Rohit Sharma

অ্যাডিলেডে ব্যর্থ! তা-ও ব্রিসবেনে কেন মিডল অর্ডারেই ব্যাট করা উচিত রোহিতের?

অ্যাডিলেডে ওপেনিং ছেড়ে মিডল অর্ডারে নেমেছিলেন রোহিত শর্মা। ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তার পরেও ব্রিসবেনে তৃতীয় টেস্টে মিডল অর্ডারেই নামা উচিত ভারত অধিনায়কের।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৫৪
Share:

রোহিত শর্মা। —ফাইল চিত্র।

ব্রিসবেনে কি ভারতের ব্যাটিং অর্ডারে বদল হবে? অ্যাডিলেডে ওপেনিং ছেড়ে মিডল অর্ডারে নেমেছিলেন রোহিত শর্মা। ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। দুই ইনিংসে করেছেন মাত্র ৯ রান। তৃতীয় টেস্টে তাঁকে ওপেনিংয়ে ফেরার পরামর্শ দিয়েছেন সুনীল গাওস্কর ও রবি শাস্ত্রী। তার পরেও ব্রিসবেনে মিডল অর্ডারেই নামা উচিত ভারত অধিনায়কের। তার নেপথ্য কারণ কী?

Advertisement

সেনা দেশে রোহিতের রেকর্ড

সেনা (দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউ জ়িল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া) দেশে রোহিত সব মিলিয়ে ৪৬টি ইনিংস খেলেছেন। তার মধ্যে ২০টি ইনিংসে ওপেনার হিসাবে খেলেছেন তিনি। তাঁর গড় ৩০-এর কম। মিডল অর্ডারে যে ২৬টি ইনিংস তিনি খেলেছেন সেখানে ৩৭.৮ গড়ে রান করেছেন। অর্থাৎ, এই চারটি দেশে নতুন বলের বদলে একটু পুরনো বলেই খেলতে বেশি সুবিধা হয় রোহিতের।

Advertisement

শুধু অস্ট্রেলিয়ার পরিসংখ্যান দেখলেও সেটা স্পষ্ট। অস্ট্রেলিয়ায় মোট আটটি টেস্ট খেলেছেন রোহিত। করেছেন ৪১৭ রান। ২৭.৮ গড়ে রান করেছেন ভারত অধিনায়ক। তিনটি অর্ধশতরান করেছেন তিনি। এই আটটি টেস্টের মধ্যে মাত্র দু’টি টেস্টে ওপেন করেছেন রোহিত। করেছেন ১২৯ রান। চারটি ইনিংসে রোহিতের গড় ৩২.২৫। একটি অর্ধশতরান করেছেন ওপেনিংয়ে। অন্য দিকে মিডল অর্ডারে ছ’টি টেস্টে ২৮৮ রান করেছেন তিনি। কিন্তু সেখানে ১০টি ইনিংস খেলেছেন রোহিত। তার মধ্যে শেষ দু’টি ইনিংসে মাত্র ৯ রান তাঁর। বাকি আটটি ইনিংসে ৩৪.৮৮ গড়ে রান করেছেন তিনি। রয়েছে দু’টি অর্ধশতরান। ২০২০-২১ সিরিজ়েই একমাত্র ওপেন করেছেন রোহিত। তার আগে ২০১৪-১৫ ও ২০১৮-১৯ সফরে মিডল অর্ডারে খেলেছেন তিনি। সেই দু’টি সিরিজ়ে রানও পেয়েছেন রোহিত।

রোহিতের পায়ের নড়াচড়া কম

রোহিতের ব্যাটিং মূলত হ্যান্ড-আই কো-অর্ডিনেশন, অর্থাৎ চোখ ও ব্যাটের বোঝাপড়ার উপর নির্ভর করে। তাঁর পায়ের নড়াচড়া কম। অর্থাৎ, বলের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন না তিনি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শট খেলেন। সেই কারণেই শর্ট পিচ বলে তিনি এত ভাল খেলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় নতুন বলে মিচেল স্টার্ক, জশ হেজ়লউডেরা মূলত ফুল লেংথে বল করেন। সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলার চেষ্টা করলে খোঁচা মারা, এলবিডব্লিউ বা ব্যাট-প্যাডের মাঝখান দিয়ে বোল্ড হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। ভারতের মাটিতে সুইং কম হওয়ায় সামলে নেওয়া যায়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় তা সম্ভব নয়।

উল্টে বল একটু পুরনো হয়ে গেলে সুইং কমে যায়। ফলে তখন বোলারেরা শর্ট লেংথে বল করতে বেশি শুরু করেন। তাতে রোহিতের রান করার সম্ভাবনা বাড়বে। দিন-রাতের টেস্টে পরিস্থিতি আলাদা। সেখানে আলোর নীচে বল বেশি সুইং করে। ফলে মিডল অর্ডারে খেলা আরও বেশি কঠিন। ব্রিসবেনে সেই সমস্যায় পড়তে হবে না রোহিতকে। থিতু হওয়ার সময় পাবেন তিনি। দ্বিতীয় বা তৃতীয় সেশনে ব্যাট করতে নামলে বোলারেরা কিছুটা ক্লান্তও থাকে। তারও সুবিধা নিতে পারেন রোহিত।

