গোলাপি বলে অনুশীলনে মগ্ন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি। বৃহস্পতিবার ইডেন গার্ডেন্সে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ভারতের মাটিতে গোলাপি বলে প্রথম দিনরাতের টেস্ট ম্যাচকে আকর্ষণীয় করে তোলার নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গোলাপি আলোয় রাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে শহর। শহিদ মিনার থেকে ‘দ্য ফর্টি টু’ এখন সেই রঙের আলোয় মোড়া। প্রথম দিনরাতের টেস্ট ঘিরে দর্শকদের উন্মাদনা তুঙ্গে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন, দিনরাতের টেস্টই ভবিষ্যৎ। কিন্তু ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি একেবারেই তা মানছেন না।
সকালের এক ঘণ্টায় বোলার ও ব্যাটসম্যানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখনও তাঁর কাছে অন্যতম আকর্ষণ। সমর্থকদের বিনোদনের জন্য দিনরাতের টেস্ট আয়োজন করা হলেও তাকে ভবিষ্যৎ হিসেবে আদৌ দেখছেন না তিনি। নৈশালোকে গোলাপি বলে খেলতে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যার কথাও তুলে ধরেছেন ভারতীয় অধিনায়ক। এমনকি সাধারণ লাল বলের চেয়ে গোলাপি বলে ফিল্ডিং করাও বেশ কঠিন, তা-ও জানিয়ে গেলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে এসে বিরাট বললেন, ‘‘টেস্ট খেলার এটাই একমাত্র বিকল্প হতে পারে না। দিনরাতের টেস্ট আয়োজন করে সমর্থকদের আকর্ষণ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হতে পারে। কিন্তু শুধুই বিনোদনের জন্য টেস্ট আয়োজন করা উচিত নয়।’’ যোগ করেন, ‘‘টেস্ট ক্রিকেটের বিনোদন লুকিয়ে রয়েছে ব্যাটসম্যান এবং বোলারের প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। সকালের এক ঘণ্টা বোলারের বিরুদ্ধে কী ভাবে একজন ব্যাটসম্যান লড়াই করে ক্রিজ আঁকড়ে পড়ে থাকে, তার উপরে নির্ভর করে টেস্টের মাহাত্ম্য। তা দেখে যদি সমর্থকেরা মাঠে আসতে না চান, জোর খাটানো যায় না।’’
গোলাপি বল ও দিন-রাতের টেস্ট নিয়ে এগুলো জানেন?
ইতিহাসের ইডেন গার্ডেন্স সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানেন?
আরও পড়ুন: শেষ মুহূর্তে বাতিল প্যারাট্রুপার শো
টেস্টের আকর্ষণ বাড়ানোর বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটমহলে। বিরাট আগেই বলে দিয়েছিলেন, টেস্টের আকর্ষণ ফেরাতে স্থায়ী টেস্ট কেন্দ্রে ম্যাচ দেওয়া হোক। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়ের প্রস্তাব, বছরের শুরুতেই গঠন করা হোক টেস্ট ক্যালেন্ডার। সেই অনুযায়ী সমর্থকেরাও যেন নিজেদের সূচি তৈরি করার সময় পান। রাহুলের এই প্রস্তাবে সমর্থন করে বিরাটের ব্যাখ্যা, ‘‘রাহুল ভাই ঠিকই বলেছেন। টেস্ট ক্যালেন্ডার তৈরি করা হলে, সমর্থকেরা আগে থেকে ম্যাচ দেখার পরিকল্পনা তৈরি করতে পারবেন।’’
আরও পড়ুন: বল কাঁপলেই কিন্তু কঠিন পরীক্ষায় পড়বে ব্যাটসম্যানরা
দিনরাতের টেস্টে যে গোলাপি বল ব্যবহৃত হয়, তা যে কোনও ব্যাটসম্যানের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে। সুইংয়ের সঙ্গে অতিরিক্ত বাউন্স সমস্যায় ফেলতে পারে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যানকেও। এ দিন বিরাট জানালেন, ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়ের সময়েও অনেক সমস্যায় ফেলছে গোলাপি বল। অধিনায়কের কথায়, ‘‘গোলাপি বলে ফিল্ডিং করার অভিজ্ঞতা আমাকে বেশ অবাক করেছে। স্লিপ ক্যাচিং করতে গিয়ে দেখছি, বল হাতে ধাক্কা খাচ্ছে। বেশ ব্যথা লাগছে। ছোটবেলায় সিনথেটিক বলে খেলার মতো অভিজ্ঞতা হচ্ছে। বলে অতিরিক্ত স্তর থাকার জন্য এই সমস্যা হচ্ছে। হকি বলের মতো ভারীও মনে হল। সমস্যা হতে পারে স্লিপ ফিল্ডারদের।’’
