উচ্ছ্সিত দীপক চাহার। রবিবার নাগপুরে। ছবি টুইটার থেকে নেওয়া।
স্বপ্নের বোলিং বললেও একে কম বলা হয়। ৩.২ ওভারে সাত রান দিয়ে ছয় উইকেট! তার মধ্যে আবার রয়েছে হ্যাটট্রিক। রবিবারের নাগপুর টি২০ যেন লেখা হয়ে থাকল দীপক চাহারের নামে। তিনি হ্যাটট্রিক করেন বাংলাদেশের শাফিউল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান ও আমিনুল ইসলামকে ফিরিয়ে। ১৮তম ওভারের শেষ বলে শাফিউল আর ২০তম ওভারের প্রথম দুই বলে মুস্তাফিজুর ও আমিনুলকে ফেরান তিনি। একইসঙ্গে ৩০ রানে জেতান দলকে। যা এনে দেয় সিরিজও।
এর আগে এই ফরম্যাটে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড ছিল শ্রীলঙ্কার অজন্তা মেন্ডিসের। ২০১২ সালে হামবানটোটায় জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে আট রানে ছয় উইকেট নিয়েছিলেন এই রহস্য-স্পিনার। চাহার টপকে গেলেন তাঁকে। এই ফরম্যাটে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এখন তাঁর দখলে। এই তালিকায় দুই ও তিন নম্বরে রয়েছেন অজন্তা মেন্ডিস। ২০১১ সালে পাল্লেকেলেতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৬ রানে ছয় উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। আর তালিকায় চার নম্বরে রয়েছেন আরও এক ভারতীয়। লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চহাল ২০১৭ সালে বেঙ্গালুরুতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২৫ রানে ছয় উইকেট নিয়েছিলেন।
সার্বিক ভাবে টি-টোয়েন্টিতে দীপক চাহারের সাত রানে ছয় উইকেট চতুর্থ সেরা। সার্বিক ভাবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট মানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়াও আইপিএল-সহ বিভিন্ন দেশে হওয়া টি-টোয়েন্টি লিগ ও ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ম্যাচকে ধরা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চাপের মুখে সিরিজ জয় বোঝাল তরুণরা তৈরি
এর আগে মাত্র একজন ভারতীয়, একতা বিস্ত টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে ভারতের হয়ে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। তবে তা ছিল মহিলাদের ক্রিকেটে। পুরুষদের ফরম্যাটে দীপকই প্রথম ভারতীয় হিসেবে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে হ্যাটট্রিক করলেন। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে দ্বাদশ বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করলেন তিনি। ২০১৯ সালে এটা আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ষষ্ঠ হ্যাটট্রিক। এই বছর পুরুষদের ক্রিকেটে সব ফরম্যাট মিলিয়ে ভারতের হয়ে এটা তৃতীয় হ্যাটট্রিক। এর আগে একদিনের ফরম্যাটে মহম্মদ শামি ও টেস্টে জশপ্রীত বুমরা হ্যাটট্রিক করেছিলেন।
টেস্টে ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম হ্যাটট্রিক করেছিলেন অফস্পিনার হরভজন সিংহ। ২০০১ সালে ইডেনে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও শেন ওয়ার্নকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে করাচি টেস্টে ইরফান পাঠান পরপর ফিরিয়েছিলেন সলমন বাট, ইউনিস খান ও মহম্মদ ইউসুফকে। আর কয়েক মাস আগে কিংস্টন টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ড্যারেন ব্র্যাভো, শামারহ ব্রুকস ও রস্টন চেজকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক করেন বুমরা।
আর একদিনের ফরম্যাটে চেতন শর্মা, কপিল দেব ও কুলদীপ যাদব হ্যাটট্রিক করেছেন ভারতের হয়ে। ১৯৮৭ সালে প্রথম ও তরুণতম ভারতীয় হিসেবে হ্যাটট্রিক করেছিলেন চেতন শর্মা। নাগপুরে রিলায়্যান্স বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের কেন রাদারফোর্ড, ইয়ান স্মিথ ও চ্যাটফিল্ড— তিনজনকেই পর পর বোল্ড করেছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কপিল দেব পর পর ফিরিয়েছিলেন রোশন মহানামা, রুমেশ রত্নায়েকে ও সনৎ জয়সূর্যকে। আর কুলদীপ যাদব ২০১৭ সালে ইডেনে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু ওয়েড, অ্যাশটন আগার ও প্যাট কামিংসকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: গোলাপি বলে মহড়া শুরু হল শামিদের
রবিবার ১.১৬ গড়ে ছয় উইকেট নিয়েছেন দীপক চাহার। যা কোনও টেস্ট খেলিয়ে দেশের বোলারের পাঁচ বা তার বেশি উইকেট নেওয়া স্পেলে সেরার তালিকায় তিন নম্বরে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সদ্যসমাপ্ত টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১০.২ ওভারে ৫৬ রানের বিনিময়ে আট উইকেট নিয়েছেন দীপক চাহার। গড় মাত্র ৭। যা তিন বা তার বেশি ম্যাচের সিরিজে ভারতের হয়ে দ্বিতীয় সেরা। ২০১৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অফস্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ৩.৮৮ গড় হল ভারতের সেরা।
এখনও পর্যন্ত মাত্র সাতটি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন দীপক চাহার। তার মধ্যে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছেন দু’বার। তুলনায় ৪২টি-টোয়েন্টিতে মাত্র দু’বার ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন জশপ্রীত বুমরা। গত বছর ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়েছিল দীপকের। সেই ম্যাচে চার ওভারে ৪৩ রান দিয়েছিলেন। নিয়েছিলেন এক উইকেট। তার পর থেকে ছয় ম্যাচে ৭.৪০ গড়ে ও মাত্র ৪.৭৭ ইকনমি রেটে ১৩ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রবিবারের টি-টোয়েন্টিতে ভারতীয় পেসাররা নয় উইকেট নিয়েছেন। যা টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে ভারতীয় পেসারদের সবচেয়ে বেশি সাফল্য। এর আগেও একবার কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ভারতীয় পেসাররা নয় উইকেট নিয়েছিলেন। যা হয়েছিল ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।