গত বছরের অগস্টে ইংল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড সিরিজে চ্য়াম্পিয়ন হওয়া দল। এই দলকে সমর্থন করেছিল বিসিসিআই। —নিজস্ব চিত্র।
অদ্ভুতুড়ে!
হ্যাঁ, ভারতে ‘ডিজেবেলড ক্রিকেট’ নিয়ে কাণ্ডকারখানা রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজকেও হার মানাবে। এতটাই বিভ্রান্তি আর সংশয়ে ভরা।
অদ্ভুত হলেও সত্যি যে, এই ক্রিকেটে ভারতের কোনও নির্দিষ্ট দল নেই। বিভিন্ন সংস্থা নিজেদের মতো করে ‘ভারতের’ প্রতিনিধিত্ব করে। ধরা যাক, বিদেশে কোনও প্রতিযোগিতা হচ্ছে। সেখানে ভারতীয় দল হিসেবে কারা খেলবে? উত্তর হল, প্রতিযোগিতার আয়োজকদের সঙ্গে এই সংস্থাগুলোর মধ্যে যাদের সম্পর্ক ভাল, সেই সংস্থার দল খেলবে ভারতের নামে। শুনতে যতই অদ্ভুত লাগুক না কেন, এটাই সত্যি!
প্রশ্ন হল, এই সংস্থাগুলো কারা? এমনই এক সংস্থার নাম ‘ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া’। এর সেক্রেটারি জেনারেলের নাম রবি চৌহান। আর এক সংস্থার নাম ‘দিব্যাঙ্গ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড অব ইন্ডিয়া’, যা চালান হারুন রশিদ। এই সংস্থার নাম আগে ছিল ‘ডিজেবেলড স্পোর্টিং সোসাইটি’। ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট ফেডারেশন ফর দ্য ডিজেবেলড’ নামেও রয়েছে এক সংস্থা, যা চালান সিদ্দিকি নামে এক ব্যক্তি। আরও একটি সংস্থা রয়েছে— ‘অল ইন্ডিয়া ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ফর ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড’। এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা অজিত ওয়াদেকর। তাঁর মৃত্যুর পর এখন এই সংস্থার প্রেসিডেন্ট প্রাক্তন টেস্ট ক্রিকেটার কারসন ঘাউড়ি।
লক্ষ্যণীয় যে, প্রতিটি সংস্থার নামে মিল হিসেবে থাকছে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি। যেহেতু, ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের অধীনে ‘ডিজেবেলড ক্রিকেট’ আসেনি এখনও, তাই এই সংস্থাগুলোই দল পাঠাত ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে। যা চরম বিভ্রান্তির জন্ম দিত। এবং বিভ্রান্তি এখনও রয়ে গিয়েছে। যদি বলা হয়, এই ক্রিকেটে ভারতের অধিনায়ক কে? চার সংস্থার তরফে তখন উঠবে চার নাম। আর কাউকেই অস্বীকার করার উপায় নেই। কারণ, এই সংস্থাগুলোই ভারতের নামে খেলে নানা প্রতিযোগিতায়। সেই দলগুলোর নেতা ভারতের হয়েই যেহেতু টস করতে যান, তখন ‘ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন’ কথাটার মধ্যে টেকনিক্যালি ভুল নেই।
পুরোটাই যে ‘ঘেঁটে ঘ’ পরিস্থিতি, তা মেনে নিলেন ‘অল ইন্ডিয়া ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ফর ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড’-র প্রেসিডেন্ট কারসন ঘাউড়ি। আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি সাফ বললেন, “কেউ কেউ আইসিং দেওয়া কেক খেতে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু খুব শীঘ্রই ওদের কাছে নোটিস যাচ্ছে যে, ভারতের নামে আর কোনও প্রতিযোগিতায় খেলা চলবে না। এটা বেআইনি। আশা করছি, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না।”
আরও পড়ুন: পারিবারিক নয়, এই বিশেষ কারণেই আইপিএল খেলছেন না রায়না!