বয়সের ধাক্কায় কমেছে রিফ্লেক্স

আগে রোহিত ক্রিজ়ের মধ্যে যত দ্রুত নড়াচড়া করতে পারতেন সেটা এখন কমেছে। ভারতের তুলনায় অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বল অনেক দ্রুত আসে। তাই খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে হয় ব্যাটারদের। নতুন বলের তুলনায় পুরনো বলে গতি কমে। ফলে কিছুটা হলেও বেশি সময় পাবেন রোহিত। পাশাপাশি স্পিনারদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক শট খেলারও সুযোগ থাকবে। দীর্ঘ দিন ব্যাটে রান না পাওয়ায় মানসিক ভাবেও চাপে রয়েছেন রোহিত। এই পরিস্থিতি নতুন বলে স্টার্ক, কামিন্সদের সামনে তাঁর না-নামাই ভাল। টপ অর্ডার রান করলে আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাট করতে নামতে পারবেন রোহিত। আবার টপ অর্ডার রান না-পেলে তাঁদের ভুল দেখে শিক্ষা নেওয়ারও সুযোগ থাকবে তাঁর।

গাওস্কর, শাস্ত্রীর পরামর্শ

গত বছর থেকে নিজের খেলার ধরন বদলেছেন রোহিত। এখন অনেক বেশি আক্রমণাত্মক খেলেন তিনি। তার জন্য আউট হয়ে গেলেও খেলার ধরন বদলান না। কিন্তু অ্যাডিলেডে রোহিতের সেই মানসিকতা দেখা যায়নি। দেখে মনে হচ্ছিল, কিছুটা ভয়ে ভয়ে খেলছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে গতি ও বাউন্স থাকে। নতুন বলে শট খেলতে রোহিতের সুবিধা হতে পারে বলে মনে করেন শাস্ত্রী। তিনি বলেন, “রোহিতের শরীরী ভাষা দেখে মনে হচ্ছিল, একটু ভয়ে ভয়ে ব্যাট করছে। আমি চাই ও আগ্রাসী ক্রিকেট খেলুক। সেটা তখনই সম্ভব যখন রোহিত ওপেন করবে। আমি চাই, ব্রিসবেনে ও ওপেন করুক।”

পার্‌থে ওপেন করতে নেমে দুই ইনিংসে ২৬ ও ৭৭ রান করেছিলেন লোকেশ রাহুল। কিন্তু অ্যাডিলেডে রান পাননি তিনি। সেই কারণেই রোহিতের তাঁর পুরনো জায়গায় ফিরে যাওয়া উচিত বলে মত গাওস্করের। ভারতের প্রাক্তন ওপেনার বলেন, “রোহিতের উচিত ওর নিজের জায়গায় ফিরে যাওয়া। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে কেন রাহুল ওপেন করেছিল। কারণ, পার্‌থে রোহিত ছিল না। ওখানে দ্বিতীয় ইনিংসে যশস্বী জয়সওয়ালের সঙ্গে ২০০ রানের জুটি গড়ায় অ্যাডিলেডেও রাহুল ওপেন করেছিল। কিন্তু এ বার ও রান পায়নি। তাই আমার মনে হয় পরের টেস্টে রোহিতের ওপেন করা উচিত। রাহুল মিডল অর্ডারে ফিরে যাক। যদি শুরুতে রোহিত দ্রুত কিছু রান পেয়ে যায় তা হলে বড় রান করার ক্ষমতা ওর আছে। তার জন্য ওকে নতুন বল খেলতে হবে।”

অনুশীলনে ব্যাটিং অর্ডারের ইঙ্গিত

গাওস্কর, শাস্ত্রীরা রোহিতকে ওপেনিংয়ে ফিরতে বললেও অনুশীলনে অন্য ছবি দেখা গিয়েছে। সেখানে ওপেন করতে নেমেছেন যশস্বী জয়সওয়াল ও রাহুল। পাঁচ নম্বরে নেমেছেন রোহিত। অ্যাডিলেডে দিন-রাতের টেস্টের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে রোহিত মিডল অর্ডারে নেমেছিলেন। অনুশীলন থেকে বোঝা যাচ্ছে, ব্রিসবেনেও হয়তো মিডল অর্ডারেই খেলবেন ভারত অধিনায়ক। নতুন বলের তুলনায় কিছুটা পুরনো বলেই খেলতে চাইছেন ভারত অধিনায়ক। রোহিত ব্রিসবেনে মিডল অর্ডারে খেললে সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন। কারণ, সে ক্ষেত্রে রান পাওয়ার সম্ভাবনা তাঁর বাড়বে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement