(বাঁ দিকে) বিনেশ ফোগাট, ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
এখনই রেহাই পাচ্ছেন না ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ। নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বুধবার দিল্লি হাই কোর্টে আবেদন করেছিলেন ভারতীয় কুস্তি সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন বিনেশ ফোগাটেরা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে হওয়া এফআইআর খারিজ করার আবেদন করেছিলেন ব্রিজভূষণ। সেই মামলায় হাই কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, এ ভাবে কোনও নির্দেশ দেওয়া যায় না। তাঁকে নতুন করে আবেদন করার সময় দিয়েছেন বিচারপতি। সংবাদ সংস্থা পিটিআই এই খবর জানিয়েছে।
দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি নীনা বনশল ব্রিজভূষণের আইনজীবীকে নির্দেশ দিয়েছেন, দু’সপ্তাহের মধ্যে আবার আবেদন করতে। তিনি বলেন, “আবেদনকারী সময় চেয়েছেন। তাই তাঁকে দু’সপ্তাহ সময় দেওয়া হল।” ২৬ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি। নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে একটিই হলফনামা জমা দিয়েছিলেন ব্রিজভূষণ। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচ জন কুস্তিগিরের অভিযোগের ভিত্তিতে চার্জশিট গঠন করা হয়েছে। একটি হলফনামায় সব অভিযোগের শুনানি হয় না বলেই জানিয়েছেন বিচারপতি।
শুনানিতে বিচারপতি মৌখিক ভাবে ব্রিজভূষণকে জানিয়েছেন, তিনি চার্জশিট গঠন হওয়ার আগে আবেদন করেননি। ফলে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে তাঁকে আবেদন করতে হবে। বিচারপতি বলেন, “সব কিছুতে একটা সর্বজনীন রায় দিয়ে দেওয়া যায় না। ট্রায়াল শুরু হওয়ার আগে আপনাকে আবেদন করা করতে হত। এক বার ট্রায়াল শুরু হয়ে চার্জশিট তৈরি হওয়ার পরে এ ভাবে আবেদন করা যায় না।”
ব্রিজভূষণের আইনজীবী রাজীব মোহন শুনানিতে জানান, প্রাক্তন কুস্তিকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই। তিনি অভিযোগ করেন, ব্রিজভূষণকে ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতির পদ থেকে সরানোর জন্যই অভিযোগ করা হয়েছিল। তদন্তেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছেন তাঁরা। শুধুমাত্র যে কুস্তিগিরেরা ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তাঁদেরই বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও বৃহস্পতিবার কোনও রায় দেননি বিচারপতি। তাঁদের আবার আবেদন করতে বলা হয়েছে।
এই বছর মে মাসে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত। তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছিলেন বিচারক। দেশের কুস্তিগিরদের একাংশ যৌন হেনস্থা-সহ একাধিক অভিযোগে বিজেপির বিদায়ী সাংসদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন।
চার্জ গঠনের নির্দেশের পর যৌন হেনস্থার অভিযোগ থেকে ব্রিজভূষণের মুক্তি পাওয়ার পথ আরও কঠিন হয়েছিল। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে মোট ছ’টি মামলা হয়েছিল। তার মধ্যে পাঁচটিতেই চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। বাকি একটি মামলা খারিজ হয়ে গিয়েছিল। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ এবং ৩৫৪ডি ধারায় চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। একই সঙ্গে দ্বিতীয় অভিযুক্ত বিনোদ তোমারের বিরুদ্ধে ৫০৬ ধারায় চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক।
গত বছর ২০ জুলাই শর্তসাপেক্ষে ব্রিজভূষণের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছিল আদালত। ছ’বারের সাংসদকে শর্ত দেওয়া হয়, তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না এবং অভিযোগকারীদের কোনও রকম হুমকি দিতে পারবেন না।
ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নেমেছিলেন দেশের সেরা কুস্তিগিরদের একাংশ। আন্দোলনের প্রধান তিন মুখ ছিলেন সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়া এবং বিনেশ। এই মামলা চললেও বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন ব্রিজভূষণ। শাসকদলের প্রভাবশালী সাংসদ হওয়ার কারণেই ব্রিজভূষণ অন্যায় করে পদে থেকে গিয়েছেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের।