বিশ্বকাপ খেলার লক্ষ্য নিয়েই তাঁরা খেলে চলেছিলেন দেশের হয়ে। বিশ্বকাপ মিটতেই একের পর এক অবসরের ঘোষণা। ক্রিকেট হারাচ্ছে তাঁর একের পর এক মহারথিকে। কারও অস্ত্র ছিল বিষাক্ত ইয়র্কার, কেউ বা ব্যাট হাতে ছিলেন দেশের অন্যতম ভরসা। দেখে নেওয়া যাক সেই সব ক্রিকেটারদের।
হাসিম আমলা- গতকাল, বৃহস্পতিবারই তিনি ঘোষণা করেছেন তার অবসরের কথা। দক্ষিণ আফ্রিকার এই ওপেনার শেষ দিকে তাঁর সেই চওড়া ব্যাট খুঁজে পাচ্ছিলেন না, যার ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে থাকত দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইন আপ।
টেস্টে রান ৯২৮২, একদিনের ক্রিকেটে ৮১১৩, দুই ফরম্যাটেই গড় ৫০ ছুঁই ছুঁই। কাকতালীয় ভাবে টেস্ট, একদিন ও টি২০-তে তাঁর শেষ ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। তাঁর অবসরে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনিং-এ ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছে তা খুব দ্রুত পূরণ করা প্রয়োজন।
ডেল স্টেইন- এমন এক পেস বোলার, যাঁর রক্ত চক্ষু ব্যাটসম্যানের শিরদাঁড়া দিয়ে হিম স্রোত নামিয়ে দিত। এক সময় তিনি ছিলেন বিশ্বের সেরা পেস বোলার। কিন্তু চোট বার বার তাঁর ক্রিকেট জীবনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বয়স ৩৬ পেড়িয়েছে মাস খানেক আগে। তাঁর ১৫ বছরের ক্রিকেট কেরিয়ারে সংগ্রহ করেছেন টেস্টে ৪৩৯ উইকেট, এখনও অবধি ১৯৬ উইকেট পেয়েছেন একদিনের ম্যাচে।টেস্ট থেকে অবসর নিয়ে তিনি এখন একদিনের ও টি২০ ম্যাচে মনোনিবেশ করতে চান।
লাসিথ মালিঙ্গা- শ্রীলঙ্কান এই পেসার বিশ্বকাপ শেষে, নিজের দেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচ খেলে তুলে রাখলেন ব্যাট-বল। তাঁর বিষাক্ত ইয়র্কার যখন পায়ের সামনে ছোবল মারত, তখন অনেক বড় ব্যাটসম্যানেরই ঘাম ছুটে যেত।
বিশ্বে তিনিই একমাত্র বোলার, যাঁর বিশ্বকাপে দু’টি হ্যাটট্রিক আছে। শুধু তাই নয়, সারা বিশ্বে আর কোনও বোলারের ওডিআই-তে তিনটি হ্যাটট্রিকের রেকর্ড নেই। টি২০-তে ১০০ উইকেট নেওয়ার থেকে মাত্র তিন উইকেট আগে তিনি তাঁর ক্রিকেট জীবন শেষ করলেন।
শোয়েব মালিক- পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক এ বারের বিশ্বকাপে খেলেছেন মাত্র তিনটি ম্যাচ। রান করেছেন আট। ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে ফিরে যাওয়ায় আরও প্রশ্ন ওঠে তাঁকে নিয়ে। বিশ্বকাপের পরে একদিনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নেন তিনি। এখন থেকে শুধু টি২০ খেলবেন বলে জানিয়েছেন।
পাক মিডল অর্ডারে একসময়ের বড় ভরসা ছিলেন। তাঁর একদিনের ক্রিকেটে সংগ্রহ ৭৫৩৪ রান ও ১৫৮ উইকেট। শেষ দিকে নিয়মিত জায়গাও পাচ্ছিলেন না দলে। হয়তো সঠিক সময়ই সরে দাঁড়ালেন তিনি।
ইমরান তাহির- এ বারের বিশ্বকাপে সব থেকে বয়স্ক ক্রিকেটার ছিলেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান স্পিনার। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। পাক বংশোদ্ভুত এই স্পিনারের ভেল্কিতে ছিটকে গিয়েছে অনেকেরই উইকেট। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকাকে সেমিফাইনালে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন।
চল্লিশ পেরনো এই ক্রিকেটার ১০৭টি একদিনের ম্যাচে নিয়েছেন ১৭৩টি উইকেট। দেরিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পেলেও তিনিই দক্ষিণ আফ্রিকার একদিনের ক্রিকেটে দ্রুততম ১০০ উইকেট নেওয়া বোলার।
জ্যঁ পল দুমিনি- দক্ষিণ আফ্রিকার এই অলরাউন্ডারও বিশ্বকাপ খেলেই অবসর নিয়েছেন একদিনের ক্রিকেট থেকে। ২০০৭ সালে টেস্ট থেকে অবসর নিয়ে নেওয়া দুমিনি এখন শুধু টি-২০ খেলবেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে। বিশ্বকাপে চার ম্যাচে ৫৬ রান ও একটি উইকেট নিয়েছেন তিনি। এই পারফরমান্সের পরে একদিনের দলে নিয়মিত পাওয়াও কঠিন ছিল তাঁর পক্ষে।
বল হাতে পার্টনারশিপ ভাঙা এবং ব্যাট হাতে দ্রুত রান তোলার জন্য তিনি ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা অস্ত্র। বিশ্বকাপ শেষে দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার দলে তৈরি হচ্ছে বিরাট বড় ফাঁকা জায়গা। যা দ্রুত পূরণ করার চেষ্টা করতে হবে তাঁদের।
হামিদ হাসান- আফগানিস্তানের এই পেস বোলার বিশ্বকাপের পর একদিনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নিলেন। এই ফরম্যাটে তাঁর সংগ্রহ ৫৯টি উইকেট। তবে এই বিশ্বকাপে পেয়েছিলেন মাত্র দু’টি উইকেট। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে চোট পেয়ে বেড়িয়ে যান তিনি। আর ফিরতে পারলেন না একদিনের ক্রিকেটে।
আফগানিস্তানের এই দ্রুত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উঠে আসার পিছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। চোট দিয়ে আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শেষও তাঁর জীবনের এক হতাশাজনক ঘটনা হয়ে রইল।