কিছু দিন আগেও ‘ডিজেবেলড স্পোর্টিং সোসাইটি’র ভারতীয় দলের কোচ ছিলেন অপরূপ চক্রবর্তী। তাঁর কোচিংয়ে কলকাতায় হওয়া টাটা স্টিলেনিয়াম কাপে রানার আপ হয় ভারত। তার পর শ্রীলঙ্কাতেও সাফল্য পায় ভারত। অপরূপ বললেন, “এই সংস্থায় যেখানে যার প্রভাব বেশি, সেখানে তাঁকে ক্যাপ্টেন করা হয়। শুভ্র জোয়ারদার এখানে ভারতের ক্যাপ্টেন, কিন্তু উত্তর ভারতে খেলা হলে রবীন্দর খাম্বোজ ক্যাপ্টেন, ঝাড়খণ্ডে হলে মুকেশ কাঞ্চন ক্যাপ্টেন। স্থানীয় মিডিয়া, স্পনসর, প্রচারের জন্য এটা করা হয়। এই ভাবে চলে। দুটো প্রতিযোগিতায় কোচ থাকার পর মনে হয়েছিল এটা পুরোটাই ব্যবসা। এই চারটে দলই আসলে ব্যবসা করছে পাবলিক সেন্টিমেন্ট কাজে লাগিয়ে। সবাই যে যার মতো করে ব্যবসা খুলে বসেছে। যা মোটেই ডিজেবেলড ক্রিকেটের স্বার্থ দেখছে না। এটার জন্যই আমি পদত্যাগ করেছি।”
প্রশ্ন হল, ‘ডিজেবেলড ক্রিকেট’ কি এই গোলমেলে পরিকাঠামো নিয়েই টিকে থাকবে? মহিলাদের ক্রিকেটকে যে ভাবে চালাচ্ছে বিসিসিআই, সে ভাবেই তো দেখভাল করা যায় এদেরও। এবং সেই উদ্যোগ যে এখনও হয়নি, তা নয়। গত বছরের অগস্টে ইংল্যান্ডে বসেছিল ছয় দেশীয় টি-২০ ফিজিক্যাল ডিজেবেলড ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড সিরিজ। ইসিবি বলে দেয়, সব দেশের ক্রিকেট বোর্ডকে দল পাঠাতে হবে। তখন উদ্যোগী হয়ে উঠেছিল বোর্ড। কারণ, বোর্ড-স্বীকৃত দলই পাঠাতে হবে প্রতিযোগিতায়। সব সংস্থাকেই বলা হয় ক্রিকেটারদের ট্রায়ালে পাঠাতে। কয়েক দফা ট্রায়ালের পর নির্বাচিত দল পাঠানো হয় ইংল্যান্ডে।
এবং সেখানে বিক্রান্ত কেনির নেতৃত্বে ভারতীয় দল চ্যাম্পিয়ন হয়। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন সেই দলের প্রথম এগারোয় ছিলেন বাংলার দুই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান তুষার পাল ও দেবব্রত রায়। তুষার খেলেছিলেন চারটি ম্যাচ। একটি ম্যাচে খেলেছিলেন দেবব্রত। কিন্তু প্রাপ্য সম্মান বা স্বীকৃতি না মেলায় অভিমান রয়েছে তুষারের। তিনি বললেন, “আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেও সেই মর্যাদা পেলাম না। শুভ্র জোয়ারদার ইন্ডিয়া টিমে চান্স পায়নি, তবু ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন বলে পরিচিত হচ্ছে। আমরাও তো ডিজেবেলড ক্রিকেটার এবং বিশ্বজয়ী দলের সদস্য। সেই স্বীকৃতি কেন মিলছে না?” অপরুপ একই সুরে বললেন, “যারা বিসিসিআই সমর্থনের ভারতীয় দলের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এল, তাঁদের কজন চেনে? তুষার আর শুভ্র কি ইংল্যান্ডে একসঙ্গে খেলেছে? শুভ্র কি ইংল্যান্ডে বিসিসিআই সমর্থনে গড়া ভারতীয় দলের ওয়ার্ল্ড সিরিজ জয়ী ক্যাপ্টেন? তা হলে বিক্রান্ত কেনি কে? এত জটিলতা তো সাধারণ মানুষ বুঝবেন না। চাই প্রত্যেকে যেন প্রাপ্য সম্মান পান। যেন পুরো ব্যাপারে স্বচ্ছতা থাকে। না হলে ব্যাপারটা যে কোনও খেলার পক্ষেই বিপজ্জনক।”
