ক্রিকেট কেরিয়ার শুরু করেছিলেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে। কিন্তু দলের প্রয়োজনে এঁদের প্রত্যেককেই উপরের দিকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে। একেবারে ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে। মিডল অর্ডারে তেমন সাফল্য না পেলেও ওপেনার হিসেবে কিন্তু মাঠ দাপিয়েছেন এই সব ক্রিকেটাররা। সেই তালিকার নবতম সংযোজন রোহিত শর্মা। আর কারা রয়েছেন এই তালিকায় দেখে নেওয়া যাক।
রোহিত শর্মা: টেস্টে ওপেন করতে এসেই একবারে বাজিমাত করলেন রোহিত শর্মা। এত দিন টেস্টে মিডল অর্ডারে খেললেও বিশাখাপত্তনমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওপেনার হিসেবে এই প্রথম আত্মপ্রকাশ। আর নেমেই সেঞ্চুরি হাঁকালেন। ছবি: পিটিআই।
ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে ওপেনার হিসেবে যে রোহিতকে গোটা দেশ চেনে, টেস্টে ওপেনার হিসেবে সেই রোহিতকেই যেন নতুন ভাবে আবিষ্কার করল ক্রিকেট বিশ্ব। মিডল অর্ডারে যে সাফল্য অধরা ছিল তাঁর, ওপেনার হিসেবে সেটাই করে দেখালেন রোহিত। ছবি: পিটিআই।
বীরেন্দ্র সহবাগ: ঘরোয়া ক্রিকেটের পুরোটাই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও মিডল অর্ডারে শুরু করেছিলেন। কিন্তু সহবাগের ব্যাট থেকে তেমন রান আসছিল না। সৌরভ তখন জাতীয় দলের অধিনায়ক। ভারতের টপ অর্ডারও তখন বেশ নড়বড়ে। ভিড় মিডল অর্ডারে।
সৌরভ সহবাগকে তুলে নিয়ে এলেন ওপেনার হিসেবে। তার পর একের পর এক রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে তাঁর ব্যাটে। ওপেনার হিসেবে ১৭০টি ইনিংস খেলে ৮২০৭ রান করেছেন তিনি। ব্যাটিং গড় ৫০.০৪। ২০০৪-এ মুলতানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টে তাঁর ট্রিপল সেঞ্চুরি আজও নজির হিসেবে রয়েছে।
সাইমন কাটিচ: ২০০১-এ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে হেডিংলে-তে টেস্টে আত্মপ্রকাশ করেন। কিন্তু তেমন একটা সাফল্য না পাওয়ায় দল থেকে বাদ পড়তে হয়। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য ফের জাতীয় দলে ডাক পান।
ক্যারিবিয়নদের বিরুদ্ধে ফিল জ্যাকস-এর সঙ্গে ওপেন করেন। এক নতুন কাটিচকে আবিষ্কার করে অস্ট্রেলিয়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২০০৮-এ ১৫৭ রান তাঁর কেরিয়ারের সেরা।
রবি শাস্ত্রী: টেল এন্ডারদের কাছে ৫০ রান করাটাই বিশাল ব্যাপার। গ্লেন ম্যাকগ্রাকে এই ৫০-এর জন্য ১০২টি টেস্ট খেলতে হয়েছিল। রবি শাস্ত্রী কিন্তু সেই তালিকারই এক জন। টেস্ট কেরিয়ার শুরু করেছিলেন ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে। তাঁর ব্যাটিং অর্ডারে বার বারই রদবদল করা হয়। কিন্তু এক এক করে যত আপার অর্ডারে তুলে আনা হয়েছিল, ততই তাঁর ব্যাটিংয়ের স্ফূরণ ঘটেছিল।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২০৬ রান তাঁর কেরিয়ারের সেরা। ওপেনার হিসেবে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৪৪.০৪, যেখানে অন্য জায়গায় তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৩১.৭৩।
উইলফ্রেড রোডস: লোয়ার অর্ডার লেফট আর্ম স্পিনার হিসেবেই কেরিয়ার শুরু করেন এই ব্রিটিশ ক্রিকেটার। ইংল্যান্ডের হয়ে ১৮৯৯ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত ৫৮টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। বোলার হিসেবে কেরিয়ার শুরু করলেও পরে ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে কাজে লাগানো হয়ে তাঁকে।
দীর্ঘ ৩০ বছরের কেরিয়ারে বার বার তাঁর ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করা হয়েছিল। কিন্তু ওপেনার হিসেবেই সাফল্যে পেয়েছেন বেশি। ১৯০৪ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওপেনার হিসেবে খেলা শুরু করেন। ওপেনার হিসেবে ৯টি হাফসেঞ্চুরি এবং ২টি সেঞ্চুরি রয়েছে তাঁর।
সনত্ জয়সূর্য: অলরাউন্ডার হিসেবে কেরিয়ার শুরু করলেও এক জন ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে বিধ্বংসী ছিলেন জয়সূর্য। ১৯৯৩ সালে হিরো কাপে প্রথম ওপেন করেন জয়সূর্য। তখনই নতুন এক জয়সূর্যকে আবিষ্কার করে ক্রিকেট বিশ্ব। ভারত এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ ভাল রান করেন তিনি। তখনও ওপেনার হিসেবে টেস্টে জয়সূর্যর স্থান পাকা ছিল না।
কিন্তু পর পর ভাল পারফরম্যান্সের জন্য অধিনায়ক অর্জুন রণতুঙ্গা তাঁকে টেস্টেও ওপেনার হিসেবে তুলে আনেন। ১৯৯৭-এ ভারতের বিরুদ্ধে টেস্টে শ্রীলঙ্কার ৯৫২ রানের মধ্যে ৩৪০ রানই ছিল জয়সূর্যর। ওপেনার হিসেবে টেস্টে ১৫২টি ইনিংসে তাঁর ব্যাটিং গড় ৪১.৪৮।
তিলকরত্নে দিলশান: দশ বছরের টেস্ট কেরিয়ারের বেশির ভাগ সময়টাই মিডল অর্ডারে খেলেছেন দিলশান। কিন্তু ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করতে পারছিলেন না তিনি। কেরিয়ারের ৫৬তম টেস্টে গলে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওপেন করেই প্রথম ইনিংসে ৭২ বলে ৯২ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন।
ওপেনার হিসেবে আরও ৬টি সেঞ্চুরি করেন এক বছরের মধ্যে। মোট ২৯টি টেস্টে ওপেন করেছেন দিলশান। ব্যাটিং গড় ৪২.৫৪। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৩ রান তাঁর কেরিয়ারের সেরা।