রুপোজয়ী কিশোরের (বাঁ দিকে) সঙ্গে নীরজ। ছবি: রয়টার্স।
ধীরে ধীরে এশিয়ান গেমসে একশো পদকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত। বুধবার গেমসের ১১তম দিনে ভারতের ঝুলিতে তিনটি সোনা-সহ ১২টি পদক। মোট পদকের সংখ্যা ৮১টি। গেমসের বাকি এখনও তিন দিন। ফলে তিন অঙ্কের পদকসংখ্যা ছুঁয়ে ফেলাই যায়।
দিনের প্রথম সোনা আসে তীরন্দাজি থেকে। তবে শিরোনাম কেড়ে নিয়েছে অ্যাথলেটিক্স। জ্যাভলিনে নীরজ চোপড়ার থেকে সোনার পদকের আশা করেছিলেন সবাই। নীরজ হতাশ করেননি। তবে রুপো পেয়ে চমকে দিয়েছেন কিশোর জেনা। ছেলেদের ৪x৪০০ মিটার রিলেতে সোনা এসেছে। পাশাপাশি অ্যাথলেটিক্স থেকে আরও তিনটি রুপো পেয়েছে ভারত। একটি ব্রোঞ্জও এসেছে। নিশ্চিত হয়েছে আরও কিছু পদকও।
অ্যাথলেটিক্স
এশিয়ান গেমসে আবার সোনা জিতেছেন নীরজ চোপড়া। বুধবার ৮৮.৮৮ মিটার বর্শা ছুড়ে সোনা জিতেছেন তিনি। রুপোও এসেছে ভারতের ঘরে। ওড়িশার কিশোর জেনা ছুড়েছেন ৮৭.৫৪ মিটার। ফলে একই ইভেন্ট থেকে সোনা-রুপো দুটোই এল ভারতের ঘরে। গোটা ইভেন্ট জুড়েই ভারতের দুই ক্রীড়াবিদকে পাল্লা দেওয়ার মতো কেউ ছিলেন না। তৃতীয় হওয়া ডিন জেঙ্কি ৮০ মিটার পেরোলেও দ্বিতীয় স্থানাধিকারীর থেকে পাঁচ মিটার পিছনে ছিলেন। সাধারণত নীরজ নিজের সেরা থ্রো-টা প্রথম তিন রাউন্ডের মধ্যেই দিয়ে থাকেন। কিন্তু বুধবার তাঁর পদক এল চতুর্থ রাউন্ডের থ্রোয়ে। স্টার্ট লিস্টে দ্বিতীয় স্থানে ছিল নীরজের নাম। চার নম্বরে ছিলেন কিশোর। নীরজের প্রথম প্রয়াস ঘিরে বেশ ঝামেলা হয়। প্রযুক্তিগত কারণে সেই প্রয়াসের পরিমাপই করা যায়নি। ফলে নীরজকে আবার ছুড়তে হয়। প্রথম প্রয়াসে তিনি ৮২.৩৮ মিটার ছোড়েন। কিশোর ছোড়েন ৮২.১৬ মিটার। প্রথম রাউন্ডের শেষে দু’জনেই প্রথম দুটি স্থানে ছিলেন। ইভেন্ট শেষ হওয়ার আগে এক বার জায়গা বদল ছাড়া যার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। দ্বিতীয় রাউন্ডে নিজেকে ছাপিয়ে যান নীরজ। তিনি ছোড়েন ৮৪.৪৯ মিটার। কিশোরের দূরত্ব ছিল ৭৯.৭৬ মিটার। তবে এ বারও কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়। কিশোরের থ্রোকে প্রথমে ‘ফাউল’ বলেছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু নীরজ এগিয়ে এসে তার প্রতিবাদ করেন। আম্পায়াররা কিশোরের থ্রো খতিয়ে দেখার পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। নীরজের তৃতীয় রাউন্ড ফাউল হয়। ভারতের ক্রীড়াবিদ তা নিয়ে কোনও প্রতিবাদ করেননি। কিন্তু তৃতীয় প্রয়াসেই নীরজকে টপকে যান কিশোর। তিনি ছোড়েন ৮৬.৭৭ মিটার। সেটা দেখেই নীরজ ছুটে আসেন কিশোরের দিকে। জড়িয়ে ধরেন সতীর্থ খেলোয়াড়কে। প্রথম তিনটি রাউন্ডের পর বাদ পড়েন বাকি ছ’জন খেলোয়াড়। কিশোর তাঁকে টপকে যেতেই সেরাটা বেরিয়ে আসে নীরজের। চতুর্থ প্রয়াসে তিনি ৮৮.৮৮ মিটার ছোড়েন। কিশোরকে টপকে আবার প্রথম স্থানে চলে আসেন তিনি। এ বার ওড়িশার কিশোর এসে জড়িয়ে ধরেন নীরজকে। চতুর্থের প্রয়াসে কিশোরের দূরত্ব ছিল ৮৭.৫৪ মিটার। পঞ্চম প্রয়াসে নীরজ ৮০.৮০ মিটার বর্শা ছুড়লেও কিশোরের প্রয়াস ফাউল হয়। নীরজের ষষ্ঠ প্রয়াস ফাউল হয়। কিন্তু তাতে তাঁর অবস্থানের কোনও বদল হয়নি। শেষ প্রয়াস ছিল কিশোরের। কিন্তু তিনি নীরজকে টপকে যাওয়ার কোনও চেষ্টাই করেননি। তাঁর ষষ্ঠ থ্রো ফাউল হয়। কিন্তু সে দিকে পাত্তা না দিয়ে ছুটে গিয়ে নীরজকে জড়িয়ে ধরেন। দুই ভারতীয় খেলোয়াড় একসঙ্গে উল্লাস করতে থাকেন।
নীরজ চোপড়া জ্যাভলিনে সোনা জিতেছিলেন ভারতীয় সময় ৬টা ১ মিনিটে। তার ঠিক ৮ মিনিট পরেই ভারতের ছেলেরা ৪x৪০০ মিটার দৌড়ে সোনা জেতে। আনাস মহম্মদ, অমজ জাকোব, আজমল মহম্মদ এবং রাজেশ রমেশ দেশকে সোনা এনে দেন। জাতীয় রেকর্ড ভেঙে তাঁরা বুধবার রেস শেষ করেন ৩ মিনিট ০১.৫৮ সেকেন্ডে। গত বার ভারত এই ইভেন্টে রুপো জিতেছিল। কাতারের বিরুদ্ধে হারতে হয়েছিল। বুধবার সেই কাতারকেই পিছনে ফেলে দিলেন রমেশরা। দৌড় শুরু করেছিলেন আনাস। তিনি পাঁচ নম্বরে শেষ করেন। ৪৩.৬০ সেকেন্ড সময় নেন তিনি। পরের দৌড় ছিল জাকোবের। তিনিই দেশকে সোনা জয়ের কাছে পৌঁছে দেন। পাঁচ নম্বরে থাকা ভারতকে এক নম্বরে নিয়ে চলে আসেন তিনি। সেই ধারা বজায় রাখেন আজমল এবং রাজেশ। সোনা জিতে নেয় ভারত। এই ইভেন্টে রুপো পায় কাতার এবং ব্রোঞ্জ পেয়েছে শ্রীলঙ্কা।
মেয়েদের ৮০০ মিটার দৌড়ে রুপো পান হরমিলন বেন্স। ২ মিনিট ০৩.৭৫ সেকেন্ড সময় করে রুপো পান। পদকের আশা ছিলই না প্রায়। কিন্তু শেষ ১০ মিটারে অসাধারণ দৌড়ে পদক এনে দেন হরমিলন। এর আগে ১৫০০ মিটারেও রুপো পেয়েছিলেন তিনি।
৫০০০ মিটারে রুপো পেয়েছেন অবিনাশ সাবলে। তিনি সময় নিয়েছেন ১৩ মিনিট ২১.০৯ সেকেন্ড। গত সপ্তাহে ৩০০০ মিটারে স্টিপলচেজ়ে সোনা জিতেছিলেন সাবলে। নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিলেন ৫০০০ মিটারেও। ৩৫ কিলোমিটার রেস ওয়াকে ব্রোঞ্জ জিতেছেন রাম বাবু এবং মঞ্জু। মেয়েদের ৪x৪০০ মিটারের দল রুপো পেয়েছে।
তীরন্দাজি