বাস্তব হল, ইংল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড সিরিজে ভারতীয় দল বিসিসিআইয়ের লোগো না পরলেও, ব্যক্তিগত স্পনসরশিপে গেলেও তা ছিল বোর্ড স্বীকৃত দল। জার্সিতে লেখা ছিল ইন্ডিয়া। সেই দলকে সমর্থন করেছিল বোর্ড। দল গড়ার প্রক্রিয়াতেও জড়িত ছিল বোর্ড। পরবর্তীকালে বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও সচিব জয় শাহ অধিনায়ক বিক্রান্ত কেনির হাতে ৬৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন পুরস্কার হিসেবে।
ইংল্য়ান্ডে ওয়ার্ল্ড সিরিজ জয়ী অধিনায়ক বিক্রান্ত কেনির হাতে চেক দিচ্ছেন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
সেই বিশ্বজয়ের পর এক বছর কেটে গেল। কিন্তু ভারতে ‘ডিজেবেলড ক্রিকেট’ আর এক পা-ও এগোল না। দাঁড়িয়ে রইল সেই বিন্দুতেই। কেন বিসিসিআই উদ্যোগ নিয়ে সব সংস্থাকে এক ছাতার তলায় আনতে পারছে না? কারসন ঘাউড়ি আশাবাদী। তিনি বললেন, “বিসিসিআই চেষ্টা করছে। মার্চেই বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ চেক দিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। অ্যাফিলিয়েট করার জন্য আমরা আবেদন করেছি। বোর্ডও সম্মতিও জানিয়েছে। যে ভাবে মহিলাদের ক্রিকেট বোর্ড চালায়, সেই ভাবেই আমাদের সংস্থাও দেখাশোনো করবে বোর্ড। আর সেটা খুব তাড়াতাড়িই ঘটবে। তার পরই আমরা নিশ্চিত ভাবে বিসিসিআই-এর লোগো ব্যবহার করব।” অপরূপও তেমনই চাইছেন। তাঁর মতে, “আমি চাই বিসিসিআই যে দলকে সাপোর্ট করেছে, সেই টিমটাকে ধরেই যেন এগিয়ে চলা হয়। সবাই যেন সেই দলকে গুরুত্ব দেয়। তেমন পদক্ষেপই করা হোক।”
কিন্তু, সব সংস্থাগুলো কি বোর্ডের অধীনে এক ছাতার তলায় আসতে রাজি হবে? ঘাউড়ি বললেন, “আমরা ‘অল ইন্ডিয়া ফিজিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপড অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া’ গড়েছি। সমস্ত আলাদা ইউনিটগুলো আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এ বার থেকে এই সংস্থার নামেই সব প্রতিযোগিতায় খেলা হবে। এটার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির জন্য আটকে আছে সমস্ত কিছু। না হলে আমরা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সব সেরে ফেলেছি। মুম্বই, পুণে, কলকাতা, হুবলি, বেঙ্গালুরু সর্বত্র মাঠ তৈরি আছে আমাদের। আমরা চাই রঞ্জি ট্রফির আদলে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে খেলা হোক ২০ ওভার ও ৫০ ওভারের ফরম্যাটে।”
কারসন ঘাউড়ি যত আশাবাদীই হন না কেন, পরিস্থিতি এতটা সহজ-সরল নয়। ‘দিব্যাঙ্গ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড অব ইন্ডিয়া’-র কর্ণধার হারুন রশিদ বললেন, “আমরা যে একজোট হওয়ার চেষ্টা করিনি, তা কিন্তু নয়। গত বছর ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট সিরিজের সময় আমরা মিলেও ছিলাম। কিন্তু, তাতে দেখলাম মুম্বইয়ের সংস্থা বড্ড দাদাগিরি করছে। আর সেই ভুল নয়। ওদের হাত ছেড়ে দিয়েছি। আর আমরা তো