উচ্ছ্বাস: টোকিয়ো প্যারালিম্পিক্সে রুপো জয়ের পরে পদক নিয়ে ভাবিনা। সঙ্গে দীপা মালিক। রবিবার। ছবি পিটিআই।
পাঁচ বছর আগে রিয়োয় তাঁর হাত ধরেই প্যারালিম্পিক্সে ভারতীয় মহিলাদের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল। যখন শটপাটে ভারতকে রুপো এনে দিয়েছিলেন দীপা মালিক। এত দিন বাদে একাকিত্ব ঘুচল তাঁর। টোকিয়োয় দীপার সামনেই রবিবার টেবল টেনিসে রুপো পেলেন ভাবিনাবেন পটেল। দ্বিতীয় ভারতীয় মহিলা হিসেবে জিতে নিলেন প্যারালিম্পিক্সের পদক।
টোকিয়োয় রবিবার যখন দীপাকে ফোনে ধরা হল, উত্তেজনায় তিনি রীতিমতো কাঁপছেন। কী রকম অনুভূতি হচ্ছে? প্যারালিম্পিক্সে প্রথম ভারতীয় মহিলা পদকজয়ী আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন, ‘‘বোঝাতে পারব না কী রকম লাগছে। এর আগে আমি নিজে রুপো পেয়েছিলাম। এ বার আমার চোখের সামনে আর এক জন পেল। সত্যিই, অসাধারণ এক অনুভূতি।’’
ভারতীয় প্যারালিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট দীপার সঙ্গে রুপোজয়ী ভাবিনাবেনের একটি ছবি এ দিন ছড়িয়ে পড়ে গণমাধ্যমে। পদক জয়ের পরে কী বিশেষ বার্তা দিলেন আপনার উত্তরসূরিকে? দীপা বলছিলেন, ‘‘আমি ওকে আমাদের রুপোলি ক্লাবে স্বাগত জানালাম। আসলে অনেক দিন এই জায়গায় একা একা ছিলাম। খুব ভাল লাগছে যে আজ আমার সঙ্গে এখানে আরও এক জন যোগ হল। আমি নিশ্চিত, অদূর ভবিষ্যতে এই ক্লাবের সদস্য সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।’’
শুধু এক জন প্রশাসক হিসেবেই দীপা এখন টোকিয়োয় নেই। তাঁকে সেখানে পাঠানোর আরও একটা বিশেষ কারণ আছে। মনে করা হয়েছে, যিনি ভারতীয় প্যারা-অ্যাথলিটদের সামনে নতুন এক দিগন্ত খুলে দিয়েছিলেন, তিনি টোকিয়োয় উপস্থিত থাকলে প্রতিযোগীরা বিশেষ প্রেরণা পাবেন। কী মন্ত্র দিয়েছিলেন আপনি? দীপার জবাব, ‘‘আমি প্রশাসক হিসেবে ওদের সঙ্গে কথা বলতে চাইনি। চেয়েছিলাম, এক জন অ্যাথলিট হিসেবে আমার অভিজ্ঞতাটা ওদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে। যে কারণে ওরাও সহজ ভাবে ব্যাপারটা গ্রহণ করতে পেরেছিল।’’ একটু থেমে বলে চলেন, ‘‘আমি চেয়েছিলাম, ওরা যেন সেরাটা দেয়। ওদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আছি। এখানে এমন অনেকে আছে, যারা একটা সময় আমার সতীর্থ ছিল। ওদের অনুশীলনে আমি হাজির ছিলাম। তাই ওরা জানে, দীপা দিদি যা বলবে, তাতে ওদের উপকারই হবে। আমার পক্ষে যতটা যা সম্ভব করেছি।’’
ভাবিনাবেনের সাফল্যে বিশেষ ভাবে খুশি দীপা এও বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, মশালটা আমি ভাবিনার হাতে তুলে দিলাম। আমি সব সময় চেয়েছি, মেয়েরা আরও এগিয়ে আসুক। যাবতীয় সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ভেঙে দেখিয়ে দিক, ওরাও পারে। ভাবিনার এই দুরন্ত সাফল্য আমাকে অভিভূত করেছে। জাতীয় ক্রীড়া দিবসে দেশকে দারুণ উপহার দিল আমাদের অ্যাথলিটরা।’’
তিনি হুইলচেয়ারে বসে শটপাট ছুড়ে ভারতীয় ক্রীড়া জগতে একটা বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। সেই মশাল আজ বহন করছেন ভাবিনাবেনরা। দীপা অবশ্য একা কৃতিত্ব নিতে চান না। বলছেন, ‘‘২০০৪ সালে আথেন্স প্যারালিম্পিক্সে দেবেন্দ্র ঝাঝারিয়া সোনা পেয়ে রাস্তাটা দেখিয়েছিল। তবে এটা ঠিক, ২০১৬ সালের পর থেকে প্যারালিম্পিক্স নিয়ে এ দেশে চর্চা শুরু হয়।’’
এক জন প্যারা-অ্যাথলিটকে কতটা লড়াই, কতটা প্রতিবন্ধকতা সহ্য করে এ রকম একটা মঞ্চে পৌঁছতে হয়, তা দীপার চেয়ে ভাল কেউ জানেন না। বলছিলেন, ‘‘আমি দেখেছি, ভাবিনা, নিষাদ কুমার (হাই জাম্প), বিনোদ কুমাররা (ডিসকাস) কতটা অমানুষিক লড়াই করে এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছে। অনেক লড়াই করে প্যারা-অ্যাথলিটদের নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে হয়।’’ তবে তিনি এও বলছেন, ‘‘এ বার কিন্তু ওদের জীবন বদলে যাবে। নতুন অভিজ্ঞতা হবে।’’
দীপার ধারণা, প্যারালিম্পিক্সে ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের সাফল্যের পিছনে অনেকগুলো কারণ কাজ করছে। প্রাক্তন অ্যাথলিটের কথায়, ‘‘এখন পরিস্থিতিটা অনেক বদলে গিয়েছে। দেশের সরকার এগিয়ে এসেছে। সংগঠনগুলো কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে উৎসাহ দিচ্ছেন। পাশাপাশি অ্যাথলিটদের কোচ, ফিজ়িয়ো, চিকিৎসকেরা সবাই অবদান রেখেছে এদের সাফল্যে।’’
দীপা মনে করেন, জাতীয় ক্রীড়া দিবসে টোকিয়োয় একাধিক পদক জয় অবশ্যই একটা বিশেষ দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে ভারতীয় ক্রীড়া ইতিহাসে। কিন্তু তিনি এও মনে করেন, আজ, সোমবার রুপোলি হাসি বদলে যেতে পারে সোনালি দিনে। দীপার কথায়, ‘‘টোকিয়ো থেকে আমরা এ বার বেশ কিছু পদক পাব। কাল (সোমবার) আশা করছি সোনা আসবে। দেবেন্দ্র ঝাঝারিয়ার জ্যাভলিন থ্রো আছে।’’ সূর্যোদয়ের অপেক্ষায় থাকা দীপা বলে গেলেন, ‘‘দেশের মানুষকেও আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের ক্রীড়াবিদদের পাশে থাকার জন্য। সবার ভালবাসাতেই আমরা আজ এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি।’’