বুধবার সকালে তীরন্দাজিতে প্রথম সোনা জেতে ভারত। ভারতের জ্যোতি সুরেখা এবং ওজাস দেওতালে কমপাউন্ড মিক্সড ইভেন্টে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে সোনা জেতেন। কমপাউন্ড মিক্সড ইভেন্টে মোট ৮টি রাউন্ড হয়। প্রতি রাউন্ডে একটি করে তির ছোড়েন দুই প্রতিযোগী। এ ভাবে মোট ১৬০ পয়েন্টের খেলা হয়। ভারতের দুই প্রতিযোগী শুরুটা খুব ভাল করেন। প্রথম রাউন্ডে ২০তে ২০ স্কোর করেন তাঁরা। অন্য দিকে কোরিয়ার প্রতিযোগী প্রথম রাউন্ডেই ১ পয়েন্ট কম স্কোর করেন। ফলে শুরুতেই এগিয়ে যায় ভারত। তার পর টান টান খেলা চলছিল। দু’দলই নিজেদের তির ১০ পয়েন্টেই মারছিলেন। বোঝাই যাচ্ছিল, ১-২ পয়েন্টের ব্যবধানেই খেলার ফয়সালা হবে। পঞ্চম রাউন্ডে একটি ভুল করে বসে ওজাস। ৯ মারেন তিনি। ফলে দু’দলই সমান পয়েন্টে চলে আসে। সপ্তম রাউন্ডে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিযোগী আবার ১ পয়েন্ট কম স্কোর করেন। ফলে ভারত ১ পয়েন্টে এগিয়ে যায়। সোনা জিততে হলে শেষ রাউন্ডে ভারতের দুই প্রতিযোগীকেই ২০ স্কোর করতে হত। সেটা করেন তাঁরা। ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিযোগীদের আর কিছু করার ছিল না। ১৫৯-১৫৮ ব্যবধানে জিতে দেশের জন্য ১৬তম সোনা আনেন জ্যোতি, ওজাস।
বক্সিং
সোনার আশা ছিল লভলিনা বরগোঁহাইয়ের থেকে। কিন্তু ৫৭ কেজি বিভাগের ফাইনালে তিনি দু’বারের অলিম্পিক্স পদকজয়ী লি কিয়ানের কাছে হেরে গেলেন। ছেলেদের ৬৩ কেজি বিভাগে দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন লিন ইউ তিংয়ের কাছে হেরে ব্রোঞ্জ পেলেন প্রবীণ হুডা।
হকি
এশিয়ান গেমসের ফাইনালে উঠেছে ভারত। বুধবার সেমিফাইনালে তারা ৫-৩ গোলে হারিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াকে। গোল করলেন মনদীপ সিংহ, হার্দিক সিংহ, অমিত রোহিদাস, ললিত উপাধ্যায় এবং অভিষেক। ফাইনালে ভারত খেলবে চিন বনাম জাপান ম্যাচের বিজয়ীর বিরুদ্ধে। বুধবার ম্যাচের শুরুতে আক্রমণের রাশ ছিল ভারতের হাতেই। শুরু থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ার ডি বক্সের উদ্দেশে একের পর এক আক্রমণ হতে পারে। পাঁচ মিনিটেই গোল করে ভারত। গোলের একটি প্রচেষ্টা রুখে দিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। ফিরতি বলে গোল করেন হার্দিক সিংহ। ১১ মিনিটে ভারতের দ্বিতীয় গোল। দক্ষিণ কোরিয়ার বক্সে বল পেয়েছিলেন গুরজন্ত। তিনি পাস দেন মনদীপ সিংহকে। দক্ষিণ কোরিয়ার এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে সেটি গোলে ঢুকে যায়। প্রথম কোয়ার্টার শেষ হওয়ার এক সেকেন্ড আগে ভারতের তৃতীয় গোল আসে। দক্ষিণ কোরিয়ার বক্সে বল পাওয়ার পর বিবেক পাস দেন গুরজন্তকে। তিনি গোল করার চেষ্টা করলেও রুখে দেন কোরিয়ার গোলকিপার। তবে ফিরতি বলে হরমনপ্রীত সিংহ দক্ষিণ কোরিয়ার বক্সে ঢুকে পড়েন এবং ললিতকে পাস দেন। ঠান্ডা মাথায় গোল করেন ললিত। প্রথম কোয়ার্টার যতটা ভাল গিয়েছিল ভারত, দ্বিতীয় কোয়ার্টার ততটাই খারাপ যায়। শুরুতেই একটি গোল শোধ করে দক্ষিণ কোরিয়া। পেনাল্টি কর্নার থেকে দলকে এগিয়ে দেন জুং মানজায়ে। ২০ মিনিটের মাথায় আবার দক্ষিণ কোরিয়ার গোল। এ বার বাঁ দিক থেকে পাওয়া বল স্টিকের অসামান্য দক্ষতায় গোল করেন তিনি। আর একটি গোল করলেই সমতা ফেরাতে পারত তারা। কিন্তু ভারতের হয়ে ব্যবধান বাড়ান অমিত রোহিদাস। ভারতের একটি আক্রমণ সামলাতে গিয়ে নিজেদের বক্সে ফাউল করে দক্ষিণ কোরিয়া। পেনাল্টি কর্নার থেকে ৪-২ করেন অমিত। তৃতীয় কোয়ার্টারে দক্ষিণ কোরিয়া আবার একটি গোল শোধ করে। ৪২ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক করেন জুং। চতুর্থ কোয়ার্টারে গোলের জন্যে মরিয়া হয়ে ওঠে কোরিয়া। কিন্তু ভারতের জমাট রক্ষণের কারণে তারা গোল দিতে পারেনি। উল্টে ভারতই এগিয়ে যায়। ৫৪ মিনিটে গোল করেন অভিষেক। মনদীপ পাস দিয়েছিলেন অভিষেককে। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার বক্সে ঢুকে পড়ে রিভার্স হিটে গোল করেন।
স্কোয়াশ
এশিয়াডে স্কোয়াশে দ্বিতীয় সোনার সামনে ভারত। পুরুষদের দলগত ইভেন্টের পর বাংলার সৌরভ ঘোষাল হংকংয়ের হেনরি লিউংকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেলেন। স্কোয়াশে এ বারই সবচেয়ে ভাল ফল হতে চলেছে। কারণ মেয়েরাও ফাইনালে উঠেছেন।
ব্রিজ
তাসের খেলায় আবারও এশিয়া সেরা হওয়ার দিকে ভারত। পুরুষ দল চিনকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেল। সেই দলে আছেন বাংলার সুমিত মুখোপাধ্যায়। এ দিন তাঁরা চিনকে হারান ২-১ ব্যবধানে। গত বার এই দল ব্রোঞ্জ জিতেছিল।
ব্যাডমিন্টন
পুরুষ ডাবলসের কোয়ার্টারে উঠেছেন সাত্ত্বিকসাইরাজ রানকিরেড্ডি এবং চিরাগ শেট্টি। সিঙ্গলসের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছেন পিভি সিন্ধু এবং এইচএস প্রণয়। তবে ছিটকে গিয়েছেন কিদম্বি শ্রীকান্ত।
দাবা
দাবার ষষ্ঠ রাউন্ডে মহিলা দল ৪-০ হারাল উজবেকিস্তানকে। পুরুষ দল ২-২ আটকে গেল চিনের বিরুদ্ধে।