এখন সংস্থা নই, বোর্ড। আমরা বিসিসিআই-এর অ্যাসোসিয়েটস হয়ে কাজ করতে চাই। সেই দাবি নিয়ে আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছি। বিসিসিআই আমাদের সেই ভাবে ব্যবহার করতে পারে। আর আমরাও তখন বিসিসিআই যা বলবে তা মনে চলব। বাকিরা বরং চাইলে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।” কিন্তু কেন আপনাদের সঙ্গে বাকিরা যুক্ত হবে? হারুন রশিদের দাবি, “আমরাই এই ক্রিকেট চালিয়ে আসছি দীর্ঘ দিন ধরে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছি আমরা। দেখুন, সাত প্রকারের খেলা হয়। হুইলচেয়ার ক্রিকেট, ব্লাইন্ড ক্রিকেট ইত্যাদি। এক বছরে আমরা জাতীয়-আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ২৫টার মতো টুর্নামেন্ট করি। বিসিসিআই কি এক বছরে এতগুলো করতে পারবে? আমরা বোর্ডকে ৫০-৬০টার মতো চিঠি দিয়েছি। কিন্তু একটারও জবাব আসেনি। এর পরে বিসিসিআই দিব্যাঙ্গ ক্রিকেটের জন্য কিছু করবে, এমন আশা কি করা যায়? আমরা এই কারণেই সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছি।”
আরও পড়ুন: রেকর্ড গড়ে এশিয়াডে সোনা জেতাও যথেষ্ট নয়, অর্জুন থেকে বঞ্চিতই থাকলেন দুই বাঙালি ‘তাসুড়ে’
কিন্তু এখন তো চারটি দল খেলছে ভারতের নামে। এটা কি উচিত? হারুণের যুক্তি, “বাকিরা আমাদের নকল করে ইন্ডিয়া টিম বানাচ্ছে। আমাদের বোর্ড ৩১টা আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলেছে। তিন বার এশিয়া কাপ জিতেছে, এক বার রানার আপ হয়েছে। এখনও পর্যন্ত আমরা ৯৬টি ম্যাচ খেলেছি। বাকি তিন দল মিলিয়েও এতগুলো ম্যাচ খেলেনি। বিশাল বড় গ্যাপ আমাদের সঙ্গে। সবাই আমাদের দলে সুযোগ পায় না, ওদের হয়ে খেলে। তাতে অসুবিধা নেই। আমি কাউকে খারাপ বলছি না। কারও বিরুদ্ধেও নই। আমরা নিজেদের কাজ করছি। আর নীতি আয়োগের রেজিস্ট্রেশন রয়েছে আমাদের। ২০১৬ সালে সরকার বলেছিল সেই সংস্থাই স্বীকৃতি পাবে যাদের নীতি আয়োগের মান্যতা থাকবে। গর্বের সঙ্গে বলছি, নীতি আয়োগে ভারতের সবচেয়ে বড় সংস্থা আমাদের বোর্ড। আমাদের ২৭ সদস্য ওখানে নথিভুক্ত। আর একটা কথা বলে রাখি। বাকি তিন সংস্থার সংবিধানই নেই ডিজেবেলড ক্রিকেট চালানোর জন্য। ওয়াদেকরের সংস্থার তো মুম্বইয়ের টিমও চালানোর ক্ষমতা নেই, ভারত তো দূরের বিষয়! দিল্লির রবি চৌহানজির সংস্থারও তা নেই। লখনউয়ের সিদ্দিকি সাহেবের সংস্থার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। আমাদের দিব্যাঙ্গ ক্রিকেট চালানোর আইনি অধিকার রয়েছে। আর সেই অধিকার ভারত সরকারই আমাদের দিয়েছে। এই অধিকার যখন আমাদের কাছে আছে, তখন তা ছাড়ব কেন? অন্য সংস্থাগুলো যদি আন্তরিক ভাবে দিব্যাঙ্গ ক্রিকেটের সেবা করতে চায়, তবে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।”
স্বচ্ছতার অভাব। অভিযোগ। পাল্টা অভিযোগ। আইনি লড়াই। সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন। ভারতে ‘ডিজেবেলড ক্রিকেট’ যেন দুর্বোধ্য ধাঁধার মতোই!
