বৈপ্লবিক: তিন বছর আগের ছবি। সিএবি সুপার লিগ ফাইনাল হয়েছিল গোলাপি বলে। সৌরভের হাত ধরে টেস্টেও সেই ছবি দেখা যাবে। ফাইল চিত্র
ভারতের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগেই নানা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কয়েক দিন আগে করা ধর্মঘট থেকে ক্রিকেটারেরা সরে এলেও, শাকিব আল হাসানকে নিয়ে সমস্যা এখনও মেটেনি। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশের আসন্ন ভারত সফর ভেস্তে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।
তবে বিসিবি প্রধান চিন্তিত হলেও ভারত ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। জাতীয় ক্রিকেটারদের শিবির শুরু হয়েছে। রবিবার যেমন দু’দলে ভাগ হয়ে নিজেদের মধ্যে প্র্যাক্টিস ম্যাচও খেলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারেরা। আপাতত ঠিক আছে, ৩০ অক্টোবরই ভারতে চলে আসছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে সোমবার রাতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নতুন প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, ইডেনে দিন-রাতের টেস্ট হওয়ার ব্যাপারে তিনি রীতিমতো আশাবাদী।
সৌরভ বলেছেন, ‘‘আমি বিসিবি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি। ওদের কোনও সমস্যা নেই। শুধু ক্রিকেটারদের সঙ্গে এক বার কথা বলে নেবে। আমি নিশ্চিত, ইডেনে দিন-রাতের টেস্টই হবে। খুব তাড়াতাড়ি সরকারি ঘোষণা হয়ে যাবে।’’
দিন-রাতের টেস্ট নিয়ে বিসিবির ‘ক্রিকেট অপারেশনস’-এর দায়িত্বে থাকা, প্রাক্তন অধিনায়ক আক্রম খান বলেছেন, ‘‘দারুণ একটা প্রচেষ্টা তবে আমাদের ক্রিকেটারদের মতটা শুনতে হবে। আপনারা যদি বাংলাদেশের সফরসূচিটা দেখেন, তা হলে বুঝবেন ২২ তারিখ ইডেন টেস্টের আগে আমরা দিন দুই প্র্যাক্টিসের সময় পাব। ফ্লাডলাইটে, গোলাপি বলে মানিয়ে নেওয়ার জন্য যা খুব কম। আমরা দু’এক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেব।’’
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমকে এর আগে নাজমুল বলেন, ‘‘আপনারা এখনও ভারত সফর নিয়ে সব কিছু জানেন না। অপেক্ষা করে দেখুন কী হয়। আমি যখন বলছি ভারত সফর ভেস্তে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে, তখন আমাকে বিশ্বাস করুন।’’
কেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট এ রকম কথা বলছেন? নাজমুল এ ক্ষেত্রে ক্রিকেটারদের কোর্টেই বল ঠেলছেন। তামিম ইকবালের উদাহরণ দিচ্ছেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট। যে ভাবে স্ত্রী সন্তানসম্ভবা বলে সরে দাঁড়িয়েছেন তামিম, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাজমুল। তিনি বলেছেন, ‘‘তামিম প্রথমে আমাকে বলেছিল, ও শুধু কলকাতা টেস্ট (২২-২৬ নভেম্বর) খেলবে না। কারণ ওই সময় ওর দ্বিতীয় সন্তান জন্মানোর কথা। কিন্তু দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে এক বৈঠকের পরে আমার ঘরে এসে তামিম জানিয়ে দেয়, ও পুরো সফর থেকেই সরে দাঁড়াতে চায়। আমি কারণটা জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ও শুধু আমাকে বলে, যাব না।’’
তামিমের এই ঘটনা থেকে শিক্ষা পেয়েছেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট। তিনি এখন অনেক সতর্ক। নাজমুল বলছেন, ‘‘এর পরে আমি একটুও অবাক হব না, যদি দেখি শেষ মুহূর্তে আরও কেউ কেউ নাম তুলে নেয়। সে রকম হলে তো আমরা বিকল্প ক্রিকেটারও ঠিকঠাক বেছে নিতে পারব না।’’ আশঙ্কা প্রকাশ করে নাজমুল এও বলেন, ‘‘আমি শাকিবকে ডেকেছি কথা বলার জন্য। এখন যদি শাকিবও সরে দাঁড়ায়, তা হলে কী হবে বলুন তো? আমি অধিনায়ক পাব কোথায়? আমাকে পুরো টিম কম্বিনেশন বদলাতে হবে। এই সব ক্রিকেটারকে নিয়ে আমি কী করব?’’
পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে, জোর খাটিয়ে ক্রিকেটারেরা যে ভাবে দাবি আদায় করে নিয়েছেন, তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না বোর্ড প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি এখনও বিশ্বাস করে উঠতে পারছি না ঘটনাটা। আমি ওদের সঙ্গে রোজ কথা বলতাম। ধর্মঘট করার আগে ওরা আমাকে কোনও আভাসও দেয়নি। আমার এখন মনে হচ্ছে, ওদের দাবি মেনে নিয়ে আমি ভুল করেছি। এটা করা ঠিক হয়নি।’’ নাজমুল এও বলেন, ‘‘আমার বলে দেওয়া উচিত ছিল, যত ক্ষণ না ধর্মঘট তুলে নিচ্ছ, তোমাদের সঙ্গে কথা বলব না। কিন্তু প্রচারমাধ্যমও আমাদের উপরে চাপ তৈরি করেছিল।’’