আরও পড়ুন: বলের রংই বুঝছেন না, লিটনকে নিয়ে উৎকণ্ঠা
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে স্লিপেই একাধিক ক্যাচ ফস্কেছেন ভারতীয় ফিল্ডারেরা। অজিঙ্ক রাহানে ক্যাচ ফেলেছেন তিনটি। বিরাটের হাত থেকেও একটি ক্যাচ পড়েছিল স্লিপে। বাংলাদেশ দুর্বল দল বলেই এতগুলো ক্যাচ ফস্কানোর মাশুল গুনতে হয়নি ভারতকে। শুক্রবার ইডেনে গোলাপি বলের বিরুদ্ধে ক্যাচ ফস্কানোর ছবি যাতে ফিরে না আসে, তার জন্য বৃহস্পতিবার সকালে দীর্ঘক্ষণ স্লিপ ক্যাচিং অনুশীলন করল ভারত। এমনকি বুধবার সন্ধ্যায় উঁচু ক্যাচ নিতেও সমস্যা হয়েছিল ভারতীয় ফিল্ডারদের। বিরাট বলছিলেন, ‘‘লাল অথবা সাদা বল কী রকম গতিতে আসতে পারে, তা আমাদের জানা। শেষ পর্যন্ত বল না দেখেও ক্যাচ নিতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু গোলাপি বলে সেই আন্দাজে ক্যাচ নেওয়া যাবে না। শেষ পর্যন্ত বলে চোখ না রাখলেই সমস্যা। উঁচুতে বল উঠলে ঠিক মতো দেখতেও সমস্যা হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: হাতে টিকিট, ঘর খুঁজছেন বাংলাদেশের সমর্থকেরা
ব্যাটিংয়ের সময়েও কোন গতিতে বল আসবে তা আন্দাজ করতে সমস্যা হয়েছে ভারত অধিনায়কের। তাঁর কথায়, ‘‘বুধবার নেটে ব্যাট করার সময় বেশ কয়েকটি বলে পরাস্ত হয়েছি। মনে হয়েছে শরীরের কাছে বল চলে এসেছে। কিন্তু ব্যাট বাড়ানোর পরে বলের খেই খুঁজে পাইনি।’’ যোগ করেন, ‘‘প্রত্যেক ব্যাটসম্যানকে বুঝতে হবে তাদের অফস্টাম্প কোথায়। রংয়ের জন্য হয়তো বোঝা যাচ্ছে না, বল আমার ব্যাটের ঠিক কতটা দূরে রয়েছে।’’
ভারতীয় পরিবেশে দিনরাতের টেস্টে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে শিশির। বুধবার রাতে ম্যাচ রেফারির সঙ্গেও শিশিরের উপস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন বিরাট। তাঁর উপলব্ধি, ‘‘ম্যাচের শেষ দু’ঘণ্টায় শিশিরের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। দেখা যাক, কী পরিস্থিতি হয়। তবে বিদেশের মাটিতে গোলাপি বল যে রকম আচরণ করে, ভারতে সে রকম ভয়ঙ্কর কিছু হওয়ার সুযোগ কম।’’
আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টিতে শামি, থেকে গেলেন ঋষভ
ম্যাচ শুরু হওয়ার বেশ কয়েক দিন আগেই প্রথম তিন দিনের টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। প্রায় ৬৫ হাজার সমর্থক উপস্থিত হতে পারেন ভারত-বাংলাদেশ দ্বৈরথের সাক্ষী হতে। বিরাটও সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল। ইডেনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভারত-পাক ম্যাচ খেলার সময় যে উন্মাদনা তিনি দেখেছেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টেও সে রকমই আশা করছেন। ভারত অধিনায়কের কথায়, ‘‘ইডেনের পরিবেশ একজন পেসারকে সব চেয়ে বেশি তাতিয়ে দিতে পারে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাক ম্যাচ খেলার সময়েও দেখা গিয়েছে, সমর্থকদের উন্মাদনা তুঙ্গে। এ ম্যাচেও সেটাই আশা করছি।’’ আরও বলেন, ‘‘একজন পেসার এ ধরনের পরিবেশ খুব পছন্দ করে। ম্যাচের প্রথম এক ঘণ্টায় সব চেয়ে বেশি উপভোগ করা যাবে সমর্থকদের উত্তেজনা। তবে তাঁদের উন্মাদনার সঙ্গে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া চলবে না।’’