একদিনের বিশ্বকাপ প্রথম বার জিতেছে ইংল্যান্ড। সেই ইংল্যান্ডেই আগামী ১ অগস্ট থেকে শুরু হতে চলেছে টেস্ট বিশ্বকাপ। জানেন কি প্রথম বার হতে চলা এই টেস্ট বিশ্বকাপ কেন হবে? কত দিন ধরে চলবে ক্রিকেটের সব থেকে দীর্ঘ ফরম্যাটের এই বিশ্বকাপ? জেনে নেওয়া যাক তার খুঁটিনাটি।
এক সময় শুধুই ছিল টেস্ট ক্রিকেট। বাড়তে থাকা জীবনের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাট পেয়েছে জনপ্রিয়তা। একদিনের ক্রিকেট ৬০ ওভার থেকে কমে ৫০ হয়েছে। এসেছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। কমেছে টেস্ট ক্রিকেটের আকর্ষণ। সেই টেস্ট ক্রিকেটে আবার মানুষকে আকৃষ্ট করতে আইসিসি-র নয়া উদ্যোগ।
২০০৯ সালে প্রথম বারের জন্য আইসিসি-র মাথায় আসে টেস্ট বিশ্বকাপের ভাবনা। সমস্ত টেস্ট খেলিয়ে দেশকে নিয়ে এক অভিনব বিশ্বকাপের পরিকল্পনা পেশ করে তারা। নাম ঠিক করা হয় ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। যা লোক মুখে হয়ে যায় টেস্ট বিশ্বকাপ।
২০১০ সালে সেই পরিকল্পনা পাশ হয় আইসিসিতে। তারা ঠিক করে, ২০১৩ সালে হবে এই বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরিবর্তে। কিন্তু আর্থিক কারণে পিছিয়ে আসে আইসিসি। তারা ইংল্যান্ডে হতে চলা এই টেস্ট বিশ্বকাপের পরিবর্তে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনের সুযোগ দেয় ইংল্যান্ডকে। যা নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয় ক্রিকেট মহলে।
২০১৩ সাল থেকে পিছিয়ে ঠিক হয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ হবে ২০১৭ সালে। কিন্তু এ বারেও তা সম্ভব হয় না। বার বার পরিবর্তিত হতে থাকে এই চ্যাম্পিয়নশিপের নিয়ম।
অবশেষে এ বছর শুরু হতে চলেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। শুরু হচ্ছে সেই ইংল্যান্ডেই। অ্যাসেজ টেস্ট সিরিজ দিয়ে শুরু হবে এই বিশ্বকাপ। দ্বিপাক্ষিক সিরিজকে আরও বেশি আকর্ষণীয় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামুলক করে তোলবার জন্য এই টেস্ট বিশ্বকাপ হতে চলেছে এক অনন্য নিয়মে।
২০১৯-এর ১ অগস্ট থেকে ২০২১-এর ৩০ এপ্রিল অবধি হওয়া সমস্ত দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হয়ে উঠবে এই বিশ্বকাপের অঙ্গ। টেস্ট ক্রিকেটে রাঙ্কিংয়ের প্রথম ৯টি দেশকে নিয়ে চলবে এই বিশ্বকাপ।
কোন দেশ কার বিপক্ষে খেলবে তা ঠিক করেছে দুই দেশের বোর্ড। ২০১৮ সালের ২০ জুন সেই তালিকা প্রকাশ করে আইসিসি। ইংল্যান্ড খেলবে সর্বাধিক ২২টি ম্যাচ। অন্যদিকে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা খেলবে ১৩টি ম্যাচ। যদিও তার ওপর নির্ভর করছে না পয়েন্টের হিসাব।
২১ মাসের এই দীর্ঘ বিশ্বকাপে প্রতিটা দেশ খেলবে ৬টি করে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। এক একটি সিরিজের মোট পয়েন্ট হবে ১২০। সিরিজের ম্যাচের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে পাল্টে যাবে প্রতি ম্যাচের পয়েন্ট বিন্যাস। অর্থাৎ সিরিজে ৩টি ম্যাচ থাকলে ম্যাচপিছু পয়েন্ট হবে ৪০, ৫টি হলে ২৪। ৬টি সিরিজ থেকে প্রতিটা দেশ সর্বাধিক সংগ্রহ করতে পারবে ৭২০ পয়েন্ট।
প্রশ্ন তা হলে কী ভাবে নির্ধারিত হবে এই বিশ্বকাপের বিজেতা? ২০২১-এর ৩০ এপ্রিলের পর পয়েন্টের হিসেবে প্রথম দুই দলের মধ্যে জুন মাসে হবে ফাইনাল। সেই ফাইনাল খেলা হবে ইংল্যান্ডে। তার মাধ্যমেই প্রথম টেস্ট বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাবে ক্রিকেট বিশ্ব।
ভারতের এই বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ২২ অগস্ট। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত মুখোমুখি হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ (বিদেশে), দক্ষিণ আফ্রিকা (দেশে), বাংলাদেশ (দেশে), নিউজিল্যান্ড (বিদেশে), অস্ট্রেলিয়া (বিদেশে) এবং ইংল্যান্ডের (দেশে)।
টেস্টের জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনতে এ এক অভিনব উদ্যোগ আইসিসি-র। পিঙ্ক বল টেস্ট, ডে-নাইট টেস্ট, টেস্ট জার্সিতে নম্বর এরকম অনেক অভিনব উদ্যোগের সঙ্গে যোগ হচ্ছে এই বিশ্বকাপ। দেখার বিষয় কতটা সফল হয় এই উদ্যোগ। সেই দিকেই নজর থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীদের।