প্যাট কামিন্স। —ফাইল চিত্র।
২০১৯ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হেরে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তাতে যদিও সেমিফাইনালে উঠতে অসুবিধা হয়নি। কিন্তু সেমিফাইনালে হারতে হয় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এ বারের বিশ্বকাপে প্রথমে ভারত এবং বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হেরে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯২ সালের পর এই প্রথম বার বিশ্বকাপে প্রথম দু’টি ম্যাচে হেরে গেল তারা। পাঁচ বারের বিশ্বকাপজয়ী দলের এমন অবস্থার কারণ কী?
বিশ্বকাপ খেলতে আসার আগে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানে পাঁচ ম্যাচের এক দিনের সিরিজ় খেলেছিলেন মিচেল মার্শেরা। কিন্তু সেই সিরিজ়ে ছিলেন না বিশ্বকাপে প্রথম একাদশে খেলা অনেক ক্রিকেটারই। সেই সিরিজ় ২-৩ ব্যবধানে হেরে যায় অস্ট্রেলিয়া। এর পর ভারতে এসে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিহীন ভারতীয় দলের বিরুদ্ধে ১-২ ব্যবধানে এক দিনের সিরিজ় হারে তারা। বিশ্বকাপের আগে যা অস্ট্রেলিয়ার আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা দিয়েছিল বলাই যায়।
ভারতের বিরুদ্ধে চেন্নাইয়ে স্পিন খেলতে ব্যর্থ হয়েছিলেন স্মিথ, লাবুশেনরা। ১৯৯ রানে শেষ হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ম্যাচ জিতে নেন বিরাটেরা। সেই ম্যাচে দেখা যায় অস্ট্রেলিয়া দলে স্পিনারের অভাব রয়েছে। অ্যাডাম জাম্পা প্রতিপক্ষের কাছে ত্রাস হয়ে উঠতে পারছেন না। বরং গুরুত্ব পাচ্ছেন অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ভারতের মাটিতে স্পিনারের অভাব থাকলে যে কোনও দলেরই সমস্যা হওয়ার কথা। শেন ওয়ার্নের দেশ ব্যতিক্রম নয়। বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “নেথন লায়নকে প্রয়োজন ছিল এই দলে। লাল বলের ক্রিকেটার বলে ওকে রেখে দেওয়া হলেও ভারতের মাটিতে বড় ভূমিকা নিতে পারত লায়ন। স্পিনারের অভাব রয়েছে অস্ট্রেলিয়া দলে।”
অস্ট্রেলিয়া দলে একটি সমস্যার জায়গা ফিল্ডিং। ছবি: পিটিআই।
এ বারের অস্ট্রেলিয়া দলে আরও একটি সমস্যার জায়গা ফিল্ডিং। ভারতের বিরুদ্ধে বিরাটের সহজ ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন মিচেল মার্শ। ১২ রানের মাথায় ব্যাট করছিলেন বিরাট। সেই সময় তিনি আউট হলে বিপদে পড়তে পারত ভারত। ২ রানে ৩ উইকেট চলে গিয়েছিল। সেখানে বিরাটের উইকেট গেলে ভারত হেরেও যেতে পারত। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সেই কামড়টাই দিতে পারল না। কম রানে শেষ হয়ে যাওয়ার পর ম্যাচটাই ছেড়ে দিল অস্ট্রেলিয়া। দুর্বল ফিল্ডিংয়ের নিদর্শন আরও প্রকট হয় দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। হাফ ডজন ক্যাচ ফেলে তারা। ম্যাচটাও ফেলে আসে সেখানে।
বোলিং, ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে চিন্তা থাকছে ব্যাটিং নিয়েও। ভারতের বিরুদ্ধে ১৯৯ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১৭৭ রানে শেষ হয়ে অস্ট্রেলিয়া। ওপেনার মার্শ এখনও পর্যন্ত রান পাননি। অন্য ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের দুই ম্যাচ মিলিয়ে সংগ্রহ ৫৪ রান। অস্ট্রেলিয়া দলের বড় ভরসা স্টিভ স্মিথ। কিন্তু তিনিও বড় রান করে দলকে ভরসা দিতে পারেননি। এ বারের বিশ্বকাপের দলে শেষ মুহূর্তে নেওয়া হয় মার্নাস লাবুশেনকে। বাদ দেওয়া হয়েছিল স্পিনার অ্যাশটন আগরকে। ভারতের মাটিতে খেলতে এসে স্পিনার বাদ দেওয়া কি ভুল সিদ্ধান্ত? সেই প্রশ্ন উঠছে। লাবুশেন এখনও পর্যন্ত দলের হয়ে সব থেকে বেশি রান করেছেন। দুই ম্যাচ মিলিয়ে তাঁর সংগ্রহ ৭৩ রান। প্রথম চার ব্যাটার রান না পাওয়ায় অল্প রানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। সম্বরণ বললেন, “ছন্দে নেই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারেরা। এক বার ফর্ম পেয়ে গেলেই অন্য রকম দল হয়ে যাবে। বিশ্বকাপ অনেক লম্বা প্রতিযোগিতা। এখনও সাতটা ম্যাচ বাকি। অস্ট্রেলিয়া ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে।”
বিশ্বকাপ খেলতে আসার আগে অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তুতি ঠিক হয়নি বলে মনে করছেন সে দেশের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন তিনি। সেই ক্লার্ক বলেন, “ভারতে এই বছরের শুরুতে টেস্ট খেলতে যে দলটা এসেছিল, সেই দলের প্রস্তুতি ঠিক ছিল না। সেই ধারা এখনও চলছে। এমনকি গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়ও আমাদের প্রস্তুতি ঠিক মতো হয়নি। ভারতে হারের পর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। তাতেই সব ঢাকা পড়ে যায়। নিজেদের ভুলগুলো আর দেখা হয়নি। বিশ্বকাপের আগে নিজেদের চূড়ান্ত ফর্ম প্রয়োজন ছিল। সেটা হয়নি। আমার তো মনে হয় এ বারের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো দলের বিরুদ্ধেও ভুগতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। স্পিন খেলতে পারছে না ওরা।”
বড় প্রশ্ন উঠছে নেতৃত্ব নিয়েও। প্যাট কামিন্স এ বারের বিশ্বকাপে ১৫.২ ওভার বল করে ১০৪ রান দিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেই দেন ৭১ রান। উইকেট পেয়েছেন একটি। অধিনায়ক সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। সেই প্রভাব কি দলের উপর পড়ছে? সম্বরণ বললেন, “কামিন্স খুব একটা ভাল অধিনায়ক নয়। গতানুগতিক চিন্তা ধারা ওর। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে সেটা অস্ট্রেলিয়ার একটা নেতিবাচক দিক।”
অন্য দুই পেসারের মধ্যে জস হেজ়লউড দু’ম্যাচ মিলিয়ে ১৮ ওভার বল করে ৯৮ রান দিয়ে নিয়েছেন মাত্র চারটি উইকেট। মিচেল স্টার্ক দু’ম্যাচে ১৭ ওভার বল করে ৮৪ রান দিয়ে তিনটি উইকেট নিয়েছেন। দলের প্রধান তিন পেসার বিপক্ষের উপর চাপ তৈরি করতে ব্যর্থ। ভারত ম্যাচে ঈশান কিশনেরা নিজেদের উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছিলেন। তার পরেও চাপে ফেলতে পারেননি কামিন্সেরা।
অস্ট্রেলিয়ার পরের ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। লখনউয়ে ১৬ অক্টোবর সেই ম্যাচ খেলবেন কামিন্সেরা। এই ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে অস্ট্রেলিয়া। শ্রীলঙ্কার বোলারেরা এখনও ছাপ ফেলতে পারেননি। ফর্মে ফেরার জন্য সেটাই হবে অস্ট্রেলিয়ার সেরা সুযোগ।