কেন অধিনায়কত্ব হারালেন কোহলী ফাইল চিত্র।
এক দিনের ক্রিকেটে ৯৫টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ৬৫টিতে জয়, ২৭টি হার। বিরাট কোহলীর জয়ের শতকরা হার ৭০.৪৩। ভারত এখনও পর্যন্ত যে দু’ জনের অধিনায়কত্বে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, সেই কপিল দেব এবং মহেন্দ্র সিংহ ধোনির থেকে জয়ের শতাংশের বিচারে বেশি। ভারতকে যাঁরা অন্তত ১০টি এক দিনের ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের সকলের থেকেও কোহলীর ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা বেশি।
এক দিনের ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে ব্যাটিং গড় ৭২.৬৫। যাঁরা অন্তত ৭৫টি এক দিনের ম্যাচে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সেরা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডিভিলিয়ার্স অনেক পিছনে— ৬৩.৯৪।
অধিনায়ক হিসেবে এক দিনের ক্রিকেটে শতরান ২১। সমসাময়িকদের মধ্যে ধারেকাছে কেউ নেই। ২২টি শতরান করে সামনে শুধু অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং।
দ্বিপাক্ষিক এক দিনের সিরিজে কোহলীর অধিনায়কত্বে ভারত ১৯টির মধ্যে ১৫টি জিতেছে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ও রয়েছে।
আইসিসি-র কোনও প্রতিযোগিতায় দেশকে চ্যাম্পিয়ন করতে না পারলেও কোহলীর নেতৃত্বে ভারত ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল এবং ২০১৯ সালে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে।
কোহলীর অধিনায়কত্ব হারানোর পিছনে কারণ কী ফাইল চিত্র
এই ঈর্ষণীয় পরিসংখ্যান থাকা সত্ত্বেও এক দিনের ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব থেকে সরতে হল কোহলীকে। শুধু সরে যাওয়া নয়, যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাঁকে নির্মম ভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও এর কোনও আনুষ্ঠানিক সমর্থন কোনও সূত্রে স্বীকার করা হয়নি। তবে এরই পাশাপাশি শোনা যাচ্ছে, কোহলীকে না কি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দল নির্বাচনের আগে এক দিনের ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, জয় শাহরা কোহলীর একটা ‘সম্মানজনক বিদায়’ চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। ফলে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এমনিতেই এখনকার বোর্ডকর্তাদের সঙ্গে কোহলীর সম্পর্ক খুব একটা সুখের নয়। অনেক দিন থেকেই শোনা যাচ্ছিল, এক দিনের ক্রিকেটের অধিনায়কত্বও আর কোহলীর কাছে থাকবে না। বিশেষত, কোহলী নিজে আইপিএল-এ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের অধিনায়কত্ব এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঠিক আগে আন্তর্জাতিক অধিনায়কত্ব ছাড়ার কথা ঘোষণা করার পর সেই সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়েছিল। স্রেফ সময়ের অপেক্ষা ছিল। কোহলীর ভাবমূর্তির কথা ভেবে বিসিসিআই চেয়েছিল, তিনি নিজে থেকেই সরে যান। কিন্তু কোহলী কোনও উচ্চবাচ্য করেননি। এমনিতেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দল নির্বাচন পিছিয়ে গিয়েছিল। হাতে বিশেষ সময়ও ছিল না। তাই বোর্ড আর সময় নষ্ট না করে রোহিতকে টি-টোয়েন্টির পরে একদিনের ক্রিকেটেও অধিনায়ক করার কথা ঘোষণা করে দিয়েছে।
এখন প্রশ্ন, কোহলীকে এত তাড়াতাড়ি সরতে হল কেন? বোর্ড কর্তাদের পছন্দের তালিকা থেকে তিনি বাদ পড়লেন কেন? এর পিছনে কি রয়েছে ভারতীয় দলের সাজঘরের পছন্দ-অপছন্দ?
ঠিক এক বছর আগে অস্ট্রেলিয়া সফরে অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্টে হারতে হয়েছিল ভারতকে। পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে তার পর দেশে ফিরে এসেছিলেন কোহলী। বাকি তিনটি টেস্টে অজিঙ্ক রহাণে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে সিরিজ জিতয়েছিলেন। শুধু অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে জেতাই নয়, সেই টেস্ট সিরিজ জয়ের পিছনে আরও বড় তাৎপর্য ছিল। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো সিনিয়র থেকে শুরু করে ওয়াশিংটন সুন্দরের মতো জুনিয়ররা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন— সাজঘরে কোহলী না থাকার একটা ‘ইতিবাচক’ প্রভাব পড়েছে। বুঝতে অসুবিধা হয়নি, দলের সকলেই নেতা হিসেবে কোহলীকে চাইছেন না। ভারতীয় ক্রিকেট মহলের একাংশের দাবি, ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকে বোর্ডকে ঘুরিয়েফিরিয়ে এই বার্তাই বার বার দেওয়া হয়েছে যে, নতুন কে দায়িত্ব নেবেন, সেটা পরে ঠিক করা যাবে। আপাতত কোহলীকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর রাস্তা পরিষ্কার করা হোক।
সম্ভবত তারই ফল টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব থেকে কোহলীর নিজে সরে যাওয়া এবং এক দিনের দলের অধিনায়কত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া। তবে এই তত্ত্বের বা খবরেরও কোনও আনুষ্ঠানিক সমর্থন মেলেনি।
সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভরাডুবির পিছনে অনেকে দলের অন্দরের ‘প্রো-কোহলী, নো-কোহলী’-র ঠান্ডা লড়াইকে দেখছেন। আগামী বছরের শেষ দিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৩ সালে এক দিনের ক্রিকেটের বিশ্বকাপ। ভারতীয় ক্রিকেটের হালচাল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একাংশ মনে করছে, স্বাভাবিক ভাবেই বোর্ড চাইছে, দুই বিশ্বকাপের আগে দলের অন্দরে যাবতীয় চোরাস্রোত যেন বন্ধ হয়ে যায়। তাই এখন থেকেই কড়া পদক্ষেপ নিয়ে রাখলেন সৌরভ-জয়রা।