আইপিএলের ব্যস্ততা, করোনার থাবা এড়িয়ে বোর্ড কবে ‘ডিজেবেলড ক্রিকেট’ নিয়ে সময় দেবে, তা এখনও ধোঁয়াশায় ভরা। কিন্তু, বাংলায় তেমনই একটা উদ্যোগ ব্যক্তিগত ভাবে নিয়েছেন সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া। এখানেও তিনটি সংস্থা বাংলার নামে খেলে। সবাইকে একসঙ্গে মিলে দল গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাঁর তরফে। সে ক্ষেত্রে সিএবি-র দল হিসেবে তা পরিচিত হবে। অভিষেকের ইচ্ছা হরিয়ানা বা অন্য কোনও রাজ্যের ক্রিকেট সংস্থা স্বীকৃত দলের সঙ্গে বাংলার এই দলের ম্যাচ খেলানোর। তিন জনের একটি কমিটিও গড়েছেন তিনি। ব্যক্তিগত ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন আর্থিক দুর্দশাগ্রস্ত পাঁচ ক্রিকেটার বিজু দাস, মোলিন দাস, রজত বিশ্বাস, বিকাশ কুমার, শান্তনু সরকারকে। সাদার্ন অ্যাভেনিউতে কেএমডিএ-র দেওয়া জমির ভাড়া এক বছরের জন্য নিজের পকেট থেকে দিয়েছেন তিনি। ‘ডিজেবেলড’ ক্রিকেটারদের সবাই যেন তা ব্যবহার করতে পারেন, তেমন নির্দেশও দিয়েছেন। কিন্তু জট থাকছেই।
অভিষেক বললেন, “আমরা অন্য কারও ব্যানারকে প্রমোট করতে পারব না। এই তিন সংস্থা যদি আগ্রহ দেখায় তবে আমরাই দল গড়ে তা সিএবি-র ব্যানারে খেলাতে পারি। তার জন্য হরিয়ানার অনিরুদ্ধ চৌধরির সঙ্গে কথাও বলেছি। করোনা না হলে হয়তো খেলা হয়েও যেত। আমি চাই প্রথম অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে সিএবি খেলুক অন্য কারও বিরুদ্ধে। এটা অন্য রাজ্য সংস্থাকেও করতে হবে। না হলে শুধু আমরা এই সংস্থাগুলোকে একজোট করলে চলবে না। বিরুদ্ধে খেলার জন্য তো অন্য রাজ্যকেও লাগবে।” অর্থাৎ, সদিচ্ছা থাকলেই যে সমাধান হাতের মুঠোয়, তা কিন্তু নয়। সমাধান হবে সব রাজ্য ও সংস্থা এগিয়ে এলে।
বাংলায় তিন সংস্থা, তিনটিই খেলে বাংলার নামে। দেশ জুড়ে চার সংস্থাই করে দেশের প্রতিনিধিত্ব। ‘ডিজেবেলড ক্রিকেট’ যেন ভুলভুলাইয়ার মতোই হেঁয়ালিতে ভরা!