থেকে সাউদাম্পটনে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে এই কনওয়েকেই যে সামলাতে হবে যশপ্রীত বুমরা-আর অশ্বিনদের।
কনওয়ের কোচের কথা শুনলে সেই চিন্তা আর একটু বাড়তে পারে। ওয়েলিংটন থেকে কনওয়ের কোচ গ্লেন পকন্যাল এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কী ভাবে বুমরা, শামি, অশ্বিনদের জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছেন তাঁর ছাত্র। ‘‘ভারতীয় বোলিং আক্রমণের ভারসাম্য আর বৈচিত্রটা দারুণ। নতুন বলে যেমন সুইং করাতে পারে, পুরনো বলে রিভার্সটাও ভাল করায়। তার উপরে বিশ্বমানের স্পিনার আছে। যে কারণে আমাদের প্রস্তুতিটাও বিশেষ ধরনের হয়েছে,’’ বলছিলেন কোচ। কী সেই প্রস্তুতি? জানা গিয়েছে, অনুশীলনে বিভিন্ন ধরনের বল ব্যবহার করেছেন কনওয়ে এবং তাঁর কোচ গ্লেন। কোনও বল একেবারে নতুন। কোনও বল আকারে ছোট। কোনও বল আবার পুরনো হয়ে গিয়েছে। আর কোনও বলের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, নানা জায়গায় ভেঙে গিয়েছে পর্যন্ত।
নতুন বল সুইং করবে, পুরনো বল রিভার্স সুইং করবে, স্পিন করবে। আবার ভাঙা বল যে কী করবে, সেটা কারও জানা নেই। ‘‘অনুশীলনে প্রত্যেকটা বল আলাদা আলাদা আচরণ করে। যে কারণে ব্যাটসম্যানকে সব রকম পরিস্থিতি সামলানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। এই ভাবেই আমরা কনওয়েকে তৈরি করেছি। যাতে যে কোনও পিচে, যে কোনও বোলারের মোকাবিলা করতে পারে।’’ প্রশ্নের উত্তরে বলছিলেন গ্লেন। পাশাপাশি পিচে বিড়ালের বর্জ্য ছড়িয়ে স্পিনের বিরুদ্ধে অনুশীলন তো ছিলই। গ্লেন জানাচ্ছেন, এই বিশেষ ধরনের অনুশীলনের পদ্ধতিটা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেই আমদানি করেছেন কনওয়ে।
প্রস্তুতি এবং পরিশ্রম— এই দুটো মন্ত্রই সারাক্ষণ জপ করেন কনওয়ে। একটা অভিনব কাহিনিও শোনা গেল কনওয়েকে নিয়ে। তিনি আর চায়নাম্যান স্পিনার তাবরাইজ় শামসি দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে একই দলের হয়ে খেলতেন। একই ঘরে থাকতেন। জানা যায়, শামসিকে কনওয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমি বাসন পরিষ্কার করে রাখব। তুমি শুধু অনুশীলনে আমাকে বাড়তি কয়েক ওভার বল কোরো।’’
গ্লেন বলছিলেন, ক্রিকেটের প্রতি কতটা দায়বদ্ধ হলে এ রকম কথা কেউ বলতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাড়ি-গাড়ি সব বিক্রি করে ২০১৭ সালে নিউজ়িল্যান্ডে ক্রিকেট খেলতে এসেছিলেন কনওয়ে। ওয়েলিংটনে খেলা শুরু করার পরে এ রকম কোনও ঘটনার সাক্ষী ছিলেন, যেখানে ছাত্রের ক্রিকেট প্রেম ধরা পড়েছিল?
কনওয়ের কোচের মুখে একটা ঘটনার কথা শোনা গেল। ছাত্রের সঙ্গে একটা বিশেষ অনুশীলন-পর্ব চলত গ্লেনের। যেখানে কনওয়ে আউট হয়ে গেলে তাঁকে শাস্তি পেতে হত। শাস্তিটা কী? আউট হলেই ঘরে ফিরে যেতে হবে। সে দিন আর ব্যাট করা চলবে না। ‘‘এক বার আমি ১০ বলের মধ্যে নেটে ওকে আউট করে দিই। প্রচণ্ড অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে দিন ঘরে ফিরে গিয়েছিল ডেভন। পরের দিন ফিরে এসে বলেছিল, আজ আমি পুরো নেট করে যাব,’’ বলছিলেন গ্লেন। এবং, কথামতো সে দিন দেড়ঘণ্টার নেট প্র্যাক্টিসে এক বারও আউট হওয়ার সুযোগ
দেননি কনওয়ে।
কোচ মনে করেন, স্পিনের বিরুদ্ধেও সফল হবেন তাঁর ছাত্র। কেন? এক, ৩৬০ ডিগ্রি শট খেলার ক্ষমতা আছে ডেভনের। দুই, স্পিনারদের ‘গ্রিপ’ দেখে বল ছাড়ার মুহূর্তে স্পিনটা ধরে নিতে পারেন। গ্লেনের কথায়, ‘‘নিউজ়িল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে এই ভাবেই স্পিনারদের বলটা আগাম ধরে নিতে পারে ডেভন। যার ফলে স্পিনটা বুঝে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি সময় পায়।’’
লর্ডসের ফর্ম সাউদাম্পটনেও ধরে রাখতে পারেন কি না কনওয়ে, সেটাই এখন দেখার।